প্রধানমন্ত্রীর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে বৈঠকে বসেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে মতিঝিল মেট্রপলিটন চেম্বার অব কমাস এ্যন্ড ইন্ডাষ্টিজ ভবনে ড. কামালের চেম্বারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এ বৈঠক শুরু হয়।
এতে অংশ নিয়েছেন, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জে এস ডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, সহ সভাপতি তানিয়া রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ।
বৈঠকের ব্যাপারে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সরকার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসতে রাজি হয়েছে। সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের কোন কোন নেতা অংশ নিবে তা ঠিক করার জন্য আজকের এ বৈঠক। পাশাপাশি ৭ দফা দাবি নিয়েও কথা হবে বলে জানান তিনি।
জামায়াতে ব্যাপারে জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জামায়াত নিয়ে কোন কথা হয়নি। সংলাপে জামায়াত থাকছে না।
উল্লেখ্য, সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। আগামী ১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর চিঠির শুরুতেই ড. কামাল হোসেনকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি লিখেন, ‘জনাব, সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন। আপনার ২৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখের পত্রের জন্য ধন্যবাদ। অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সংবিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনার জন্য আমার দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত। তাই, আলোচনার জন্য আপনি যে সময় চেয়েছেন, সে পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ০১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখ সন্ধ্যা ০৭-০০ টায়, আপনাদের আমি গণভবনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বসার আগ্রহ দেখিয়ে রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সবার সঙ্গে আলোচনা করেন। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসার।
বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, দেশের রাজনীতির জন্য একটি সুখবর আছে। যা সারা দেশের রাজনীতির অঙ্গনে স্বস্তির সুবাতাস বইয়ে দেবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবে সম্মত এবং আমরা সবাই এই ব্যাপারে আমাদের নেত্রীর সঙ্গে একমত যে আমরা ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বসব।’
ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের দিনক্ষণ পরে তাদের জানানো হবে জানিয়ে কাদের বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তা হতে পারে। বহুল প্রত্যাশিত এই সংলাপে আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দেবেন বলেও জানান কাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা কোনো প্রি-কন্ডিশন দেবো না। আর আমরা কারো চাপের মুখে নতিস্বীকার করিনি। আমাদের পক্ষ থেকে কাউকে সংলাপে ডাকিনি। সংলাপের দরজা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্ধ করে দিতে চান না।’
তবে এই সংলাপে নির্দিষ্ট কী বিষয়ে আলোচনা হবে, তা নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কিছু বলেননি।
এদিকে, ওবায়দুল কাদেরের সংবাদ সম্মেলনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সংলাপে বসার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।
এরপর গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওবায়দুল কাদের সংলাপের জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য মোস্তফা মহসিন মন্টুকে ফোন করে আমন্ত্রণ জানান। তিনি জানতে চান, ঐক্যফ্রন্টের কতজন সদস্য সংলাপে অংশ নেবেন। জবাবে ঐক্যফ্রন্টের অন্তত ২০ জন সদস্য সংলাপে অংশ নিতে পারেন বলে জানান মন্টু। এ জন্য একটি তালিকা চান কাদের। মঙ্গলবার ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে একটি তালিকা পাঠানো হবে বলে জানান মন্টু।