Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

জরাজীর্ণ ঘরে ১৫ বছর ধরে গৃহবন্দি জুনেদ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ নভেম্বর ২০১৮, ১০:৩৩ AM
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮, ১০:৩৩ AM

bdmorning Image Preview


কুলাউড়া উপজেলায় একটি জরাজীর্ণ ঘরে ১৫ বছর ধরে বন্দি অবস্থায় জীবন যাপন করছেন জুনেদ আহমদ (৩৮)। তিনি পাশের বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের ইকরিকান্দি গ্রামের মৃত ময়না মিয়া ও কটই বেগমের একমাত্র ছেলে।

জানা যায়, কুলাউড়ার ভূকশিমইল ইউনিয়নের বড়দল গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল মিয়া জুনেদ আহমদের বোন রেজিয়া বেগমের স্বামী। জুনেদ প্রায় ২২ বছর আগে বড়লেখা থেকে একেবারে চলে আসেন বড়দল গ্রামে জয়নালের বাড়িতে। তিনি সুস্থ ছিলেন। তবে তিন বছর পর তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন বলে দাবি জয়নালের। একপর্যায়ে জুনেদ অতিরিক্ত ভারসাম্যহীন হওয়ায় তাঁকে একটি ঘরে ১০ বছর বন্দি করে রাখা হয়। পরে মানুষের ওপর তাঁর আক্রমণের ভয়ে তাঁকে একটি জরাজীর্ণ ঘরে প্রায় পাঁচ বছর ধরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু মানসিক ভারসাম্যহীনতার বিষয়ে এলাকাবাসীর বক্তব্য ভিন্ন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১০-১২ জন স্থানীয় ব্যক্তি জানান, জুনেদের ঘর-বাড়ি রয়েছে। তাহলে কেন তাঁকে এখানে (বড়দল) বন্দি করে রাখা হলো! গ্রামের অনেকে জয়নাল মিয়ার বাড়িতে গেলে তাদের বন্দি জয়নুলের ঘরের দিকে যেতে দেওয়া হয় না। কেউ জুনেদকে দেখতে চাইলে কঠোরভাবে নিষেধ করে জয়নালের পরিবার। জয়নাল শ্বশুরবাড়ির সম্পদ ভোগ করতে জুনেদকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে প্রচার চালিয়ে থাকতে পারেন।

২০ অক্টোবর বিকেলে জয়নাল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মূল বসতঘরের পাশে জরাজীর্ণ একটি ঘরে একা বসে আছেন জুনেদ আহমদ। তাঁর শরীরে পোশাক নেই। ঘরে নেই কোনো আসবাব। একই মেঝেতে (মাটিতে) তিনি থাকেন, খান ও মলত্যাগ করেন। তাঁকে খাবার দেওয়া হয় পলিথিন ব্যাগে।

এলাকাবাসী বলছে, একটু সুনজর, সুস্থ পরিবেশ ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা পেলে হয়তো জুনেদ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন।

জুনেদের বোন রেজিয়া বেগম বলেন, ‘আমার ভাই দীর্ঘদিন থেকে মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন। তাঁকে আমরা অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এ জন্য আমরা আর চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে জুনেদকে ঘরে বন্দি করে রেখেছি।’

জুনেদের ভগ্নিপতি জয়নাল মিয়া বলেন, ‘জুনেদ ১৯ বছর ধরে অপ্রকৃতিস্থ। আমরা তাঁকে অনেক ডাক্তার-কবিরাজ দেখিয়েছি। ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে সিলেট ওসমানী হাসপাতালসহ মানসিক কেন্দ্রের ডাক্তারদের কাছে তাকে নিয়ে গেছি। কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় ডাক্তাররা তাকে রিলিজ করে দেন। কোনো কোনো ডাক্তার জুনেদকে বাড়ি না এনে অন্যত্র ফেলে দেওয়ারও পরামর্শ দেন। তার পরও আমরা তাকে বাড়িতে এনে একটি ঘরে বন্দি রেখে খাওয়া, গোসল ও অন্যান্য কাজ করে যাচ্ছি।’

শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি ভোগের উদ্দেশ্যে জুনেদকে অপ্রকৃতিস্থ করে রেখেছেন স্থানীয় লোকজনের এই অভিযোগের উত্তরে জয়নাল বলেন, ‘শ্বশুর-শাশুড়ি বেঁচে নেই। বাড়ি-ঘরও নেই। তাই তাঁকে (জুনেদ) এখানে আনা হয়েছে। আর আমার প্রায় ১৫০ বিঘা জমি ছাড়াও অনেক সম্পদ রয়েছে। কাজেই স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ সঠিক নয়।’

ভূকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’

Bootstrap Image Preview