ভিডিও কলে আমেরিকা প্রবাসী স্ত্রী পান্নাকে লাইভে রেখে স্বামী আল মনসুর মিশুর আত্মহত্যার ঘটনায় সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কি এমন কথা বলেছিলেন স্ত্রী যার ফলে মিশু পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। এমন প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। নিহতের হাতে থাকা মোবাইল ফোনের পেটার্ন লক খোললেই অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। তাই ফোনটি থানা পুলিশ সিআইডিতে প্রেরণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) গভীর রাতে ফেঞ্চুগঞ্জের হৃদয় বিদারক এই ঘটনায় সর্বত্র শোক বইছে।
আল মনসুর মিশুর আত্মহত্যার নেপথ্যে কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, পরিবারের বড় ছেলে আল মনসুর মিশু গত বছর কাতার থেকে দেশে ফিরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে আপন খালার ভাশুরের মেয়ে ফেঞ্চুগঞ্জের নারায়ণপুর গ্রামের জয়দু মিয়ার মেয়ে পান্নার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের এক মাস পরই পান্না কাতার চলে যায়।
নিহতের ছোট ভাই হুমায়ুন আহমেদ জানান, ঘটনার দিন তিনি তার মা'কে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়াতে ছিলেন। কিন্তু গত কিছুদিন থেকেই তাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল। পান্নার পরিবার তাদের কাছ থেকে বিয়ের মোহরানা বাবদ নগদ ১০ লাখ টাকা নেওয়ার পর গত ২ মাস আগে স্বর্ণ বাবদ আরো ৫ লাখ টাকা নিয়েছে।
তিনি আরও জানান, এসব ব্যাপারে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য প্রায়ই দেখা দিত। কিছুদিন আগে পান্না মিশুকে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিলে মিশু তখন মরে যাবে বলে জানিয়েছিল।
পারিবারিক অপর একটি সূত্র পান্নার ঘনিষ্ঠজনের বরাত দিয়ে জানান, ঘটনার পর পর পান্না তাকে জানায়, আমি ভাবতে পারিনি মিশু এভাবে আমাকে ইমোতে লাইভে রেখে আত্মহত্যা করবে।
ওই সূত্রটি আরও জানায়, ঘটনার দিন আল মনসুর মিশু আত্মহত্যার আগে অজু করে পান্নাকে বলে আমি চলে যাচ্ছি, তুমি ভালো থেকো। আর আত্মহত্যার পুরো চিত্রটি পান্না সরাসরি দেখেন।
ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বাশার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান জানান, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোররাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে। লাশের সুরত হালের সঙ্গে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে। ওই ফোনটির লক খুলতে এবং তাতে সংরক্ষিত সব রেকর্ড যথাযথ পাওয়ার জন্য মোবাইল ফোন সিআইডিতে প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, মোবাইলে ফোনে মিশু আত্মহত্যার পেছনে যদি ওই মেয়েটি কিংবা কারো উস্কানি বা প্ররোচনার প্রমাণ পাওয়া যায় তবে তা ওই ঘটনায় থানায় দায়েরকৃত ইউডি মামলাটি মার্ডার কিংবা অন্যান্য ধারার মামলায় রূপান্তরিত করতে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) রাত তিনটায় আল মনসুর মিশু (২৬) নামে এক যুবক আত্মহত্যা করে। সে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার উত্তর ফরিদপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের পুত্র।