Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মৎস্য সংশ্লিষ্ট সেবা সহজতর ও গতিশীল করতে উদ্ভাবিত হলো 'ডক্টর ফিস'

সোহেল আহমেদ খান, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ 
প্রকাশিত: ০৭ নভেম্বর ২০১৮, ১২:০৫ PM
আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৮, ১২:০৫ PM

bdmorning Image Preview


খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের রূপকল্পকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মৎস্য সংশ্লিষ্ট সেবা আরো সহজতর ও গতিশীল করার লক্ষ্যে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. লতিফুর রহমান উদ্ভাবন করলেন মোবাইল 'ডক্টর ফিস (মাছের ডাক্তার)'।

আর এখানে মাছের ডাক্তার হিসেবে সেবা প্রদান করবেন অ্যাপটির উদ্ভাবক কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. লতিফুর রহমান ও বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট উপজেলার সিনিয়র মৎস্য অফিসার রাজকুমার বিশ্বাস।   

জানা গেছে, মৎস্য সেবা পরামর্শ সহজকরণের লক্ষ্যে মোবাইল 'ডক্টর ফিস (মাছের ডাক্তার)' তৈরি করা হয়েছে। এই অ্যাপটি ব্যবহারের মাধ্যমে রোগাক্রান্ত মাছ, পুকুরের রং ও অবস্থার ছবি পাঠিয়ে মৎস্য অফিসারের সাথে অডিও অথবা ভিডিও কলের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে এ সংক্রান্ত সেবাটি পেতে পারেন। ফলে মৎস্য চাষীগণ সঠিক সময়ে সঠিক সেবা পাবেন এবং আর্থিক ক্ষতির হ্রাস থেকে রক্ষা পাবেন। মৎস্য পরামর্শ সেবা প্রাপ্তিতে এ অ্যাপটি ব্যবহারের মাধ্যমে মৎস্য চাষীর সময়, খরচ ও যাতায়াত হ্রাস পাবে। 

কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসের এক জরিপে দেখা গেছে, উদ্ভাবক করা অ্যাপটি ব্যবহারের আগে একজন মৎস্য চাষীকে মৎস্য পরামর্শ সেবা প্রাপ্তিতে ৫০/৩০০ টাকা খরচ করে ১/৫ দিনে ১/৩ বার যাতায়াত করতে হয়েছে। অন্যদিকে, অ্যাপটি ব্যবহারের ফলে নিজস্ব স্থানে থেকে ১/১০ টাকা খরচ করে মাত্র ৫/১০ মিনিটের মধ্যেই প্রত্যাশিত ফলাফল পেতে শুরু করেছেন। এতে করে মৎস্য চাষীদের ৪০/৩০০ টাকা সাশ্রয়, ১/৩ বার যাতায়াত সাশ্রয় ও ১/৫ দিন হ্রাস পায়। এছাড়াও সময় মত সঠিক পরামর্শ প্রদানের ফলে মাছের মৃত্যু হ্রাস অর্থাৎ চাষীর আর্থিক ক্ষতি হ্রাস পায়। 

উপজেলার নাগরী এলাকার মৎস্য চাষী নাদিম মাহমুদ জানান, তিনি যখন প্রথম মাছ চাষ শুরু করেন, তখন বিভিন্ন সময় মাছ মারা যেত। কখন কি হয়েছে বা কেন মারা যেত তিনি তা বুঝতেন না। পরে মানুষের পরামর্শে উপজেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ শুরু করেন। কিন্তু মৃত মাছ গাড়িতে করে নিতে গেলে পঁচে গন্ধ বের হত। এতে করে গাড়িতে নিতে চাইত না আবার গাড়িতে নিলেও অন্য যাত্রীরা রাগ করত। এখন 'ডক্টর ফিস (মাছের ডাক্তার)' মোবাইল অ্যাপটি ব্যবহারের মাধ্যমে সহজেই তিনি তার সমস্যা সমাধান করতে পারেন। 

উপজেলার জাঙ্গালীয়া এলাকার আরেক মৎস্যচাষি আল-আমিন জানান, অনেক সময় সমস্যা নিয়ে উপজেলা মৎস্য অফিসে গেলে দেখা যেত মৎস্য অফিসাররা মিটিং বা ট্রেনিং এ আছে। তখন সেবা পাওয়া যেত না। কিন্তু এখন আর মৎস্য অফিসে যেতে হয় না। মোবাইলেই মাছের ডাক্তার পাওয়া যায়।
  
কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসার 'ডক্টর ফিস (মাছের ডাক্তার)' উদ্ভাবক মো. লতিফুর রহমান বলেন, মৎস্য চাষীরা অনেক সময় দূরবর্তী এলাকা থেকে যাতায়াত ভাড়ার কথা চিন্তা করে মৎস্য অফিসে সেবা নিতে আসতে চায় না। আবার অনেক সময় মৃত মাছ মৎস্য অফিসে নিতে আসতে আসতে মৃত মাছ পঁচে যাওয়ায় রোগ সনাক্তকারী বৈশিষ্ট নষ্ট হয়ে যায়।

আবার অনেক সময় দেখা যায় মৎস্য চাষিরা মৎস্য অফিসে সেবা নিতে আসে। কিন্তু দাফতরিক কাজে মৎস্য কর্মকর্তারা ব্যস্ত থাকলে চাষীরা সেবা না নিয়ে ফিরে যায়। এতে করে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মূলত মৎস্য চাষিদের সঠিক পরামর্শ প্রদানের ফলে যাতে মাছের মৃত্যু হ্রাস অর্থাৎ চাষির আর্থিক ক্ষতি হ্রাস পায় সে লক্ষ্যে 'ডক্টর ফিস (মাছের ডাক্তার)' উদ্ভাবন করা হয়েছে । 

তিনি আরো জানান, অ্যাপটি তৈরির ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এটুআই প্রকল্প তাকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।   

উপজেলার নির্বাহী অফিসার খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, মৎস্য সংশ্লিষ্ট সেবা সহজলভ্য করা, সেবার মানের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি এবং তাৎক্ষণিক সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে মৎস্য কর্মকর্তার উদ্ভাবন করা 'ডক্টর ফিস (মাছের ডাক্তার)' মোবাইল অ্যাপটি অনন্যমাত্রা ও গতি সঞ্চার করবে বলে আশা করা যায়।

 



 

Bootstrap Image Preview