Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৬ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যে গানগুলো যুদ্ধের প্রেরণা জোগাতো

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৩:২৮ PM
আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৩:২৯ PM

bdmorning Image Preview


একাত্তরে বাঙালির আত্মত্যাগের প্রেরণা ছিলো স্বাধীন বাংলা বেতার। তখন কণ্ঠই অস্ত্র, বিধ্বংসী শক্তি। বাঙালির জীবনে পরম আনন্দ-বেদনার কালে সুরে সুরে ভাসিয়ে, নতুন প্রত্যয়ে যুদ্ধ জয়ের সাহস দিয়েছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। সে সময়ে বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনবার জন্য কোটি কোটি মুক্তিকামী মানুষ কান পেতে অপেক্ষা করতো। শব্দ সৈনিকরা বেতারের মাধ্যমে গান-সুর-কথিকায় অনুপ্রাণিত করতো রণাঙ্গনে যোদ্ধাদের। তবে সেই পথচলা সহজ ছিল না। পাকিস্তানী বাহিনীর রোষানল এড়াতে পারেনি বেতার কেন্দ্র। চলুন জেনে নেই ওই সময়ে প্রচার হওয়া সেরা ১০ গান-

জয় বাংলা, বাংলার জয়ঃ বাংলার আকাশে যতদিন সূর্য উঠবে, এই গান ও তার আবেদন ততদিন থাকবে। দেশ বরেণ্য সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমত উল্লাহর কণ্ঠে এই গানটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সেরা গান। গানটির কথা লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। সুর করেন আনোয়ার পারভেজ।

মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করিঃ গানটির গীতিকার গোবিন্দ হালদার। সুর করার পাশাপাশি গানটি কণ্ঠে তোলেন আপেল মাহমুদ। তার কণ্ঠে বাংলাদেশ বেতারের গানটি প্রচারের পর জনমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। এছাড়া গানটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচার হওয়ার পর পুরো কলকাতাতেও এর বন্দনা শুরু হয়। যুদ্ধ চলাকালে এ গানটি কেবল স্বাধীন বাংলা বেতার নয়, পথে-ঘাটে, রাস্তায় রাস্তায় দলে দলে মুক্তিকামী মানুষেরা গেয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি করেছেন।

কারার ঐ লৌহকপাটঃ গানটির কথা ও সুরারোপ করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার অনবদ্য এই গানটি কয়েকজন শিল্পীর সমবেত কণ্ঠে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচার করা হয়। গানটি যুদ্ধকালীন সময়ে মানুষের মনে উদ্যম ও শক্তি সঞ্চার করে। গানের কথা আর সুর হাজারো ঘরকোণা যুবককে ঘর ছাড়তে বাধ্য করে, স্বপ্ন দেখায় পরাধীনতা গ্লানি মুছে স্বাধীনতার লাল সূর্যকে ছিনিয়ে আনার।

শোনো একটি মুজিবরের থেকেঃ শোনো একটি মুজিবরের থেকে/লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি/আকাশে বাতাসে ওঠে রণি/বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার’র কথায় গানটি সুরারোপের পাশাপাশি কণ্ঠে তোলেন অংশুমান রায়। এটি ছিল সেই গান, যেটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু হওয়ার আগেই ভারতের কোনো এক বেতার থেকে বাজানো হয়েছিল। পরে স্বাধীন বাংলা বেতারের জন্য নতুন করে কণ্ঠ তোলেন আব্দুল জব্বার।

পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লালঃ এই গানটির গীতিকার গোবিন্দ হালদার। সুরারোপে সমর দাস। গানটি কয়েকজন শিল্পীর সমবেত কণ্ঠে প্রচার করা হয়। এটি এমন একটি গান, যার কথা, সুর এবং গায়কী লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধাকে অনুপ্রাণিত ও উৎসাহী করে তুলেছিল অস্ত্র হাতে যুদ্ধে যাওয়ার।

তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রেঃ একাত্তরের জুনের শেষের দিকে এ গানটি তৈরি করা হয়। দেশাত্মবোধক চেতনায় জাতিকে এক করার জন্য, একই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত করার জন্য তখন এ রকম গানের বিকল্প ছিলো না। আর আমাদের মুক্তির সংগ্রামে ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে’ গানটি জনজাগরণের আরেকটি শক্তি। এই গানটির কথা ও সুরারোপ করেন আপেল মাহমুদ। যৌথভাবে আপেল মাহমুদ ও রথীন্দ্রনাথ রায়’র কন্ঠে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত গানের মধ্যে এটি অন্যতম সেরা।

এক সাগর রক্তের বিনিময়েঃ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে/বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা/আমরা তোমাদের ভোলবো না। গোবিন্দ হালদারের কথায় গানটির সুরারোপ করেন আপেল মাহমুদ। গানটি কণ্ঠে তোলে জনতার মাঝে দেশপ্রেমের চেতনা জাগান স্বপ্না রায়।

সালাম সালাম হাজার সালামঃ গানটি আব্দুল জব্বারের কণ্ঠে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই মানুষের মুখে মুখে রটতে থাকে। এর কথা লিখেছেন ফজলে খোদা। সুরারোপ করেন আব্দুল জব্বার নিজেই।

নোঙর তোল তোলঃ গানটির কথা নঈম গহর’র। সুরারোপে সমর দাস। তার সুরে সমবেত কয়েকজন শিল্পীর কণ্ঠে গানটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত হয়। এই সমবেত সংগীতটি তখন সংগ্রামী সংগীত এবং যুদ্ধের মন্ত্র হিসেবে কাজ করেছে।

ছোটদের বড়দের সকলেরঃ গানটির কথা ও সুর খাদেমুল ইসলাম বসুনিয়া’র। এটি জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়ের কণ্ঠে তৎকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত হয়। এই গানটি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাঙালির মনে দেশপ্রেম জাগাতে অনবদ্য ভূমিকা রাখে।

Bootstrap Image Preview