ফল ও সবজি হিসেবে পেঁপে একটি জনপ্রিয় ফল। যদিও একসময় শুধু মাত্র পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য বাড়ির আঙিনায় চাষ করতে দেখা যেত এ ফলটি। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে মৌলভীবাজার জেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে পেঁপে চাষ। জেলার শ্রীমঙ্গল শাসন গ্রামের ইলামপাড়ার কৃষক আসাদুর রহমানের সফলতা দেখে এ গ্রামের অনেকেই এখন ঝুঁকছেন পেঁপে চাষে।
সারি সারি পেঁপে গাছ। প্রতিটি গাছে ঝুলে আছে অসংখ্য পেঁপে। গত ৭ মাস ধরে সপ্তাহে একবার গাছ থেকে পেঁপে তুলে বিক্রি করছেন তিনি। যদিও আরো সমপরিমাণ বিক্রিযোগ্য পেঁপে গাছেই রয়েছে। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার শাসন গ্রামের আসাদুর রহমান গড়ে তুলেছেন এই পেঁপে বাগান। তাঁর বাগানে রেড লেডি এবং ইন্ডিয়ান শাহী জাতের পেঁপে চাষ করা হয়। ৯ বিঘা জমিতে তিন লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। সাত মাসে বিক্রি করেছেন ৫ লাখ টাকার। অবশিষ্ট যে পরিমাণ পেঁপে এখন গাছে রয়েছে তাও ৫ লাখ টাকা বিক্রি করত পারবেন বলে জানিয়েছেন কৃষক আসাদুর।
আলাপকালে কৃষক আসাদুর জানান, এবার নতুন করে আরো ৫ বিঘা অর্থাৎ সর্বমোট ১৫ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। পেঁপে চাষ করে এলাকায় আসাদুর হয়ে উঠেছেন এক সফল মডেল। তার এ সফলতা দেখে গ্রামের অন্যরাও পেঁপে বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
আসাদুর জানান, মোজাইক ভাইরাস কারণে প্রচুর গাছ নষ্ট হয়ে গেছে অন্যথায় দ্বিগুন পরিমাণ টাকা উপার্জন করতে পারতাম। এই ভাইরাসের আধুনিক কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। ছত্রাক ছাড়া পেঁপে বাগানে তেমন কোনো সমস্যা দেখা যায় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পুষ্টিমানসমৃদ্ধ পেঁপে চাষে ভাগ্য বদলে ফেলা যায়।
তবে তিনি অনেকটা আক্ষেপের সাথেই বলেন, পেঁপে চাষে অর্থনৈতিকভাবে সরকারি সহযোগিতা কিংবা সহজ শর্তে ঋণ পেলে ব্যাপক পরিসরে পেঁপের চাষ বাড়াতে পারতেন।
তিনি বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ প্রযুক্তিতে পেঁপে চাষ করেই দেশের অনেক বেকার সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। তিনি মনে করেন, শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি পেঁপে চাষে এগিয়ে আসেন তবে নিঃসন্দেহে তারাও লাভবান হবে।পাশাপাশি বেকারত্বের অভিশাপ থেকে নিজেকে ও দেশকে মুক্ত করতে পারবে।
স্থানীয় কৃষক আশরাফুল জানান, কৃষক আসাদুরের প্রথম থেকেই লেবু এবং গরু ছাগলের খামার রয়েছে এবং লেবু আর গরু ছাগলের খামারেও সে সফল। ২০১৬ সাল থেকে হঠাৎ করেই মাঠে পেঁপে চাষ শুরু করেন এবং অল্প সময়ে পেঁপে চাষেও সে সফল হয়েছে। তার চাষ দেখে আমাদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়েছে। তার এ সফলতা দেখে গ্রামের অনেকেই পেঁপে চাষ করার পরিকল্পনা করছে। আমি নিজেও এ বছর থেকেই ৫ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছি।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল মালেক মিয়াও জানান, আসাদুর পেঁপে চাষ করে সফল হয়েছে তাই ইতোমধ্যে আমি নিজেও এ বছর ২ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ শুরু করেছি। ভবিষ্যতে আরো বাড়াবেন বলেও জানান তিনি।
স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসাদুরের বাড়িতে পেঁপে কিনতে আসেন আর এই পেঁপে এখান থেকে কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, পেঁঁপেতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে। পেঁপে চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। তবে আসাদুরকে দেখে অনেকেই পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন।আমরা উপজেলা কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছি এবং প্রয়োজনমতো সব ধরণের সহযোগিতা করে আসছি।
তিনি আরো বলেন, বেকার যুবকরা যদি পেঁপে চাষে এগিয়ে আসে তবে আমরা তাদের সবধরণের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।