Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রবৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বৈষম্য

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০১:০৫ PM
আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০১:০৫ PM

bdmorning Image Preview


বাংলাদেশে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের তুলনায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার কম। প্রতি বছর দেশে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। কিন্তু সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আয় বৈষম্যও। ফলে প্রবৃদ্ধির সুফল সমানভাবে মিলছে না।

বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ধনীর আয় ২০০৫ সালে ছিল ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১০ সালে এসে সেটি কিছুটা কমে গিয়ে ৩৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ হলেও ২০১৬ সালে এসে আবারও ৩৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে বিপরীত চিত্র সর্বনিম্ন আয়ের ১০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে।

তাদের আয় ২০০৫ সালে ছিল ২ শতাংশ। সেটি ২০১০ সালেও একই ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে এসে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ১ শতাংশে। এছাড়া প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সেই তুলনায় কর্মসংস্থান হচ্ছে না। বলা চলে কর্মসংস্থান এক জায়গায় স্থির রয়েছে।

গতকাল বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) দু’দিনব্যাপী গবেষণা সম্মেলনের প্রথম দিন ‘কোয়ালিটি গ্রোথ ইন বাংলাদেশ : সাম নিউ এভিডেন্স’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন ড. কাজী ইকবাল ও নাহিদ ফেরদৌস পাবন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অর্জিত প্রবৃদ্ধি দেশের দারিদ্র্য নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। এর কারণ ব্যাপক আয় বৈষম্য ও পর্যাপ্ত সম্পদের অভাব; আবার যতটুকু সম্পদ আছে সেখান থেকে প্রাপ্তি কম, গরিবদের ব্যাংক ব্যবস্থায় কম অন্তর্ভুক্তি এবং নীতি-সহায়তা ধনীদের পক্ষে কাজ করায় এমনটি হচ্ছে।

গতকাল রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। বিআইডিএসের মহাপরিচালক কেএএস মুর্শিদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বেগম কাজল ইসলাম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের তুলনায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার কম। এছাড়া কর্মস্থানের হার যেটি আছে সেটি ধরে রাখতে হলে প্রতি বছর ১১ লাখ লোকের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে।

প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির গুণগত মান বেড়েছে। কিন্তু সেটি খুবই কম। কারণ বৈষম্য বেড়েছে, দারিদ্র্য সেই হারে কমেনি, কর্মসংস্থানও বাড়েনি।

দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক খাত ও রেমিটেন্স ভূমিকা হয়তো রেখেছে কিন্তু সেখানে সরকারের ভূমিকা ওইভাবে দৃশ্যমান নয়। দারিদ্র্য নিরসনে সরকার স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তায় তুলনামূলক বিনিয়োগ বাড়ায়নি।

এছাড়া সম্মেলনে ‘উইমেন এন্টারপ্রেনর ইন এসএমই : বাংলাদেশ প্রসপেকটিভ’ শীর্ষক অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে মহিলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০১ সালে এ হার ছিল ২ দশমিক ৮০ শতাংশ। সেটি বেড়ে ২০১৩ সালে হয়েছে ৭ দশমিক ২১ শতাংশ। তাছাড়া আর্থিক ইউনিটগুলোর সামষ্টিক ব্যবস্থায়ও এসেছে পরিবর্তন।

এক্ষেত্রে মহিলা প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৮৫ শতাংশ মহিলা কর্মী কাজ করছে। এছাড়া মহিলা প্রধান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ট্রেড লাইসেন্স ২০০৯ সালে ছিল ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ, সেটি বেড়ে ২০১৭ সালে হয়েছে ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া টিআইএন ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৬ দশমিক ৪ শতাংশ। ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ। বড় শোরুমের সংখ্যা ৫০ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

‘ক্লাস্টার্ড ভিএস. ইন ক্লাস্টার্ড এসএমইস : প্রডাক্টিভিটি ডিফারেন্সেস অ্যান্ড মার্শালিয়ান এক্সটার্নালিটিজ’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বেও নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মোট জিডিপির ৬০ শতাংশ আসে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) থেকে। এছাড়া মোট কর্মসংস্থানের ৭০ শতাংশ আসে এই খাত থেকেই। ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশে মোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৫০ দশমিক ৯ শতাংশই এসএমই খাতের। মোট শিল্প কর্মসংস্থানের ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ আসে এসএমই খাত থেকে। পাশাপাশি অর্থনীতিতে যে পরিমাণ মূল্য সংযোজন হয় তার ৪৭ শতাংশ আসে এসএমই খাত থেকে।

Bootstrap Image Preview