Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মঙ্গলবার ফুলবাড়ী হানাদারমুক্ত দিবস

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৫:০১ PM
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৫:০২ PM

bdmorning Image Preview


ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:

আজ ৪ ডিসেম্বর দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের  আজকের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহীনী যৌথ ভাবে দখলদার পাক বাহিনীর সাথে প্রাণপণ যুদ্ধ করে পাকিস্তানী হানাদার বহীনীকে ফুলবাড়ী থেকে বিতাড়িত করে। এই দিনে ফুলবাড়ী এলাকা শত্রুমুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ জন্য ৪ ডিসেম্বর ফুলবাড়ী হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করে আসছে এই এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

দেশকে শত্রুমুক্ত করার লড়াইয়ের সেই বীর সেনানী একাধিক মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পর ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর রোজ শুক্রবার মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় যৌথ বাহিনী উপজেলার বেতদিঘী, কাজিয়াল, এলুয়াড়ী, জলপাইতলী, পানিকাটা, রুদ্রানী, আমড়া ও রানিনগর এলাকার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে দখলদার পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে চর্তুমুখী আক্রমন শুরু করে।

এ সময় মুক্তিবাহীনী ও  মিত্র বাহিনীর হাতে নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে দখলদা পাকবাহীনীরা মিত্র বাহিনীদের ফুলবাড়ী শহরে আগমন রোধ করতে বিকেল সাড়ে ৩টায় ফুলবাড়ীর পৌর শহরের পশ্চিম পার্শ্বে ছোট যমুনা নদির উপর লোহার ব্রীজটির পূর্বাংশ শক্তিশালী ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেন। ব্রীজটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে এখনো কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। ব্রীজটি উড়িয়ে দেয়ায় মিত্রবাহীনীরা ফুলবাড়ী শহরের প্রবেশ করতে বিলম্ব হয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী অবাঙ্গালীরা বিশেষ ট্রেন যোগে সৈয়দপুরে পালিয়ে যায়। এর পর সন্ধা ৭টায় ফুলবাড়ীতে প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহীনী এবং ফুলবাড়ীকে সত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন।

ফুলবাড়ী স্বাধীন হওয়া পর ৭ই ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাজোয়া যান যমুনা নদী পার হয়ে চকচকা রাইস মিলের নিচ দিয়ে উপরে রাস্তায় এসে দাঁড়ালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর পুতে রাখা মাইন বিস্ফোরনে গাড়ীটি  ধবংশ হয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই  সাজোয়াযানে থাকা একজন ভারতীয় সেনা বাহিনীর অফিসারসহ ৩ জন ভারতীয় মিত্র বাহীনীর সেনা সদস্য নিহত হয়। যমুনা নদীর তীরে সরকারি কলেজ সংলগ্ন স্থানে সেই শহীদের সমাধি দেয়া হয় এবং সেখানে তাদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়। স্মৃতিস্তম্ভে লেখা রয়েছে ইংরাজিতে- 'এসএস২৩৭৩৭২/এল রিচিডল ডায়েড-১০ ডিসেম্বর ৭১, এমটিএম রেজিমেন্ট'।

মুক্তিযোদ্ধা ও একাধিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের মার্চ মাস থেকে যখন পাকিস্তানী পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সারা দেশব্যাপী উত্তাল আন্দোলন চলছিল, তখন দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং বাঙালি ও অবাঙালিদের মধ্যে যাতে করে কোন সংঘাত সৃষ্টি না হয়, সে জন্য মার্চের প্রথম সপ্তাহে ফুলবাড়ীতে গঠিত হয় সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি। ২৪ মার্চ পর্যন্ত ফুলবাড়ীতে শান্তি বিরাজ করে। ২৫ মার্চ গভীর রাতে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রংপুর ও বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানী পাকবাহিনী নিরিহ জনসাধারনের উপর হামলা করে হত্যা করে, অসংখ্য নিরীহ বাঙ্গালীকে। পরের দিন ২৬ মার্চ এই হত্যাযজ্ঞের খবর বিভিন্ন এলাকা থেকে রেডিও টিভিতে জানতে পেরে ফুলবাড়ীতে বাঙালির মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

এ হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে ওই দিন সকাল থেকে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে ফুলবাড়ী শহরে বের করা হয় প্রতিবাদ মিছিল। মিছিলটি শান্তিপূর্ণ ভাবে শহরের রেল স্টেশন থেকে ফিরে কাঁটাবাড়ী বিহারীপট্টি অতিক্রম করার সময়, মিছিলকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে বাঙালি-অবাঙালিদের মধ্যে সংঘাতের সৃষ্টি হয়।

এ ঘটনায় অনেকের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার জের ধরে ফুলবাড়ীর মুক্তিকামী মানুষ বিহারীপট্টির অবাঙালি বাড়িতে পাল্টা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে এবং পাকিস্তানপন্থি বলে পরিচিত অবাঙালিদের নেতা, ডাঃ শওকতসহ তার পরিবারের ৫ জন সদস্য অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হন।

এ ঘটনার জের ধারে এপ্রিলের ২ তারিখে পাক হানাদার বাহিনী ফুলবাড়ী আক্রমন শুরু করে পুরো ফুলবাড়ীকে নিয়ন্ত্রণ করে নেয়। এরপর থেকে  শুরু হয় বাঙালিদের উপর দখলদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচার হত্যা লুটতারাজ ও অগ্নিসংযোগসহ নানা নির্যাতন। ফুলবাড়ীর মুক্তিকামী আবাল বৃদ্ধ যুবকেরা এবং নারীরাও মাতৃভূমিকে দখলদার মুক্ত করতে যোগ দেয় মুক্তিবাহিনীতে।

Bootstrap Image Preview