Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আওয়ামী লীগ-ঐক্যফ্রন্ট সংলাপ নিয়ে যা বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:০৭ PM
আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:০৭ PM

bdmorning Image Preview


ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আলোচনায় অংশ নিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২১ সদস্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে পৌঁছেছেন। এই ২১ সদস্যের মধ্যে ৮ জনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের নেতৃত্ব দেবেন ড. কামাল হোসেন।

সাধারণ মানুষ এই আলোচনা থেকে প্রত্যাশা করছে দুই পক্ষ একটা সমঝোতায় আসবে। কারণ সবাই চায় একটা সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। তবে এই সংলাপ সফল করতে গেলে দু’পক্ষেরই ছাড় দেয়ার মানসিকতা প্রয়োজন মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শুরু থেকেই চাইছিল একটা সংলাপ হোক, পরে ক্ষমতাসীনরাও এতে সায় দিয়েছে। এর পেছনে দুই বিষয়কে প্রধান কারণ বলা যেতে পারে। প্রথমত, সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটা চাপ রয়েছে। দ্বিতীয়ত, সরকার দেখাতে চাইছে তারা সংলাপে বসেছে। সেটা লোক দেখানোও হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তারপরেও সরকারের ছাড় দেয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন করা। যেখানে সংসদ থাকতে পারবে না। যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন কমিশনের কোন কাজেই হস্তক্ষেপ করবে না। সরকার এ ক্ষেত্রে ছাড় দিলে সংলাপ নতুন জায়গা পাবে বলে মনে করছেন এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।

অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, “সংবিধানে এটাও আছে যে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৯০ দিনের মধ্যে যদি নির্বাচন হয় তাহলে সংসদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তারপরের ৯০ দিনের মধ্যে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ রয়েছে। এতে করে দুটো দাবিই মেনে নেয়া হবে। সংসদও থাকলো না আবার একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও এসে গেল।”

অন্যদিকে “বিএনপি একটা ছাড় দিতে পারে নির্বাচন কমিশনই থাকল কিন্তু যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসবে সেটা কী কী কাজ করবে সেটা একটা নীতিমালার মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলা হবে। তবে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার প্রশ্নে বিএনপি কোনো ছাড় দেবে না বলে মনে করেন তিনি ।

তিনি আরও বলেন, এ সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ মিটমাট করতে আরও কিছু সময়ের প্রয়োজন। এতো অল্প সময়ের মধ্যে সরকারি বা বিরোধী দল কোনটা ছাড় দেবে সেটার সিদ্ধান্ত নেয়ার মধ্যেই তফসিল ঘোষণা হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন যদি জানুয়ারি বা মার্চ এপ্রিলের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে অনেক সময় পাওয়া যাবে, এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত কথাবার্তা বলারও সুযোগ তৈরি হবে।

অন্যদিকে, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ কী হবে, কি হবে না, সেটাকে কতোগুলো আইন, কনভেনশন বা নীতিমালার আওতায় আনা যেতে পারে। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন। সেই-সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আচরণ কেমন হবে সেক্ষেত্রে আলোচনায় সরকারি ও বিরোধী পক্ষের ছাড় দেয়ারও জায়গা রয়েছে বলে মনে করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী।–

সংলাপ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, সমাধান চাইলে আমি বড় কোন বাধা দেখি না। একদিকে সাত দফা আর অন্যদিকে কোন দফা নেই। এক্ষেত্রে উভয়কেই ছাড় দিতে হবে। আর আমরাও আশাবাদী উভয়পক্ষই কিছু না কিছু ছাড় দেবে। এরকম মানসিকতা থাকলে সংলাপের একটা ফল নিশ্চয়ই আসবে। আর ফল না আসলে ধরে নেব আমাদের রাজনৈতিদক নেতৃবৃন্দের এখনো প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সংবিধানের ১২৩(৩) এর (খ) ধারা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী যেকোন সময় সংসদ ভেঙ্গে দিতে পারেন। এখন যদি সংসদ ভেঙ্গে দেয়া হয় তাহলে সেটা সংবিধানের মধ্য থেকেই হবে। এটা হলেই তো অনেক বড় একটা বাধা কেটে যায়। এভাবেই বিভিন্ন বিষয়ে ছাড় দিয়ে এই সমাধান সম্ভব।

তত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, কিছু বিষয় আছে যেগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। যেমন সংসদ ভেঙ্গে দেয়া বা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা যেহেতু নির্বাচন কমিশন মোটামুটি আস্থা হারিয়েছে। এগুলো দেন দরবারের বিষয় না এগুলো সিদ্ধান্তের বিষয়। সংলাপটা যেন নিছকই একটা আলোচনার মধ্যে না থেকে সমাধানের দিকে যায়।

তিনি আরো বলেন, সংবিধান নানাভাবে সংশোধন করা হয়েছে। সেগুলো যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয় বা তেমন জাতীয় আলোচনা ছাড়াই সংশোধন হয় এসব বিষয় নিয়ে সংলাপে আলোচনা হবে হয়তো।

Bootstrap Image Preview