Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পূর্ব শক্রতার জেরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় লাল মিয়াকে

সোহেল আহমেদ খান, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ 
প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০১৮, ০২:৪০ PM
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮, ০২:৪০ PM

bdmorning Image Preview


সড়কে ট্রাক চাপায় লাল মিয়া (৪০) মারা যায়নি। তাকে পূর্ব শক্রতার জেরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। ফিল্মি কায়দায় প্রথমে ট্রাকটি হত্যার উদ্দেশ্যে প্রথমে লাল মিয়ার মোটরসাইকেল ধাক্কা দেয়। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা দেহের মাথার উপর দিয়ে পিছন দিকে চালানো হয় ট্রাক। মৃত্যু নিশ্চিত করে ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যায় নিহতের আপন চাচাত ভাই সবুজ।

শনিবার (১০ নভেম্বর) সকালে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন, নিহত লাল মিয়ার পরিবার। 

এ ব্যাপারে নিহত লাল মিয়ার স্ত্রী ঝুমা আক্তার সবুজ ও তার গাড়ির হেলপার রুবেলের নামে ৩০২/৩৪ ধারায় কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা  (নং-৮(১১)১৮) দায়ের করেছেন। সেই মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ সবুজকে আটক করে তার বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। 

নিহত লাল মিয়া কালীগঞ্জ পৌর এলাকার চৈতারপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল বারেকের ছেলে। তিনি স্থানীয় একটি ইট ভাটায় ঠিকাদারীতে ইট ভাঙ্গার (সিপ্টিন) কাজ করতো। অন্যদিকে অভিযুক্ত সবুজ একই গ্রামের মো. আফজাল হোসেনের ছেলে। সে স্থানীয় সেভেন রিং সিমেন্ট কারখানার ট্রাকের চালক ছিল। ট্রাক ও হত্যার সহযোগী রুবেল ওই গ্রামেরই ওয়াছ করণীর  ছেলে। 

জানা গেছে, গত ৫ নভেম্বর উপজেলার দুপুরে কালীগঞ্জ পৌরসভার বালীগাঁও চৌধুরী বাড়ি সংলগ্ন নাভানা প্লাস্টিক পাইপ কোম্পানির পশ্চিম পাশে টঙ্গী-কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল বাইপাস সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে স্থানীয় সেভেন রিং সিমেন্ট কারখানার খালি একটি ট্রাকের (ঢাকা-মেট্রো-উ-১১-১৯৬৭) সাথে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে লাল মিয়ার মৃত্যু হয়। প্রাথমিকভাবে এটি সড়ক দুর্ঘটনা বলে স্থানীয়ভাবে জানাজানি হলেও পরিবারের দাবির মুখে থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। আর তদন্তে বেড়িয়ে আসে এটি নিছক একটি সড়ক দুর্ঘটনা নয়। এটি ছিল দুই পরিবারের মাঝে জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও পূর্ব শক্রতার জেরে পরিকল্পিত একটি হত্যা কাহিনী। 

ওইদিন দুপুরে নিহতের বাড়িতে গেলে দেখা যায় শুনসান পরিবেশ। স্ত্রী অঝোরে বিলাপ পেরে স্বামী হত্যার বিচার চাইছেন। আর খুনি সবুজের ফাঁসির দাবি করছেন। মা চাঁনবানু সন্তান হারানোর শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। উপরের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে আল্লাহর কাছে বিচার চাইছেন আর দু'চোখ বেয়ে পড়ছে অশ্রু। দুই সন্তান ছেলে জাহিদ (১৫) ও মেয়ে উস্মিতা (১৩) বাবা হারানোর শোকে মুর্তি হয়ে আছে। 

মামলার বাদী ঝুমা আক্তার বলেন, তার স্বামী লাল মিয়া বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় ইট ভাটায় মেশিনে ইট ভাঙ্গানোর ব্যবসা করতো। সবুজের সাথে তাদের পরিবারের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরোধ চলছিল। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে চলতি বছরের শুরুর দিকে সবুজ ভাড়া করা সন্ত্রাসী নিয়ে তার স্বামীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে। এ ব্যাপারে তার স্বামী বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়ে মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য তার স্বামীকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি দিত। 

তিনি আরো জাানান, গত ৫ নভেম্বর তার স্বামী শারীরিক অসুস্থতার কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঔষধ আনার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন। এ সময় উপজেলার টঙ্গী-কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল বাইপাস সড়কে পৌঁছলে অভিযুক্ত আপন চাচাত ভাই ট্রাক চালক সবুজ ফিল্মি কায়দায় প্রথমে ট্রাকটি হত্যার উদ্দেশ্যে লাল মিয়ার মোটরসাইকেল ধাক্কা দেয়। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা দেহের মাথার উপর দিয়ে পিছন দিকে চালানো হয় ট্রাক। মৃত্যু নিশ্চিত করে ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যায় সবুজ। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস.আই মো. সুলতান উদ্দিন খান বলেন, নিহত লাল মিয়ার সাথে সবুজের জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জেরে তাদের মধ্যে মারামারি এবং পাল্টাপাল্টি মামলা ছিল। সবুজ যে ট্রাকটি চালাতো সেটি জব্দ করা হয়েছে। সেখান থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়াও ঘটনার পর নিহতের মরদেহ প্রাথমিক সুরতহাল সম্পন্ন করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।  

তিনি আরো জানান, বর্তমানে মামলাটি গাজীপুর বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সবুজের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে গাজীপুর আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। 


 

Bootstrap Image Preview