Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

তরুণ ভোটাররাই সব দলের নজরে!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৩:২২ PM
আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:০৩ AM

bdmorning Image Preview


মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন।।

ভোটযুদ্ধে সবচেয়ে দামী তরুণ ভোটাররা। অথচ জাতীয় নির্বাচনে তরুণ প্রার্থীদের সুযোগ একেবারেই নগণ্য! এখন নির্বাচনী মৌসুম চলছে। সর্বত্র চলছে নির্বাচনী আমেজ। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে পক্ষ-বিপক্ষ আলোচনা-সমালোচনা। সমাজের সকল স্তরের মানুষের মনে নির্বাচনী হাওয়ার উদ্বেল আনন্দ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রশ্ন হলো এই নির্বাচন ঘিরে তরুণ ভোটাররা কি ভাবছে?

এবারের নির্বাচনে ৪ কোটি ২০ লাখ তরুণ ভোটার ভোট দিতে প্রস্তুত। তারা ভোটের বাজারে সবচেয়ে দামী কাস্টমার। মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেকই তরুণ ভোটার। ভোট যুদ্ধে তারা ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে জেতাতে পারে যেকোন দলকে৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও এভাবেই ভাবছেন তরুণ ভোটারদের নিয়ে। বিষয়টি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে তরুণ্যের গুরুত্ব আছে, সেটি বোঝা যাচ্ছে তাদের নির্বাচনী প্রচারণার মাধ্যমে। খেলার মাঠ থেকে সিনেমার পর্দা, কে নেই এই প্রচারণায়? ভোটের মাঠ তাদের দখলেই এখন।এই প্রথম রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ব্যক্তি ইমেজের কাছে পরাজিত হয়ে তারকাদের ইমেজকে কাজে লাগাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারণায়। এই সংস্কৃতি ছিল পশ্চিমা দেশগুলোতে। এবার থেকে আমাদের দেশগুলোতেও এই সংস্কুতির চালু হলো। আমি জানি না এই কৌশল কতটুকু কাজে দিবে। কারণ তরুণসমাজ এখন বুঝতে শিখেছে অনেকটা। অনেক রাজনৈতিক নেতার চেয়েও তারা যতেষ্ঠ সচেতন।তারুণ্যের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ভোটের হিসেব নিকেশ শুরু হয়েছে। আমার সাথে কথা হয়েছে এমন অনেকেরই। প্রত্যেকেরই মনে এখন একটা দীর্ঘশ্বাস যে, শেষ পর্যন্ত কি অবস্থা তৈরি হয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে ভীতিকর পরিস্থিতি এরই মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে সে অবস্থায় তারা কি শেষ পর্যন্ত ভোট দিতে পারবে? তারা ভোট দিতে চায়। তারা বাংলাদেশের পক্ষেই ভোট দিতে চায়।

নতুন ভোটার হিসেবে প্রথম ভোট দিবে, এ নিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের কৌতুহলও রয়েছে। আমার সাথে কথা বলা তরুণদের আরেকটি প্রশ্ন আমাকে ভাবিয়েছে। রাজনীতির মাঠে হঠাৎ করে অচেনামুখ রাজনীতির জন্যে শুভকর হবে না বলেও তারা মনে করে। একজন ক্রিকেটার মাঠের জন্যে দক্ষ। একজন অভিনেতা সিনেমা হলের জন্যে দক্ষ। কিন্তু রাজনীতি যেমন ক্রিকেট খেলা নয়, তেমনি সিনেমা হলের অভিনয়ও নয়। জনমনের উন্নয়নের জন্যে যে রাজনীতি সেটি আদৌ কি আমাদের নব্য রাজনীতিতে সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ক্রিকেটার, অভিনেতা এবং শিল্পীরা বুঝবেন?

অন্যদিকে যারা অনেক কিছু বিসর্জন দিয়ে তৃণমূলে রাজনীতি করেছেন এতদিন তাদের জায়গায় এমন নব্য রাজনীতিবিদদের মুখ তাদের যতটা আনন্দ দিয়েছে তারচেয়ে বেশি হতাশ করেছে। এই হতাশ যেকোন দলের জন্যে তাদের ভোটব্যাংকের বিপরীতে কাজ করতে পারে। সুসময়ে এরা যেমন এসেছে নির্বাচনে জিততে না পারলে হয়তো তারা আবার ফিরে যাবে নিজ পেশায়। দলগুলো তখন এদের পাশে পাবে না। একা হয়ে যাবে। তখন আবার এই বঞ্চিত কর্মীদের কাছেই যেতে হবে দলগুলোকে। তাই আজ তাদের প্রতি কোন অবিচার করা হচ্ছে কি না সেটিও ভেবে দেখা দরকার বলে মনে করছি।

আরেকটা বিষয় হলো ছাত্ররাজনীতি আজ আর্শীবাদ নয়, প্রায় অভিশাপেও পরিণত হয়েছে। কোটা সংস্কার, ভ্যাট আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন দমন করতে হাতুড়ি সন্ত্রাসীর জন্ম হয়েছে এই ছাত্ররাজনীতির কারণে৷ এটি কখনোই কাম্য ছিলো না। সারাদিন যে শিক্ষার্থী রাজপথে, মিছিল মিটিং এবং নেতাদের সাথে ঘুরে ঘুরে সময় কাটায়, পড়াশুনা করার সময়টা তার কখন? কিন্তু যারা পড়াশুনার বিশাল সাগর পাড়ি দিয়ে বেকারত্বের তোকমা নিয়ে বছরের পর বছর ঘুরছে দায়িত্বের বোঝা নিয়ে, তাদের জীবন চলাচলের ব্যবস্থা করে দিবে কে? এই রাষ্ট কি সেই নিশ্চয়তা দিতে পারবে আজ?

এই নির্বাচনে এমন কোন ইশতেহার কি আদৌ আছে তাদের জন্যে? আজ আমারো জানতে ইচ্ছে করে।তবে হ্যাঁ, যারা খেয়ে না খেয়ে আজ রাজনীতির পরিচয়ে আমাদের কাছে পরিচিত, তাদের দায়িত্ব নেওয়া উচিত সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে। কিন্তু তার চর্চা তেমন একটা হয় না। ফলে এই ছেলেমেয়েদের অনেকেই জীবন চালাতে গিয়ে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়তেও কেমন যেন দ্বিধাবোধ করে না।

আমি মনে করি, অপরাধের সাথে এমন ছেলেমেয়েদের জড়িয়ে পড়ার জন্য দায়ী এমন উদাসীন রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও অপরিপক্ক রাজনীতিবিদরা। জাতীয় নির্বাচনে তরুণ প্রার্থীদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ একমাত্র তরুণরাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে, ঝুঁকি নিতে পারে, যেকোন প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করতে পারে। দুভার্গ্য আমাদের তরুণদের সেরকম কাউন্সিলিং রাজনীতিবিদরা আজ দেন না। শুধু দলের জন্যে খাট আর জীবন দিয়ে দেও। দল ক্ষমতায় গেলে তোমাদের দেখবে।এই নীতির পরিবর্তন চাই।

এবারের জাতীয় নির্বাচনে কতজন তরুণ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে? অনেকেই তো নমিনেশন ফরম নিয়ে ছিলেন দেখলাম। কিন্তু কতজনকে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হলো? একজন ৮০-৯০ বছরের জনপ্রতিনিধি তো নিজেরই চলার ক্ষমতা থাকে না, তিনি দেশ চালাতে পারলে তরুণরা পিছিয়ে কেন? আমার মনে হয় এখনই সময় এসেছে তাই তরুণদের সুষ্ঠু ও শান্তির রাজনীতিতে আকৃষ্ট করতে হবে। তাদের হাতে দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিতে হবে। তারকা ও ব্যবসায়ীদের ভিড়ে আমাদের তরুণরা সঠিক পথ খুঁজে পাবে। এদের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবে তরুণ নেতৃত্ব। পথ হারাবে না বাংলাদেশ।

লেখক: যুগ্ম আহবায়ক, কোটা সংস্কার আন্দোলন।

বি.দ্র এই লেখার দায়ভার লেখকের সম্পুন্ন নিজের। কোন ভাবেই এডিটরিয়াল বোর্ড এর দায়ভার নিবে না।

Bootstrap Image Preview