অবশেষে কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন পাকিস্তানে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পাওয়া খ্রিষ্ট্রান নারী আসিয়া বিবি। ধর্ম অবমাননার দায়ে ব্লাসফেমি আইনে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসিয়া গত আট বছর ধরে কারাগারে ছিলেন। বৃহস্পতিবার কর্মকর্তারা এ খবর জানান।
এদিকে মুক্তির পরপরই একটি বিশেষ বিমানে তাকে রাজধানী ইসলামাবাদে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মুলতানের একজন সিভিল অ্যাভিয়েশন অফিসার জানান, আসিয়া বিবিকে নিতে এই শহরে আসা একটি ছোট প্লেনে ‘কিছু বিদেশি এবং কিছু পাকিস্তানি’ ছিলেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে তিনজন নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম রয়টার্স জানায়, মুলতান জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন আসিয়া বিবি। তাকে কঠোর নিরাপত্তায় ইসলামাবাদের কাছাকাছি কোনও এক বিমানবন্দরে নেয়া হয়।
মন্ত্রণালয়টির মুখপাত্র ড. মুহাম্মাদ ফয়সাল তার সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, আসিয়া বিবি পাকিস্তানেই আছেন। তার দেশত্যাগ সংক্রান্ত খবরগুলোতে কোনও সত্যতা নেই।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে প্রতিবেশীর সাথে বাক-বিতণ্ডার সময় আসিয়া বিবি মহানবীকে অপমান করেছেন বলে অভিযোগ উঠে। এরপর আদালত তাকে সাজা দেয়।
ঘটনার সময় আসিয়া বিবি এবং তার প্রতিবেশীরা গাছ থেকে ফল পাড়ছিলেন। তখন এক বালতি পানি নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়। আসিয়া একটি কাপে করে ঐ বালতির পানি খেয়েছিলেন।
তখন অন্য মহিলারা বলেন, যেহেতু আসিয়া অমুসলিম, তার স্পর্শ করা ঐ পানি তারা খেতে পারবেন না, কারণ ঐ পানি এখন নোংরা হয়ে গেছে।
মামলায় বাদীপক্ষ অভিযোগ করেছিল, এ নিয়ে ঝগড়া শুরু হওয়ার পর গ্রামের মহিলারা আসিয়াকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হতে বলেন।
কিন্তু তখন আসিয়া মহানবী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেন। পরে আসিয়া বিবিকে তার বাড়িতে গিয়ে মারধর করা হয়।
অভিযোগকারীরা বলেন, সে সময় আসিয়া বিবি ইসলামের মহানবীকে অবমাননা করার কথা স্বীকার করেন। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের তদন্তের পর তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে মামলাটিতে বিশ্বাসযোগ্য কোন প্রমাণ হাজির করা হয়নি।
জনসম্মুখে আসিয়া বিবিকে হত্যার হুমকি দেবার পর তিনি দোষ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন বলে আদালত উল্লেখ করেছে। সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্য বিশিষ্ট বেঞ্চ আসিয়া বিবিকে খালাস দিয়েছেন।
পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত আসিয়া বিবিকে খালাস দেয়ার পর থেকেই পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ চলছিল।
পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সহিংস এ বিক্ষোভ বন্ধ করতে আসিয়া বিবি যেন পাকিস্তান ছাড়তে না পারে তা নিশ্চিত করতে রাজি হয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সমঝোতা করতে হয়েছে পাকিস্তান সরকারের। এরপর আন্দোলনকারীরা আটকে রাখা সড়কগুলো ছেড়ে দেয়।
চু্ক্তি অনুযায়ী সরকার আসিয়ার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেবে; সুযোগ থাকবে সুপ্রিমকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলেরও।
খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ থেকে যাদের আটক করা হয়েছে, সরকার তাদের ছেড়ে দিলেও যারা সহিংসতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলবে। এর বদলে টিএলপি বিক্ষোভ বন্ধ করবে এবং সমর্থকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নেবে।
এর মধ্যে গত শনিবার আসিয়া বিবির আইনজীবী সাইফ মুলুক প্রাণের ভয়ে পাকিস্তান ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের জাতীয় ধর্ম হলো ইসলাম। ইসলাম ধর্ম অবমাননার জন্য কঠোর আইনের পক্ষে পাকিস্তানে জোরালো জনমত রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ আসিয়া বিবিকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেছে।