Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

'হারলে আমি, জিতলে গোটা বাংলাদেশ'

বাংলাদেশের প্রথম প্রতিবন্ধী সংসদ সদস্য প্রার্থী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:২০ PM
আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:৪৩ PM

bdmorning Image Preview
ছবিঃ বিডিমর্নিং


ইদ্রিস আলী। আসন্ন নির্বাচনে ঢাকা-১৯ আসনের সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী। তবে নতুনত্ব এই যে, তিনি এশিয়া মহাদেশের ষষ্ঠ ও বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম শারীরিক প্রতিবন্ধী; যে কিনা রাত পোহালেই ভোটের ময়দানের লড়াকু একজন প্রার্থী।

মাত্র ২৫ বছর বয়সী এই তরুণ স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে উন্নয়ন ও সচেতনতামূলক কাজে বিশেষ অবদানের জন্য এ বছরের নভেম্বরের দিকে এশিয়া ইন্সপাইরেশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ১০০ এর বেশি সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত এই তরুণের ইচ্ছে একটি রেস্টুরেন্ট করার যেখানে শতভাগ প্রতিবন্ধী দ্বারা চালিত হবে।

জীবনযুদ্ধে হার না মানা এই তরুণের জন্ম ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ সালে। মাগুরার শালিখা উপজেলার শরুশুনা গ্রামে বেড়ে উঠেন তিনি। জন্মগতভাবেই ক্লাব ফুট নামক পায়ের একটি প্রতিবন্ধকতার শিকার হোন তিনি। এই সমস্যার দরুণ পারিবারিক, সামাজিকভাবে নানানভাবে হেয় হয়েও সকল বাধা কাটিয়ে স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি শেষ করে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি হোন। ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়ে ইদ্রিস পাড়ি জমান ঢাকায়।

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধেও চমক দেখান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথে ভর্তির সুযোগ পেয়েও পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়তে ভর্তি হোন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও বিচার বিভাগে। চমকের বিষয় এই যে, প্রতিবন্ধী কোটা নিয়ে নয়, বরঞ্চ মেধা তালিকায় ২৪তম হয়েই ভর্তির সুযোগ পান তিনি। বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগরে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্টের অপেক্ষায় রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এই লড়াকু তরুণের জীবনে রয়েছে ১২৫টি স্বপ্ন। তার এই স্বপ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোথাও একটা পড়েছিলাম যে কেউ একজন বিশ্বে সর্বোচ্চ স্বপ্ন দেখেছেন ১২৪টি। তাই আমি ভাবলাম, আমি সর্বোচ্চ স্বপ্ন দেখবো; তাই আমার স্বপ্ন ১২৫টি।'

তার এই স্বপ্নের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য হল, এভারেস্ট জয়, বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেয়া, হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়া, সর্বনিম্ন ১০০টি দেশ ভ্রমণ, প্রতিবন্ধিদের জন্য উন্নয়নমূলক ট্রেনিং সেন্টার চালু করা ইত্যাদি।

স্বপ্নবাজ এই তরুণের ভিন্ন এক পরিচয় হলো ‘লেখক’। তরুণদের জাগরণে সাড়া পড়া বই 'আমিই চ্যাম্পিয়ন' বইয়ের লেখক তিনি। লেখাপড়ার পাশাপাশি একজন ক্রীড়া ব্যক্তিত্বও তিনি। বাংলাদেশের প্রথম প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের (সি.আর.পি) সাবেক অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

ক্রিকেটার হওয়া, বই প্রকাশ করা, দেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ, পাহাড় জয় ও সংসদ নির্বাচন করা সহ এ পর্যন্ত তার ১৪টি স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বলে জানান তিনি।

রাত পোহালেই আসন্ন সংসদ নির্বাচনের ভোটের লড়াই শুরু। হারজিতের দর কষাকষি নিয়ে ইদ্রিস আলী বলেন, ‘দেশের প্রথম কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে সংসদ সদস্য (এমপি) হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে এবার ভিন্ন কিছু করে দেশকে দেখাতে চাই। আমি হারলে আমি নিজে হারব, আমি জিতলে তরুণরাই জিতবে, গোটা বাংলাদেশ জিতবে।’

‘দেশের একটি বিরাট অংশ প্রতিবন্ধী। এই যে প্রতিবন্ধকতা; এর কোনো শেষ নেই। সামাজিক প্রতিবন্ধকতাতো রয়েছেই। আর লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, এই প্রতিবইন্ধকতার মূল সমস্যা হলো লোকলজ্জা। আমি নিজেও একসময় ঘগর থেকে বের হতে চাইতাম না। নিজেকে লুকিয়ে রাখতাম। কিন্তু সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমি এ পর্যন্ত এসেছি। সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে না থেকে একজন দায়িত্ববান মানুষ হিসেবে অবদান রাখার পাশাপাশি সংসদে প্রতিবন্ধীদের অধিকারগুলো তুলে ধরার জন্যই সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছি। আমি হয়তো জিতবো না, কিন্তু আমি তরুণদের আর সেসব প্রতিবন্ধী মানুষদের ইতিমধ্যে এই মেসেজ দিতে পেরেছি যে, আমি পারি, তোমরাও পারবে' বলেন তিনি।

ইদ্রিস আলী মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে। তাঁর প্রতীক হারিকেন। তিনি লড়ছেন আওয়ামী লীগের এনামুর রহমান, বিএনপির দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, জাতীয় পার্টির আবুল কালাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফারুক খান, জাকের পার্টির নুরুল ইসলাম, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের সরোয়ার হোসেন, বিকল্পধারার আইনুল হক, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আবু ইউসুফ খান ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের সৌমিত্র কুমার দাসের সঙ্গে।

সময়ের দাবি অনুসারে সমাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্র থেকেই মহান জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন তবে প্রতিবন্ধী মানুষের উপস্থিতি আজো নেই। গত সিটি নির্বাচনে রংপুরের একজন প্রার্থী ছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের। এভাবেই দিন বদলের সাথে সাথে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, সেখানে ইদ্রিস আলী একজন দিশারী হয়ে কাজ করছেন। সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করে তিনি ইতিমধ্যেই বিজয়ী।

Bootstrap Image Preview