Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

এখনও দ্রব্যে বিনিময়ের মাধ্যমে লেনদেন হয় যে গ্রামে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৩১ AM
আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৩১ AM

bdmorning Image Preview


একসময় পৃথিবীতে যখন টাকা-পয়সা ছিলনা, তখন বিনিময়ের মাধ্যমে লেনদেন হত। অর্থাৎ পণ্যের বিনিময়ে লেনদেন। পন্য বিনিময় প্রথা বিলুপ্ত হলেও এখনও ভারতের একটি গ্রামে পণ্যের বিনিময়ে লেনদেন হয়।

ভারতের ঝাড়গ্রাম জেলার বাঁশপাহাড়ি অঞ্চলের ওড়লি-র মতো প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামগুলিতে এখনও টাকা ছাড়াই লেনদেন হয়।

এখানে মানুষের হাতে সবসময় টাকা থাকে না। তখন কেউ মুরগির বিনিময়ে বাসন অথবা জামাকাপড় কেনেন। কেউ আবার লাউ, কফির মতো খেতের সবজি দিয়ে সাবান বা প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করেন।

ওই অঞ্চলের মনোহারি বিক্রেতা শেখ আলতাফ বলেন, 'মুর্শিদাবাদের অনেকে এই এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। সাইকেলে মনোহারি জিনিসপত্র গ্রামে গ্রামে ফেরি করেন। বাসিন্দাদের কাছে সব সময় বেশি টাকা থাকে না। তখন ধান, চাল, সর্ষে, মুরগি, সবজির বিনিময়ে জিনিসপত্র দিতে হয়। খদ্দেরকে তো ফেরানো যায় না।'

মাথায় সবজির ঝুড়ি নিয়ে ঝাড়গ্রামের হাটের পথে যাচ্ছিলেন সাপধরা গ্রামের বিমলা মাহাতো। তার গ্রাম থেকে ঝাড়গ্রাম শহরের দূরত্ব দশ কিলোমিটারের মতো। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে? এমন প্রশ্ন করতেই অবাক চোখে ষাটোর্ধ্ব বিমলা বললেন, “একশো দিনের কাজে পোষায় না। মজুরি পেতে দেরি হয়। তাই চাষিদের কাছ থেকে ধারে সবজি কিনে বাজারে বিক্রি করে দু’টো পয়সা লাভ করি। ওসব ব্যাংক-ট্যাংক বুঝি না।'

এদিকে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের দাবি, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে অন্তত একটি করে ব্যাংকের শাখা চালু হয়েছে। বেলপাহাড়ির শিমূলপাল অঞ্চলের পাহাড় জঙ্গল ঘেরা মাকড়ভুলা গ্রাম থেকে নিকটবর্তী একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখার দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। বহু ক্ষেত্রে ব্যাংকের শাখা থাকলে অভ্যাস বদলায়নি এলাকাবাসীর। তাই তারা ব্যাংকবিমূখ।

মাকড়ভুলার সুরেন্দ্র সিংহ এক সময় পাথর ভাঙার কাজ করতেন। এখন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় পাথর খনন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জঙ্গলের ডালপাতা সংগ্রহ করে হাটে বিক্রি করে দিনানিপাত করেন তিনি। সুরেন্দ্রর কথায়, “ইনকামের বাড়তি টাকা পয়সা এলাকার মানুষগুলি ঘরে বাঁশের কোটরে রাখেন। যাঁরা একটু সম্পন্ন তাঁরা ব্যাংকে টাকা রাখেন।'

এদিকে ব্যাংকের শাখা থাক বা না থাক। রাজনীতি আছে তার জায়গাতেই। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদা বলেন, “কেন্দ্রের নোট বাতিলের কোনও সুফলই মানুষ পাননি। আর কিসের ডিজিট্যাল ইন্ডিয়া? জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের এই দুর্ভোগের জন্য দায়ী কেন্দ্রের মিথ্যা প্রচার ও ভুল সিদ্ধান্ত।'

বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, 'কেন্দ্রের সব প্রকল্প রাজ্যে এসে ধাক্কা খেয়েছে। রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার জন্য ডিজিট্যাল ইন্ডিয়ার সুফল জঙ্গলমহলবাসী পাচ্ছেন না।'

ভুয়া অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির প্রতারণার জেরে জঙ্গলমহলের একাংশে এখন ফের মাথা চাড়া দিয়েছে মহাজনী কারবার। 

গ্রামে না হয় অনেক সমস্যা। কিন্তু কী অবস্থা শহরের? ঝাড়গ্রাম শহরের একটি প্রসিদ্ধ বই দোকানের মালিক চন্দন দত্ত বলেন, 'আমার দোকানে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে দাম মেটানোর ব্যবস্থা আছে। কিন্তু মাসে এক-দু’জনের বেশি কেউ কার্ডে দাম মেটান না। সবই নগদে কারবার হয়।'

Bootstrap Image Preview