পায়রা বন্দরে ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যদের প্রশিক্ষণ শেষে সনদপত্র বিতরণ করা হয়েছে। আজ সোমবার সকাল দশটায় অনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম ধাপের সফলভাবে প্রশিক্ষণ সমাপ্তকারী ১৩৪ জনের হাতে সনদ তুলে দেন বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর মো. জাহাঙ্গীর আলম।
উক্ত অনুষ্ঠানে বন্দরের প্রকৌশল ও উন্নয়ন সদস্য ক্যাপ্টেন মুনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ সচিব নুরুল হক।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, পায়রা বন্দর র্নিমাণের জন্য বিপুল পরিমান জমি অধিগ্রহণের ফলে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ আইনুযায়ী এসব ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণও দেয়া হয়েছে। কৃষিসহ নানা পেশায় নিয়োজিত ক্ষতিগ্রস্থ এসব প্রতিটি পরিবার থেকে একজন করে মোট ৪ হাজার দুইশ সদস্যদের ৩৫টি ট্র্রেডের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মমুখী করার পরিকল্পনায় পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।
প্রশিক্ষণগ্রহণে আগ্রহীদের চাহিদার ভিত্তিতে ৬৮ টি ট্রেড থেকে ৩৫টি ট্রেডে এ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের অনুমোদনক্রমে প্রথম ধাপে তিন মাস মেয়াদী ২টি ব্যাচে ১৩৬ জন নারী-পুরুষকে বেসিক কম্পিউটার, মটর ড্রাইভিং, রাজমিস্ত্রীর প্রশিক্ষনণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষনার্থীদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য প্রতিজনকে আহার এবং যাতায়ত ভাতা বাবদ প্রতিদিন পাঁচশত টাকা এবং প্রশিক্ষণ বাবদ দৈনিক তিন’শ টাকা করে প্রদান করা হয়েছে।
শুধু প্রশিক্ষন নয় এসব পরিবারকে পুর্নবাসনের কাজ শুরু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। লালুয়ার উত্তর চান্দুপাড়া, দক্ষিন চান্দুপাড়া, লেমুপাড়া, ধুলাসর এবং লোন্দা মৌজায় সাড়ে তিন হাজার পরিবারকে পুর্নবাসনের জন্য পাকা ঘর বরাদ্ধ দেয়া হচ্ছে। ৭১৭ ফুট এ টাইপের ১১৬৫টি এবং ৬৩২ ফুটের বি টাইপের ২২৫৮টি পাকা বাড়ি দেয়া হচ্ছে তাদের। এছাড়াও ২৫টি পুকুর, ৮টি মসজিদ, ৬টি বিদ্যালয় কাম কমিউনিটি ক্লিনিক, ৭টি বাজার র্নিমাণ করে দেয়া হেব। ১৪টি প্যাকেজের মাধ্যমে এসব কাজের বাস্তবায়ন ইতেমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
বন্দরের যুগ্ম পরিচালক (এস্টেট) খন্দকার নুরুল হক বলেন, দ্বিতীয় ধাপে তিনটি ট্রেডে তিন মাস মেয়াদী বেসিক কম্পিউটার, মটর ড্রাইভিং, রাজমিস্ত্রী। এক মাস মেয়াদী মৎস্য চাষ, মোবাইল সার্ভিসিং, ব্রয়লার ও ককরেল পালন এবং তিন সপ্তাহব্যাপী বসত বাড়িতে সবজি ও ফলের চাষ, হাস মুরগী পালন ও হাস মুরগীর খাবার তৈরি, পারিবারিক গাভী পালন প্রশিক্ষন দেয়া হবে। এ ৯টি ট্রেডে মোট সাড়ে চার’শ নারী-পুরুষকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের অনমোদন পাওয়া গেলে ডিসেম্বর এর তৃতীয় সপ্তাহেই এ প্রশিক্ষণ শুরু করা হবে। জুন ২০১৯ সালে তৃতীয় ধাপের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরো সাড়ে চার’শ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
বন্দরের প্রকৌশল ও উন্নয়ন সদস্য ক্যাপপ্টে মুনিরুজ্জামান বলেন, পায়রা বন্দরে এখন যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে সেখানে ব্যায় হয়েছে মাত্র ছয়’শ কোটি টাকা। জুন ২০১৯ সালে চালু হচ্ছে শেখ হাসিনা ফোর লেন সড়ক। দশ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ খুব শীগ্রই শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে র্নিমিত হচ্ছে প্রথম র্টামিনাল। ভারত সরকারের সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা অর্থায়নে র্নিমিত হচ্ছে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল। আাড়াই হাজার কোটি ব্যায়ে কোল টার্মিনাল র্নিমাণে এ খাতে মোট ব্যয় হবে বাইশ হাজার কোটি টাকা।
এসময় তিনি আরো বলেন, জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থদের সাধারণত ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব ক্ষতিগ্রস্থদের জীবনমান উন্নয়নে প্রশিক্ষণসহ আবাসনের ব্যবস্থা করেছে। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীরা জীবনমান উন্নয়নে এ জ্ঞান কাজে লাগাবে। ভবিষ্যতে এ এলাকায় যে কর্মসংস্থানে সৃস্টি হবে সেখানে নিজেরদের সম্পৃক্ত করবে।
বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ১২টি কম্পোনেটের মাধ্যমে পায়রা বন্দরের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে বিমান বন্দর, বিমেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ভাঙন থেকে পায়রা পর্যন্ত ১৮০ কি.মি রেল লাইন স্থাপন, শিপ ইয়ার্ড ও শিপ মেরামত কারখানা, টুরিজম ফ্যাসিলিটি নির্মাণ, পেট্রলিয়াম রিফাইনারি প্লান্ট স্থাপন, এলএনজি টার্মিনাল র্নিমাণ করা হচ্ছে।
এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হবে। শিক্ষিত বেকার যুব নারী-পুরুষের ব্যাপক কর্মসংস্থানে সৃষ্টি হবে। ব্যবসা বানিজ্যে অভূতপূর্ব বিল্পব সৃস্টি হবে। কুসংস্কার দুর হবে। বৃদ্ধি পাবে শিক্ষার হার। আর এসব উন্নয়ন এ অঞ্চলের মানুষকে নিয়ে করা হবে।