Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

জোবাইদাও নিচ্ছেন না বিএনপির দায়িত্ব

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০৬:২৯ PM
আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০৬:২৯ PM

bdmorning Image Preview


ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনের সময়। চারিদিকে নির্বাচনের ঘ্রাণ। সামনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশের শীর্ষ দলগুলো জোট বানাতে ব্যস্ত। আ.লীগ এরই মধ্যে প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করেছে। বিএনপি প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই করছে।

এ দিকে বৃহৎ দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি রয়েছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দীর্ঘদিন যাবৎ লন্ডনেই আবাস গড়েছেন। দুর্নীতি মামলায় সাজা হয়েছে তারও।

এমন পরিস্থিতিতে বেশ বিপদে পড়েছে বিএনপি। পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে কে হাল ধরবেন বিএনপির? তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান দেশে ফিরে বিএনপির হাল ধরবেন এমন খবর গণমাধ্যমে আসে বেশ কিছুদিন আগে। এমন খবরে আশান্বিত হয়েছিলেন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তবে তাদের সেই আশা হয়তো পূরণ হচ্ছে না।

লন্ডন বিএনপির এক শীর্ষ নেতা জানায়, জোবাইদা রহমান শিগগিরই দেশে ফিরছেন না। এমনকি আগামী নির্বাচনেও প্রার্থী হচ্ছেন না তিনি। একই সুর শোনা গিয়েছে লন্ডনে বসবাসরত জোবাইদার একাধিক স্বজনের মুখেও।

জানা গেছে, ডা. জোবাইদা রহমান ২০০১ সালের নির্বাচনে ঢাকার ঠিকানায় তালিকাভুক্ত ভোটার ছিলেন। এক-এগারোর পর পরিবারসহ তিনি লন্ডনে আসেন। এরপর আর দেশে ফেরেননি তিনি।

১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত টানা চারবার বগুড়া-৬ (সদর) আসনটি ছিল বেগম খালেদা জিয়ার দখলে। বলা ছলে আসনটি জিয়া পরিবারের জন্য সংরক্ষিত একটি আসন। এই আসন থেকে এমপি হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া।

এবার প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। খালেদা জিয়া জেলে। ছেলে তারেক রহমানও সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তাই তারা যদি অনুপস্থিত থাকে, এই আসনে তারেকের স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে চায় বগুড়াবাসী।

বগুড়ার এই আসনটির বিষয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতে এই আসন থেকে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান কিংবা জিয়া পরিবারের উত্তরসূরিকেই চান তারা। যদিও এরই মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য মনোনয়ন ফরম কেনার মধ্য দিয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে বিএনপি। এর মধ্যে দুটি হলো বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসন।

অতীতের দিকে তাকালে দেখা যায়- বগুড়ার এই দুই আসন থেকে জয়লাভের পর বগুড়া-৬ আসন নিজের জন্য রেখে বগুড়া-৭ আসনটি ছেড়ে দিতেন বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে উপ-নির্বাচন করে দলের কোনো এক সিনিয়র নেতাকে দেয়া হতো। তবে এবার বেগম জিয়া আদৌ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি-না সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। এ কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, বেগম জিয়া না হলে জোবাইদা রহমান কিংবা জিয়া পরিবারের উত্তরসূরিকেই চান তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বগুড়ার একাধিক বিএনপির নেতা বলেছেন, জিয়া পরিবার ছাড়াও বগুড়ার এই দুটি আসনে অনেক যোগ্য নেতা রয়েছেন। যারা ধানের শীষে নির্বাচন করে জয়ী হওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তবে তারা চান জিয়া পরিবারের উত্তরসূরিদের কেউ এখানে নির্বাচন করে ঐতিহ্য ধরে রাখুক। কারণ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি বগুড়া।

এই আসনে বিএনপির প্রার্থী লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। ফলে বিএনপির নেতাকর্মীদের মতো সাধারণ মানুষের দাবি, এখানে জিয়া পরিবারের কেউ একজন নির্বাচন করুক। সেক্ষেত্রে বেগম জিয়ার বিকল্প হতে পারেন জোবাইদা রহমান।

বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় জেলার শীর্ষ নেতারা বিষয়টি জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন, কে হচ্ছেন এই আসনের প্রার্থী। বেগম জিয়া যদি নির্বাচন করতে না পারেন সেক্ষেত্রে জোবাইদা রহমানকে এগিয়ে রাখছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেল বলেন, আমরা এখনও নিশ্চিত নই, কে প্রার্থী হচ্ছেন। তবে আমরা চাই খালেদা জিয়া অথবা জিয়া পরিবারের উত্তরসূরি এই দুই আসন থেকে নির্বাচন করুক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, আইনি জটিলতায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কিংবা অন্য কোনো কারণে তার পরিবারের সদস্যদের কেউ যদি নির্বাচনে অংশ না নিতে পারেন এক্ষেত্রে স্থানীয় নেতাদের মধ্য থেকে প্রার্থী বেছে নেয়া ছাড়া বিকল্প থাকবে না। ফলে এখন থেকে পুরো পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে হচ্ছে স্থানীয় নেতাদের। তবে খালেদা জিয়ার মনোনয়নের পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান। খালেদার বিকল্প হিসেবে আসতে পারেন তারাও।

প্রসঙ্গত, ডা. জোবাইদা সাবেক মন্ত্রী, প্রয়াত রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের কন্যা। তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়। লন্ডনে জোবাইদা রহমানের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সম্পৃক্ত একটি সূত্র জানায়, জোবাইদার বাবা মাহবুব আলী খান জাগদলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। ১৯৮২ সালে দেশে সামরিক আইন জারিকালে অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হন এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৮২ সালের ১০ জুলাই থেকে ১৯৮৪ সালের ১ জুন পর্যন্ত তিনি যোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এরশাদ সরকারের কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা ডা. জোবাইদা ১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেন। এক-এগারোর সময়ে তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে এমডি (কার্ডিওলোজি) কোর্সের তৃতীয় পর্বে অধ্যয়নরত অবস্থায় অসুস্থ স্বামীর উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশে ছুটি নিয়ে যুক্তরাজ্যে আসেন।

Bootstrap Image Preview