Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

শেখ হাসিনার কাছে দলীয় নেতাদের যত অভিযোগ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০১৮, ১০:০২ AM
আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮, ১০:০২ AM

bdmorning Image Preview


মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলের নেতারা গণভবনে ভিড় জমান। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একান্তে পেয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রাণ খুলে কথা বললেন। কেউ তুলে ধরলেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বহুবিধ অভিযোগ। কেউ শোনালেন রাজনীতি করতে গিয়ে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হওয়ার বর্ণনা। সঙ্গে সঙ্গে দলীয় সভাপতির উত্তরও মিলল।

বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের ব্যাংকোয়েট হলে ক্ষমতাসীন দলের দুই শতাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীকে ডাকেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি তাঁদের মনোবেদনার নানা কথা শোনেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোযোগ দিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কথা শোনেন এবং বেশ কিছু পাল্টা প্রশ্নও করেন। অনানুষ্ঠানিক এ সৌজন্য সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী তাদের নানা পরামর্শ, নির্দেশনার সঙ্গে দলের সিদ্ধান্ত মানার জন্য কঠোর বার্তাও দেন। প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পাওয়া কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বুধবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠান থেকে ফিরে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত এসব নেতার সঙ্গে দেখা করেন শেখ হাসিনা। রাত ৮টা থেকে রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত আলোচনা চলে। প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে নেতারা বিভিন্ন প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করতে থাকেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী অনেককে সতর্কতার সঙ্গে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন।

প্রধানমন্ত্রীও পাল্টা প্রশ্ন করে অনেক বিষয়ে তাদের কাছ থেকে জানতে চান। বক্তৃতায় কয়েকজন নেতা মহাজোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধেও কথা বলেন এবং দলীয় নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানান। এর জবাবে দল ও জোট প্রার্থীদের পক্ষে একজোট হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গেলে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্রগুলো জানায়, উপস্থিত নেতাদের মধ্য থেকে অর্ধশতাধিক নেতা বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পান। কথা বলার সময় কেউ কেউ কেঁদে ফেললে আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ মহাজোটের সমীকরণে শরিকদের আসন ছেড়ে দেওয়ায় নিজেদের বঞ্চিত ও নির্যাতিত হওয়ার কথা তুলে ধরেন। কেউ কেউ নিজ দলীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অন্যায় ও জুলুম-নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ধরেন।

বক্তব্য দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন ঢাকা মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কোহিনূর বেগম। তিনি বলেন, ‘আমাদের আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একদিকে এলাকায় উন্নয়ন হয়নি, অন্যদিকে আমরা বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমরা চাই এই আসনে নৌকার প্রার্থী দেওয়া হোক’।

কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রুহুল আমিন অভিযোগ এনে বলেন, ‘ঢাকা-৪ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা আমাদের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন। আমাদের নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা চাই এখানে দলীয় প্রার্থী দেওয়া হোক।’ এ সময়ে শেখ হাসিনা জানতে চান, ‘ওখানে বিএনপির কে নির্বাচন করবে?’ উত্তরে একজন বলেন, ‘সালাউদ্দিন।’ আরেকজন জানান, ২০০৮-এর নির্বাচনে সানজিদা খানম ৪৮ হাজারের বেশি ভোটে বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করেছিলেন।

চাঁদপুরের একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী দলীয় সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, চাঁদপুরের চরে নৌকা আটকে গেছে। তখন শেখ হাসিনা জানতে চান, ‘কেন?’ উত্তরে ওই মনোনয়নপ্রত্যাশী বলেন, এমপির দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে। উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দীপু মনির বিরুদ্ধে তো দুর্নীতির অভিযোগ নাই।’

নীলফামারী-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী সরদার ফারহানা আখতার সুমী বলেন, ‘নেত্রী, আপনি আমাদের যেভাবে তৈরি করেছেন তাতে আমরা এখন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত। আমার এলাকায় এমনভাবে কাজ করেছি যে এখানে বিএনপির চেয়ারপারসন দাঁড়ালেও আমি জয়লাভ করব।’ তরুণ নেত্রীর এমন বক্তব্যে শেখ হাসিনা হাততালি দেন। অন্যরাও হাততালি দেয়। শেখ হাসিনা জানতে চান, ‘তোমার নাম কী?’ উত্তরে সুমী তাঁর নাম বলার পর শেখ হাসিনা উপস্থিত নেতাদের বলেন, ‘দেখছ কী আত্মবিশ্বাস!’

সূত্রগুলো জানায়, নড়াইলের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তিকে মনোনয়ন না দিতে স্থানীয় একজন নেতা বক্তব্য দেন। তবে অন্য একজন নেতা মুক্তির পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। নরসিংদী-৩ আসনের সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লার বিরুদ্ধেও বক্তব্য দেন একজন নেতা। এ ছাড়া পাবনা, বরিশাল, বরগুনা, নরসিংদী ও ঢাকার একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী তাঁদের বক্তব্যে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরেন।

সূত্রগুলো জানায়, দীর্ঘদিন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে আলাপকালে শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে জয়লাভের ওপর গুরুত্ব দেন। শেখ হাসিনা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কড়া নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘তোমরা যদি গ্রুপিং কর, তাহলে তোমাদের আমি দেখব না। সবাই একসঙ্গে কাজ করে নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে। নৌকা জিতলে আমরা সরকার গঠন করব। তখন তোমাদের আমি দেখতে পারব। দল ক্ষমতায় আনাই এখন তোমাদের মূল টার্গেট।’

এদিকে গতকালও গণভবনে সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ সময় অনেক নেতা নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। তবে অনেকে দলের অন্য নেতাদের নামে বিষোদগার শুরু করায় শেখ হাসিনা বিরক্ত হয়ে একপর্যায়ে প্রত্যেক জেলা থেকে একজনকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেন। খুলনা বিভাগের এক নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন সময় সাক্ষাৎ করতে চেয়ে পাননি বলে জানান। এ কথা শুনে শেখ হাসিনা তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দেন এবং পরে ওই নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেন।

সূত্র জানায়, সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী গোলাম সরোয়ার কবিরও। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, নেত্রী মুন্সীগঞ্জের-১ আসনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনে অনেকেই মনোনয়নপ্রত্যাশী। সবাই এমপি হতে চান। তবে আমি চাই আপনি আগামীতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হোন। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, তুমি আমাকে প্রধানমন্ত্রী চাও, আবার জোটের বিপক্ষে কথা বল? এটা কিন্তু চলবে না। দলকে ক্ষমতায় আনতে হবে। জামায়াত-বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না। দল ক্ষমতায় এলে সবাইকে মূল্যায়ন করা হবে। আমি যাকেই প্রার্থী করব, তার পক্ষেই কাজ করতে হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন চাঁদপুর-৩ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী রেদওয়ান খান বোরহান। তিনি বলেন, আপা চাঁদপুর-৩ আসনের নৌকা চরে ঠেকে আছে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় জানতে চান, কেন এবং কোন চরে নৌকা ঠেকে আছে। জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান এমপির নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের কারণে ‘হাইমচরে’ নৌকা ঠেকে আছে। তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে পাস করতে পারবে না। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কথা ঠিকমতো বলবা।

দীপু মনির বিরুদ্ধে কি অভিযোগ আছে, সেটা জানি না। কেউ বলতে পারবে না তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। নরসিংদী-৩ আসনে সাবেক এমপি জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন বর্তমান এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে তো দলের মনোনয়ন দিলাম। পাস করতে পারনি। আবার কথা কও? তখন মনোনয়ন দিলাম ফেল করলা কেন?

জবাবে মোহন বলেন, বিএনপি-জামায়াত সিরাজুল ইসলাম মোল্লাকে সহযোগিতা করছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার তোমার সঙ্গে থাকার পরও জিততে পারনি? আবার মনোনয়ন চাও? এ আসন থেকে তোমরা কয়জন মনোনয়ন চাও?

জবাবে মোহন বলেন, আমরা ৬ জন আছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমরা সবাই মিলে একজনের নাম দাও। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তারা কারও নাম বলতে পারেননি।

এছাড়া হাতিয়ার মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে কথা বলেন উপজেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, গত ৫ বছরে মোহাম্মদ আলীর মদদে ১৯ জন মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

বরগুনা সদর আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন জেলার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির। নড়াইলের এমপি কবিরুল হক মুক্তির পক্ষে বিপক্ষে আরেকজন বক্তৃতা করেন। কালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ইমদাদুল হক মোল্লা বলেন, মুক্তির হাত থেকে মুক্তি চান কালিয়াবাসী।

সূত্রগুলো জানায়, দীর্ঘদিন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে আলাপকালে শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে জয়লাভের ওপর গুরুত্ব দেন। শেখ হাসিনা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কড়া নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘তোমরা যদি গ্রুপিং কর, তাহলে তোমাদের আমি দেখব না। সবাই একসঙ্গে কাজ করে নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে। নৌকা জিতলে আমরা সরকার গঠন করব। তখন তোমাদের আমি দেখতে পারব। দল ক্ষমতায় আনাই এখন তোমাদের মূল টার্গেট।’

এদিকে গতকালও গণভবনে সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ সময় অনেক নেতা নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। তবে অনেকে দলের অন্য নেতাদের নামে বিষোদগার শুরু করায় শেখ হাসিনা বিরক্ত হয়ে একপর্যায়ে প্রত্যেক জেলা থেকে একজনকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেন। খুলনা বিভাগের এক নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন সময় সাক্ষাত্ করতে চেয়ে পাননি বলে জানান। এ কথা শুনে শেখ হাসিনা তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দেন এবং পরে ওই নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেন।

Bootstrap Image Preview