মুসলিম বিশ্বে সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী দেশগুলোর মধ্যে এগিয়ে আছে তুরস্ক, পাকিস্তান ও ইরান। সাদ্দাম হোসেন ইরাকের প্রেসিডেন্ট থাকা পর্যন্ত দেশটি ছিল মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। কিন্তু সাদ্দাম হোসেনের পতনের বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশ তাদের প্রতিরক্ষা খাত শক্তিশালী করতে শুরু করেছে। এই দৌঁড়ে এগিয়ে আগে আছে তুরস্ক, পাকিস্তান ও ইরান।
মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে যে ৬টি দেশ অন্যদের থেকে তুলনামূলক এগিয়ে রয়েছে।
তুরস্ক: প্রতিরক্ষা শক্তিতে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তুরস্ক। বর্তমানে দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ৪ লাখ ১০ হাজার। রিজার্ভ এবং আধা সামরিক সব মিলিয়ে দেশটির বর্তমান সামরিক জনশক্তি ৭ লাখেরও বেশি। তুরস্কের সামরিক বাহিনীর যুদ্ধসরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ট্যাংক তিন হাজার ৭৭৮টি, স্বচালিত কামান (এসপিজি) এক হাজার ১৩টি, ভ্রাম্যমাণ কামান (টিএ) ৬৯৭টি, আর্মারড ফাইটিং ভেহিকেল (এএফভি) সাত হাজার ৫৫০টি, বহুমুখী রকেট ব্যবস্থা (এমএলআরএস) ৮১১টি। বিমান বাহিনীর অধীনে রয়েছে ৯টি যুদ্ধবিমান ঘাঁটি। ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি ও ড্রোন ঘাঁটিসহ রয়েছে আরও ১১টি ঘাঁটি ও ৪১টি সোয়াড্রন, বিমানসংখ্যা এক হাজার ৭টি, প্রশিক্ষণ বিমান ২৭৬টি, যুদ্ধবিমান ২০৭টি, হেলিকপ্টার ৪৪৫টি, সামরিক হেলিকপ্টার ৬৪টি।
পাকিস্তান: একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর মুসলিম দেশ পাকিস্তান। দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। দেশটিতে রিজার্ভ আর্মি আছে আরো পাঁচ লাখের বেশি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের নিকট থেকে স্বাধীনতা লাভ করা এই দেশটির মোট জনসংখ্যা ১৮০ মিলিয়ন। পাকিস্তান ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতেও অন্য মুসলিম দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে। পাকিস্তানের রয়েছে ৪ হাজার সাঁজোয়া ট্যাংক, ৪ টি ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ, ১৪ টি ফ্রিগেট, ৮ টি করভেট যুদ্ধজাহাজ, ২৮ টি পেট্রোল বোট, ৮ টি সাবমেরিন, ৩২৫ টি যুদ্ধবিমান, ৩০ টি বোমারু বিমান, ২৫০ টি জঙ্গি বিমান, ১১০ টি সাঁজোয়া হেলিকপ্টার এবং ১১০-১২০টি পরমাণু অস্ত্র। প্রতি অর্থবছরে পাকিস্তানের সামরিক বাজেট থাকে প্রায় ৭.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি দেশটির জিডিপির ২.৭ শতাংশ।
ইরান: ইরানের সামরিক শক্তি মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখ করার মতো। এক হাজার ৬৫৮টি ট্যাংক রয়েছে ইরানি সেনাবাহিনীর। এর মধ্যে ১০০টিই ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি। দেশটির সামরিক শক্তির মধ্যে রয়েছে আট হাজার ১৯৬টি পৃথক আর্টিলারি ডিভিশন সৈন্য। দুই হাজার ১০টি টানা আর্টিলারি ও ৮০০টি স্ব-নিয়ন্ত্রিত অস্ত্র। ইরানের হাতে ২০০টি রকেট সিস্টেম, পাঁচ হাজার মর্টার এবং এক হাজার ৭০১টি বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র। ইরানের আরো রয়েছে এক হাজার ৩১৫টি অত্যাধুনিক আরমার্ড ফাইটিং ভেহিকেল। নৌবাহিনীর মোট জাহাজ ৩৯৭টি, ফ্রিগেট ওয়ারশিপ ১২টি, বাণিজ্যিক জাহাজ ৭৪টি, কোস্টাল ডিফেন্স জাহাজ ১১১টি, করভেট যুদ্ধজাহাজ ৩টি ও সাবমেরিন ৩৭টি। বিমান বহরে ইরানের রয়েছে প্রায় ৫০০টি বিমান। ইরানের দূরপাল্লার বা স্বল্পপাল্লার শক্তিশালী প্রায় ১ হাজারের বেশি মিসাইল রয়েছে। ইরানের এই মিসাইল শক্তি ইসরায়েলের যে কোনো স্থান ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো স্থানে হামলা করাসহ পূর্ব ইউরোপ পর্যন্ত হামলা করতে সক্ষম।
সৌদি আরব : অস্ত্র আমদানিতে বিশ্বের সর্বোচ্চ অর্থ ব্যয়কারী দেশ হচ্ছে সৌদি আরব। দেশটিতে এমন কিছু অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র রয়েছে যেগুলো মার্কিন সেনাবাহিনীতেও প্রচলন হয়নি।
মিসর : সামরিক বাহিনীর শক্তিমত্তার দিক থেকে মিসর বেশ এগিয়ে। তবে দেশটির প্রতিরক্ষা খাত পশ্চিমা অস্ত্রশস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল। মিসরের প্রতিরক্ষা শিল্প ট্যাংকসহ মাঝারি আকারের অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণ করে থাকে।
মালয়েশিয়া : এশিয়ার শান্তিপূর্ণ দেশ মালয়েশিয়া। দেশটির সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীও যথেষ্ট শক্তিশালী। তারা হালকা অস্ত্রশস্ত্র ও নৌযান তৈরি করে থাকে। তবে ভারি অস্ত্রশস্ত্র বিশেষ করে যুদ্ধ বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধজাহাজ বাইরের দেশ থেকে সংগ্রহ করে থাকে। এককথায় সামরিক বিচারে উভয় দেশকে মাঝারি শক্তি হিসেবে বলা যায়।