Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বেনাপোলে বকেয়া বেতনের দাবিতে পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ

শহিদুল ইসলাম, বেনাপোল প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:০৮ PM
আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:০৮ PM

bdmorning Image Preview


বকেয়া বেতনের দাবিতে ২ দিন ধরে বেনাপোল বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ করে দিয়েছে বন্দরের ইকুইপমেন্ট শাখার শ্রমিকরা। ফলে হঠাৎ স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরের মালামাল খালাস প্রক্রিয়া। এর ফলে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পরিশোধ করেও কোন পণ্য খালাস নিতে পারছে না আমদানিকারকরা।

অন্যদিকে ভারত থেকে পণ্য বোঝাই শত শত ট্রাক আমদানিকৃত পণ্য খালাসের অপেক্ষা পড়ে আছে বন্দর অভ্যন্তরে। পণ্য আনলোড না হওয়ায় লাখ লাখ টাকা ডেমারেজ গুনতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। বিষয়টি বার বার জানানোর পরও বন্দর কর্তৃপক্ষ হাত পা গুটিয়ে বসে আছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

বন্দরের একটি সূত্র জানায়, দেশের সিংহভাগ শিল্প-কলকারখানা, গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ ও বিভিন্ন প্রকল্পের বেশির ভাগ মেশিনারিজ আমদানি করা হচ্ছে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। ক্রেন ও ফর্কলিফট ছাড়া এ জাতীয় পণ্য বন্দরে আনলোড ও বন্দর থেকে খালাস নেওয়া সম্ভব নয়। মংলা বন্দর থেকে ২০০২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের পর অতি পুরাতন ক্রেন ও ফর্কলিফট মংলা বন্দর থেকে ভাড়া করে এনে এখানে কাজ চালায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

২০১০ সালের ২১ মার্চ বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঢাকার মহাখালীর মেসার্স এসআইএস (সীস) লজিস্টিক্যাল সিস্টেমের ৫ বছর মেয়াদী চুক্তি হয়। ওই বছরের ১ আগস্ট থেকে তারা বেনাপোল স্থলবন্দরে বেসরকারী কার্গো হ্যান্ডলিং এর দায়িত্ব পায়। তারা বন্দরে কয়েকটি নামমাত্র ফর্কলিফট ও ক্রেণ দিয়ে মালামাল ওঠানামার কাজ শুরু করে। কয়েকদিন কাজ করার পর এসব ফর্কলিফট ও ক্রেণ অকেজো হওয়া শুরু করে। কিন্তু মেরামতের কোন লক্ষণ দেখা যায় না।

বিষয়টি নিয়ে একাধিক বার জানানোর পরও এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেননি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও বন্দরের ঠিকাদার কোম্পানির দায়িত্বহীনতার কারণে বেনাপোল স্থল বন্দরে সকল প্রকার ভারি পণ্য লোড-আনলোড ঠিকমত করা যাচ্ছিল না। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা পড়েছিল চরম দুর্ভোগের মধ্যে। 

২০১৬ সালে বেনাপোল স্থলবন্দরে বেসরকারি কার্গো হ্যান্ডলিং এ নতুন ঠিকাদার নিয়োগের জন্য দরপত্র আহবান করা হলে আগের হ্যান্ডলিং ঠিকাদার মেসার্স এসআইএস (সীস) লজিস্টিক্যাল সিস্টেম উচ্চ আদালতে রীট করে। এর ফলে বন্ধ হয়ে যায় দরপত্র আহবান প্রক্রিয়া। বিপাকে পড়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ। নতুন কোম্পানী নিয়োগ দিতে না পেরে বন্দর কর্তৃপক্ষ আদালতের নির্দেশে তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তুু বন্দর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কোন বিল পরিশোধ করা হবে না। আর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানও কৌশলগত কারনে মামলা নিষ্পত্তির কোন আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

৫ মাসের প্রায় দুই কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। বন্দর শ্রমিকরাও তাদের পারিশ্রমিকও পাচ্ছে না ৫ মাস যাবত। আর বকেয়া টাকা আদায়ের দাবি নিয়ে কর্মবিরতি ডাক দেন শ্রমিকরা। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সিস লজিস্টিক্যাল সিস্টেম বকেয়া টাকা আদায়ের দাবি নিয়ে কর্মবিরতি ডাক দেন। ২৭ নভেম্বর সকালে বেনাপোল বন্দর পরিচালকের অফিসে তাদের সাথে বৈঠক হয়। এ সময় বন্দর পরিচালক শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য পাঁচ দিনের সময় নিয়েছিলেন। তারপরও শ্রমিকরা টাকা পায়নি। এর ফলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানও বন্দরের শ্রমিকরা পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ করে দেয় রবিবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকে। সেই থেকে বন্ধ রয়েছে বেনাপোল বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড।

বেনাপোল স্থলবন্দরের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সিস লজিস্টিক্যাল সিস্টেম লিমিটেডের বেনাপোল প্রতিনিধি সুলতান আহম্মেদ বাবু জানান, গত জুলাই মাস থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ কোন বিল পরিশোধ করছে না। বারবার  বিল পরিশোধের কথা বলা হলেও আমার কোন কথা তারা শুনছে না। এদিকে আমরা শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছি না। বাধ্য হয়ে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। বকেয়া বেতনের দাবিতে এর আগে আমাদের সাথে বেনাপোল বন্দর পরিচালকের বৈঠক হয়। এ সময় বন্দর পরিচালক শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য পাঁচ দিনের সময় নিয়েছিলেন। সে কারণে আমরা কাজে যোগ দেই। ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও আমরা টাকা পাইনি। শ্রমিকরা টাকার জন্য আমাদের উপর চাপ প্রয়োগ করছে। বাধ্য হয়ে কর্মবিরতি করা ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক এমদাদুল হক লতা জানান, দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য বিষয়টি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে। আমরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। শত শত কনসাইমেন্টের সরকারি শুল্ক পরিশোধ করেও আমরা পণ্য খালাস নিতে পারছি না। এর সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব বন্দর কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে।  বিষয়টি দ্রুত সমাধান না হলে আমাদেরও বন্দরের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে হবে।

বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) প্রদোষ কান্তি দাস শ্রমিক কর্মবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃতভাবে বন্দরে গত দুই দিন ধরে ইকুপমেন্ট সাইডের সমস্ত ধরনের পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ করে রেখেছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে অনেক আগেই বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি শেষ হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন করে চুক্তি নবায়ন না করায় তারা বন্দর কর্তৃপক্ষের নামে উচ্চ আদালতে একটি মামলা করে।

ওই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বন্দরের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে বলে রায় দেন। এই রায়ের পর বন্দর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কোন বিল পরিশোধ করা হবে না। এখন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মামলা নিষ্পত্তির কোন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আর এ কারণে তারা মাঝে মাঝে বেনাপোল বন্দরের পণ্য লোড-আনলোডের কাজে বাধাগ্রস্ত করছে। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ মহলে আলোচনা চলছে। 

Bootstrap Image Preview