শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, আগামী ১ নভেম্বর থেকে দেশে ৯ম বারের মত জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। চলতি বছর মোট ২৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৩৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। ২৯ হাজার ৬৭৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ২ হাজার ৯০৩টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দিবে।
আজ সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০১০ সাল থেকে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা শুরু হয়। এ পরীক্ষা আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিমাণগত ও গুণগত পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ এবং লেখাপড়ায় এনরোলমেন্ট বৃদ্ধি, সকল শিক্ষার্থীরই বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যে নিয়ে আসার ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার প্রতি আরো মনোযোগী ও আন্তরিক হয়েছে। এতে করে পাবলিক পরীক্ষার ভীতি কমে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০১০ সালের আমাদের পরীক্ষার্থী ছিল ১৪ লাখ ৯২ হাজার ৮০২ জন চলতি ২০১৮ সালে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৩৩ জন। শিক্ষাকে তৃণমুল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার সরকারের উদ্যোগই এ সফলতার অন্যতম কারণ। এ পরীক্ষার মাধ্যমে পরীক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় আরও উদ্যোমী ও আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে উঠবে। পরীক্ষা পাসের একটি সনদ হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা আরও উৎসাহিত হবে বলে আশা করা যায়।
মন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় ২ লাখ এক হাজার ৫১৩ জন পরীক্ষার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে ও জেএসসি পরীক্ষায় ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৬ জন এবং জেডিসি পরীক্ষায় ২৪ হাজার ৪৪৭ জন পরীক্ষার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে। ৬৯ টি নতুন কেন্দ্র এবং নতুন এক হাজার ৪৯ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালের জেএসসি পরীক্ষায় অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ২ লাখ ৪৬ হাজার ৩৫৩ জন ও জেডিসি পরীক্ষায় ৩৪ হাজার ২৫১ জন। জেএসসি পরীক্ষায় বিশেষ পরীক্ষার্থী (এক, দুই ও তিন বিষয়ে অকৃতকার্য) ২ লাখ ৩০ হাজার ৭৮৫ জন ও জেডিসি পরীক্ষায় ৩০ হাজার ৫৪৮ জন।
জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষায় গৃহীত কিছুৃ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ১. নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ৭টি বিষয়ে ৬৫০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে। বাংলা ২য় পত্র এবং ইংরেজি ১ম/২য় পত্র ছাড়া সকল বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে হবে। ২. নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা এবং চারু ও কারুকলা, কৃষি শিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, আরবি, সংস্কৃত, পালি বিষয়সমূহ এনসিটিবি এর নির্দেশনা অনুসারে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (Continuous Assessment) এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ৩. পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট পূর্বে পরীক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করতে হবে। তবে অনিবার্য কারণে কোন পরীক্ষার্থীকে এ সময়ের পরে হলে প্রবেশ করতে দিলে তার/তাদের নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, দেরি হওয়ার কারণ ইত্যাদি একটি রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে ঐদিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন দিতে হবে। ৪. শ্রবণপ্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় দেয়া হয়েছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পলসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই তাদের জন্য শ্রুতি লেখকের সুযোগ রাখা হয়েছে। ৫. প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রালপলসি) পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় বৃদ্ধিসহ শিক্ষক/অভিভাবক/সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষা প্রদানের সুযোগ দেয়া হয়েছে। ৬. অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত সকল শিক্ষার্থীই এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়, কোন নির্বাচনী কিংবা প্রাক মূল্যায়ণ পরীক্ষা দিতে হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের আলাদাভাবে কোন বৃত্তি পরীক্ষা দিতে হবে না। ৭. পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারীদের মোবাইল, মোবাইল ফোনের সুবিধাসহ ঘড়ি, কলম এবং পরীক্ষা কেন্দ্রে ব্যবহারের অনুমিতবিহীন যে কোন ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। ৮. পরীক্ষা চলাকালীন ও এরআগে ও পরে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজের সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত অন্যদের প্রবেশ সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ থাকেব। এ সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশকারী অননুমোদিত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ৯. আসন্ন জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ২৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখ থেকে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।