Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

'খাসিয়া পান' বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে

হৃদয় দেবনাথ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০১৮, ০৫:৪২ PM
আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮, ০৫:৪৩ PM

bdmorning Image Preview


সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও সুনামগঞ্জের পাহাড়ি এলাকায় বন-পাহাড়ে খাসিয়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস। খাসিয়া আদিবাসীদের পান চাষ এ দেশের সমতল অঞ্চলের পান চাষের চেয়ে ভিন্ন। খাসিয়া আদিবাসীরা সিলেট অঞ্চলের বন-পাহাড় এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে আদিপদ্ধতিতে প্রাকৃতিক বনগাছে বহু যুগ থেকে পান চাষাবাদ করে আসছে।

পানকে খাসিয়া ভাষায় 'পাথা' বলে থাকে। আর এ পান শুধু খাসিয়া আদিবাসীরাই চাষাবাদ করছে বলে সবার কাছে খাসিয়া পান বলে পরিচিত। খাসিয়া পুরুষরা পান জুমে লতানো পানগাছের পরিচর্যা এবং বছরে একবার গাছের ডালপালা ও পাতা ছেঁটে দেয় এবং ছাঁটানো ডালপালা ও পাতা পানগাছের গোড়ায় দিয়ে থাকে।

ডালপালা ও পাতা পচে প্রাকৃতিক জৈব সার তৈরি হয়। বর্তমান যুগে কেউ কেউ বাজার থেকে জৈব সার ক্রয় করে নিজেদের পান জুমে বেশি ফলানোর আশায় দিয়ে থাকে। খাসিয়া পুরুষরা লু-উ নামে (অথ মই) এক ধরনের বাঁশের মই দিয়ে পান তুলে থাকে। পান তোলার সময় এরা সঙ্গে পান সংগ্রহ করার জন্য ঝুড়ি রাখে, ঝুড়ির ভেতরে পান তুলে রাখে এবং খাসিয়া পুরুষরা পান সংগ্রহ করে জুম থেকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসে। আর খাসিয়া নারীরা ঘরে বসে পান গুছিয়ে বিক্রয় করে থাকে।

খাসিয়া আদিবাসীরা মাতৃতান্ত্রিক পরিবার। তাই পরিবারে নারীদের অধিকারই বেশি। ১২টি পান পাতায় এক গুছি আর ১২টি গুছিতে এক কান্তা এবং ১২ কান্তায় এক কুড়ি। তাদের নিজেদের মধ্যে নারী শ্রমিকও আছে, তারা শুধু নিজের পুঞ্জিতে পান গুছি করে। এক কুড়ি গুছি করলে পারিশ্রমিক বাবদ ৩৫-৪০ টাকা পেয়ে থাকে।

লাউয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জির গ্রামপ্রধান ফিলাপথমী বলেন, প্রায় ২৫-৩০ বছর আগে খাসিয়া আদিবাসী নারীরাই এ এলাকার বাজারে নিয়ে নিজেদের পান বিক্রয় করত। বর্তমানে স্থানীয় বাঙালি ক্রেতারা খাসিয়া পুঞ্জিগুলোর বাড়িতে বাড়িতে এসে পান ক্রয় করে নারীদের কাছ থেকে। খাসিয়া পানপাতায় সমতল অঞ্চলের পানের চেয়ে ঝাঁজ বেশি। খাসিয়া আদিবাসীরা পান জুমে কাজের সময় শরীরে ছোটখাটো ঘা হলে রক্ত বন্ধ করার জন্য বুনো ওষুধ হিসেবে পানপাতা ব্যবহার করে।

বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের জন্য পানের উৎপাদন বেশি হওয়ার ফলে পানের মূল্যও কম হয়ে থাকে। কুড়িপ্রতি ৪০০-৫৫০ টাকা আর শুকনো মৌসুমে পানের উৎপাদন কম হওয়ায় কুড়িপ্রতি ২৫০০-৩০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর পানের মূল্য অনেক কম। খাসিয়া পান বর্তমানে বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে এবং এ দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

Bootstrap Image Preview