Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

কে বোঝাবে একেকটি দিন বেঁচে থাকা আমাদের পরম পাওয়া!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৫:০৮ PM
আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৫:০৮ PM

bdmorning Image Preview


যান্ত্রিক এ জীবনে আমাদের রয়েছে নানাবিধ সমস্যা! ব্যক্তিজীবনে আমাদের আছে অশেষ অসম্পূর্ণতাও এবং তা থাকবে! পার্থিব এই জীবনে চাওয়া পাওয়ার হিসেব প্রায়শই মেলে না.. তাই বলে জীবন নামের রেলগাড়ি থেমে থাকে না। চলতে হয়, চালাতে হয়।

বাঁচার জন্য চলতে গিয়ে প্রায়শই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন আমরা হয়ে পড়ি তখন ভুল, শুদ্ধ নির্ধারণের জায়গাতে আমরা থাকতে পারি না! না থাকতে পারলেও খুব সচেতনভাবে আমরা দুই পক্ষ থেকে যে কোনো এক পক্ষকে বেছে নেই দোষ চাপানোর জন্য। এটি এক রকম আমাদের কাছে দায় থেকে পরিত্রাণের উপায়। তাতে আদৌ ব্যক্তি, সমাজ, পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলো কিনা সেটি বিবেচনা করার সময় আমাদের নেই।

তাজা প্রাণ অকালে ঝড়ে পড়লে প্রতিটা মানুষ ব্যথিত হয়! আর নিজ পরিবারের কাছে তা এক বিশাল বেদনার বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

বর্তমান সময়ে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা নিরূপন করতে বলা হলে অনেকেই স্বীকার করে নেবেন, আমরা অত্যন্ত জাজমেন্টাল! এটি এমন একটি ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে যে জাজমেন্টাল হওয়াটাই এখন এক ধরণের ফ্যাশন হয়ে গেছে! স্রোতের সাথে মিশতে যেয়ে প্রচলিত সিস্টেমকে কুঠারাঘাত করা হলে, সাময়িক লাভ পরিলক্ষিত হলেও দিনশেষে তা অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে যায়।

আমাদের সমাজব্যবস্থায় লেখাপড়াকে যে অসুস্থ একটি প্রতিযোগিতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে; তার দায় কি আমরা এড়াতে পারি? প্রচলিত নিয়মও পরিবর্তিত হয়, তবে তা কখনোই তার মূলকে সরিয়ে নয়! যে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে আমরা ৩টি ভাগে সময়কে দেখি-ঘটনার পূর্ববর্তী, ঘটনাকালীন এবং ঘটনা পরবর্তী! আমাদের জাজমেন্টাল আচরণ আমাদের শুধু ঘটনাকালীন সময়কে নিয়ে ভাবতে শেখায়! আমরা সেভাবেই ভেবে চলেছি এবং নিকট ভবিষ্যতে সমূহ বিপদের সম্মুখীন হওয়ার দ্বার উন্মোচন করছি।

গত ৬ বছরে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দেখেছি ছোট ছোট ভুল-ভ্রান্তি ও মনোমালিন্যের কারণে সন্তানেরা আত্মহত্যা করছে! গত ২ বছরে কমপক্ষে ২৫টি এরকম ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়েছি আমি! কখনো বাবার উপর আবার কখনো বা মায়ের উপর রাগ করে এরকম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদেরই অতি আদরের ছেলেমেয়েরা! পরবর্তীকালে বাবা, মাকে অবশ্য আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে জেল খাটতে দেখিনি আমি। স্বামীর নির্যাতনের স্বীকার হয়ে স্ত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় দণ্ডবিধি'র ৩০৬ ধারার ব্যবহার বহুল প্রচলিত! অন্যান্য বিষয়গুলোকে ব্যতিক্রম হিসেবেও খুব বেশি দেখা যায়নি।

কারো কারো মৃত্যু আমাদের শিখিয়ে দেয় এই সমাজে আমাদের প্রত্যেকের দায়বদ্ধতা রয়েছে! মানসিকভাবে অপরিণত সন্তান ভুল পথে পা বাড়ালে সেটির দায় পরিবারের উপরও কম বর্তায় না! আমাদের আবেগী মন দৃশ্যমান ঘটনার প্রতিক্রিয়া নিয়েই কথা বলতে চায়, আর কিছুই দেখতে চায় না! পার্থিব এই জীবনে লেখাপড়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতার বাইরে আমাদের যে চমৎকার একটি উপভোগ করার জীবন রয়েছে সেটি আমরা ভুলতে বসেছি, আমাদের ভুলিয়ে দেয়া হচ্ছে! এই দায় আমাদের সকলের! কিন্তু এখানেও আমরা মূলে প্রবেশ করবো না, কারণ সেই প্রবেশে দায় যে আমার কাঁধেও আসে। দায় স্বীকার করে দায়বদ্ধতা নিয়ে বলবার সময় কোথায় আমাদের!

আত্মহত্যাকেও আমরা মাঝে মাঝে এতটা তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলি যে এতে সমাজে ভুল বার্তা যায়! সকলে আবার এই ভুল বার্তাকে একপাশে সরিয়ে ফেলতে পারে না! তাই সমাজ, পরিবারে থেকেও জীবনকে উপভোগ না করে তাৎপর্যহীন মৃত্যুকে বেছে নেয়!

আহা কে বোঝাবে তাদের কত মধুর এই বেঁচে থাকা? কে বোঝাবে একেকটি দিন বেঁচে থাকা আমাদের পরম পাওয়া! কে বোঝাবে আত্মহনন পরাজিত সৈনিকের অস্ত্র! কে বোঝাবে এ জীবনকে বাঁচিয়ে রাখতে মানুষ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর হাসপাতালে কাটিয়ে দিতে চায়; তবুও বেঁচে থাকতে চায়! আর সেই আকাঙ্ক্ষিত জীবনকে উপেক্ষা করে আত্মহননের পথ বেছে নিয়ে যে চলে যায় তার জন্য একরাশ মনোবেদনা!

আহা, মানুষ! এ কেমন জীবন, যেখানে বেঁচে থাকার মত পরম সুখের সন্ধানটুকুই মিললো না......

আত্মহননকে তাৎপর্যপূর্ণ করে দেবেন না দয়া করে, কিছু বানাতেই যদি হয় সেটি যেন অগৌরব, অসম্মান ও পরাজয়ের বিষয়ই হয়!

(স্কুলছাত্রী অরিত্রীর আত্মহননের বিষয়টি নিয়ে একটি নিয়মিত মামলা হয়েছে- বিদ্যমান সেই স্বাভাবিক বিষয়টিকে আইনগতভাবেই এগোতে দিন দয়া করে; এক্ষেত্রে একটু জাজমেন্টাল নাইবা হলাম আমরা.....!)

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
লেখক: সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডেমরা জোন)

Bootstrap Image Preview