Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

লালমনিরহাটে তিস্তার চরগুলো এখন ভুট্টার দখলে

আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৭:৩৫ PM
আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৭:৩৫ PM

bdmorning Image Preview


কয়েক বছর আগেও লালমনিরহাটের যেসব জমিতে তামাক চাষ হতো বা তিস্তা নদীর ধু ধু বালু চর পড়ে থাকতো। এখন সেই জমিগুলোতে আবাদ হচ্ছে ভুট্টা। এতে মিলছে কাঙ্খিত ফলনও। দিন দিন তাই জেলায় বাড়ছে ভুট্টার আবাদ। ভুট্টা আবাদের পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাগ্য ফিরেছে জেলার ৫ উপজেলার হাজার হাজার কৃষকের।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, লালমনিরহাট সদর উপজেলা, পাটগ্রাম, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও হাতীবান্ধা উপজেলায় এবার ভুট্টার ব্যাপক আবাদ হয়েছে। যদিও বিভিন্ন কোম্পানির প্রলোভনে এখনো আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলায় তামাক চাষের প্রভাব কিছুটা রয়ে গেছে। তবে সরকারিভাবে মনিটরিং ও প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেয়া হলে এ দুই উপজেলাও তামাকের পরিবর্তে ভুট্টা বা অন্য ফসল আবাদ বৃদ্ধি করা সম্ভব।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে জেলার পাঁচ উপজেলায় ২৪ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। যার মধ্যে ২২ হাজার ৯১০ হেক্টর জমির আবাদ থেকে ২ লাখ ৩ হাজার ৮৯৯ টন ভুট্টা উৎপাদন হয়। প্রতি হেক্টরে গড়ে ৮ দশমিক ৯০ টন ফলন পাওয়া যায়। আর প্রতি মণ ভুট্টা ৫০০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হলে কৃষকরাও বেশ লাভবান হন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৪ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়। এ থেকে উৎপাদন হয় ২ লাখ ১৮ হাজার ২২৮ টন। প্রতি হেক্টরে গড়ে ৮ দশমিক ৮৮ টন করে ফলন পান কৃষক। বাজারে এসব ভুট্টা প্রতি মণ ৮০০-৮৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। ফলে কৃষকদের লাভ হয় উৎপাদন খরচের প্রায় দ্বিগুণ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিলো। চাষাবাদ হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি।

কৃষি বিভাগ মনে করছে, চলতি বছরে জেলায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হতে পারে। যার বিপরীতে ২ লক্ষ ৮৮ হাজার টন ভুট্টা উৎপাদন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। যার মধ্যে জেলার হাতীবান্ধায় ১০ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তাছাড়া তিস্তা বিধৌত হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জেগে ওঠা চরেও ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। এসব চরে প্রতি বছর পতিত প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা উৎপাদন হচ্ছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার চর হলদীবাড়ী গ্রামের আইয়ুব আলী জানান, ৪০ হাজার টাকা বিঘা দরে চরের জমি বন্ধক নিয়ে তিনি ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত ক্ষেতের অবস্থা ভালো রয়েছে। কোনো দুযোর্গ দেখা না দিলে ভালো ফলনের স্বপ্ন দেখছেন।

ওই এলাকার সাহেব হোসেন জানান, ৬ বিঘা চরের জমি বর্গা নিয়ে ভুট্টা চাষ করেছেন। এ জন্য তাকে দুই গরু বিক্রি করতে হয়েছে। ভালো ফলন হলে ভুট্টা বিক্রি করে আবারও গরু ক্রয় করবেন। 

হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। অনেকেই তামাক চাষ বাদ দিয়ে ভুট্টা চাষের দিকে ঝুকছেন। 

লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) বিধু ভূষণ রায় বলেন, লালমনিরহাট সদর, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে আশাব্যঞ্জকভাবে ভুট্টা চাষ বৃদ্ধি করা সম্ভব হলেও কালীগঞ্জের একটি অংশ ও আদিতমারীতে এখনো তামাক চাষ পুরোপুরি থামানো যায়নি। আমরা কৃষকদের ভুট্টা চাষে প্রতি নিয়ত উৎসাহিত করে আসছি। 


 

Bootstrap Image Preview