Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সাজা বেড়ে ১০ বছর; নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না খালেদা জিয়া

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ০১:৫৪ PM
আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ০১:৫৪ PM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া অপর আসামিদের ১০ বছরের সাজা বহাল রাখা হয়েছে। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম  বলেছেন, দেশের আইন অনুযায়ী কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না, সে অনুযায়ী খালেদা জিয়াও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না ।

আজ মঙ্গলবার সকালে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এর আগে গতকাল সোমবার(২৯ অক্টোবর) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার ৭ বছর জেল, ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির সাজা কমানোর যে আবেদন করা হয়েছিল, আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দিয়েছেন। দুদকের পক্ষ থেকে সাজা বাড়ানোর যে আবেদন করা হয়েছিল, তা গ্রহণ করা হয়েছে। তা থেকে সাজা ৫ বছর থেকে বাড়ি ১০ বছর করা হয়েছে।

এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল  মাহবুবে আলম বলেন, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়াও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যে মুখ্য অপরাধী, তা যুক্তি-প্রমাণের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া সকল আসামির সাজা দশ বছর করা হয়েছে।

খালেদা নির্বাচন করতে না পারা নিয়ে একই কথা বলেছেন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়  দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেছেন, যেহেতু দুই আদালত তাকে সাজা দিয়েছেন সেজন্য সংবিধান অনুযায়ী তিনি নির্বাচনের অযোগ্য।ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে পারবেন না বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালত তাদের তিনটি আপিলই খারিজ করে দিয়েছেন। আমাদের তিনটি আবেদন গ্রহণ করেছেন। এখন জামিন অটোমেটিকলি বাতিল হয়ে যাবে। উনার নির্বাচনে অংশ গ্রহণের প্রশ্নই আসে না।’

সাজা বৃদ্ধির কারণ বিষয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এই মামলার মুখ্য আসামি খালেদা জিয়া এবং এ মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন। এ মামলার অন্যান্য আসামিদের ১০ বছর করে সাজা হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়া মুখ্য আসামি হওয়ার পরও তাকে ৫ বছর কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত। এ কারণে আমরা রায়ের বিরুদ্ধে রিভিশন করেছিলাম। আদালত আমাদের আবেদন গ্রহণ করে তার সাজা বৃদ্ধি করেছেন।

সংবিধানে অনুযায়ী খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী নৈতিকতা স্খলনের দায়ে কেউ যদি দুই বছরের জন্য দণ্ডিত হন, তাহলে পরবর্তী ৫ বছর না যাওয়া পর্যন্ত তিনি নির্বাচন করতে পরবেন না। কাজেই সংবিধানের ৬৬ (২) ডি অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না। আপিল করলেও তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। কারণ, এখানে দুইটি আদালতের রায় হয়ে গেছে।

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন কোন মন্তব্য না করতে রাজি হননি। সবার সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিক্রিয়া জানাবেন বলে সাংবাদিকদের বলেন তিনি।

এ সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ের সামনে এ রায়ের বিরুদ্ধে মিছিল করেন। অবৈধ রায় মানি না মানব না বলে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা।

তবে খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেছেন, হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে দেওয়া হলেও তিনি নির্বাচনের অযোগ্য হবেন না।  আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে যাব। আশা করি, তিনি (খালেদা জিয়া) ন্যায়বিচার পাবেন।

উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ মামলার অন্য পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বাকি চার আসামি হলেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সাংসদ ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ এবং জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমান। এর মধ্যে পলাতক আছেন তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান। পাশাপাশি ছয় আসামির প্রত্যেককে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়।

রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে ওইদিন বিকালে (৮ ফেব্রুয়ারি) নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এতদিন তিনি সেখানেই ছিলেন। বর্তমানে চিকিৎসার জন্য তাকে বিএসএমএমইউতে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) নেওয়া হয়েছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার ১১ দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রায়ের সার্টিফায়েড কপি (অনুলিপি) হাতে পান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। একইসঙ্গে এ মামলার অন্য দুই আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ খালাশ চেয়ে আপিল করেন। পাশাপাশি এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে রিভিশন আবেদন করে দুদক।

Bootstrap Image Preview