Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নগ্নতায় এগিয়ে কলকাতার বাংলা সিনেমা!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ১১:৩২ AM
আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ১১:৩২ AM

bdmorning Image Preview


অভিনয়ের প্রয়োজনে নিজের পোশাক খুলে লেন্সের সামনে এসেছেন অনেক নায়ক-নায়িকারাই। কিন্তু বিশ্বজুড়ে এমন অনেক সিনেমা আছে যেখানে ক্যামেরার সামনে সত্যিকারের শারীরিক মিলনে লিপ্ত হতে হয়েছে তাদের। শুধু হলিউড নয়, টালিউডের সিনেমাও সেই তালিকায় রয়েছে।

রাজ কাপুরের সময়টা যদি বাদ দেওয়া যায়, হিন্দি সিনেমায় সে অর্থে কোনোদিনই সাহসী শুট করতে দেখা যায়নি। একমাত্র রাজ কাপুরেরই বুকের পাটা ছিল। ১৯৭০ সালে শিক্ষিকার সিক্ত দেহের দিকে তাকিয়ে ছাত্রের মোহিত হওয়ার দৃশ্য শুট করেছিলেন তিনি। তাও আবার নিজের ছেলে ঋষি কাপুরকে দিয়ে। এর পরে প্রায় প্রতিটি ছবিতেই তিনি নায়িকাদের দু’একটি দৃশ্যে খোলামেলা দেখিয়েছেন। ওই যুগটা ছাড়া, আর কদাচিৎ এক-আধটা ছবি ছাড়া, বলিউডে নগ্নতা সেভাবে দেখা যায়নি। বিশেষত, সম্পূর্ণ নগ্নতার তো প্রশ্নই নেই। উলটোদিকে বাংলা সিনেমা কিন্তু তুলনামূলক অনেক স্বাধীন। অনেক সাহসী। মনে পড়ে ঋ-য়ের গান্ডু বা কসমিক সেক্স? অথবা পাওলি দামের ছত্রাক? এসব খবর প্রকাশ করেছে কলকাতার একটি গণমাধ্যম।

তর্ক উঠতেই পারে। কেউ দাবি করতেই পারেন, রাজ কাপুর তো সেই কোন যুগে মেরা নাম জোকারে পদ্মিনী বা রাম তেরি গঙ্গা ময়লিতে মন্দাকিনীর স্তন ফুটিয়ে তুলেছিলেন রুপালি পর্দায়। কিন্তু সেখানে ছিল সূক্ষ্ণ আবরণ। আর যা আছে, তা হলো ব্যাকলেস। না ঢাকা পিঠ। হেট স্টোরি থেকে কুরবান। নায়িকাদের ব্যাকলেস হতে আপত্তি নেই এখনকার দিনে। কিন্তু নগ্ন হতে আপত্তি আছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই আছে। কোথাও তো সীমারেখা টানা উচিত। তবে অনেকেই অবশ্য এই লক্ষ্ণণরেখা মানতে রাজি নন। মীরা নায়ারের কামাসূত্রতে অনেক জায়গায় নগ্ন নারীদেহ দেখানো হয়েছে। তবে ওটুকুই। খুঁজলে এর বেশি উদাহরণ পাওয়া ভার। রং রসিয়াতেও অবশ্য নন্দনা সেন নগ্ন হয়েছিলেন। কিন্তু খেয়াল করে দেখুন, এখানেও সাহস দেখিয়েছেন সেই বাঙালি। তাও আবার যে সে ব্যক্তি নন। খোদ অমর্ত্য সেন আর নবনীতা দেবসেনের মেয়ে নন্দনা।

গত সাত আট বছরের মধ্যে কলকাতা বাংলা সিনেমায় ঘটে গেছে বিশাল পালাবদল। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বদলেছে দর্শকের চাহিদা, ইমেজ আর দেখার চোখও! দর্শকশ্রেণির চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে মেইনস্ট্রিম আর আর্টফর্মের মিশেলে সেখানে তৈরি হয়েছে মিডল রোড বা মধ্যপন্থার এক নিজস্ব ধারার সিনেমা। সিনেমার গল্পের ধরণও পাল্টে গেছে আমূল, নাগরিক জীবনের নানা প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি, প্রেম বিরহ আর অবদমনের গল্পগুলো হয় সিনেমার বিষয়। যে সিনেমাগুলো বেশীরভাগ সময়ই যৌনতার আবরণে মোড়ানো থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে কলকাতার সিনেমায় মূল ধারা আর আর্ট ফর্মের মিশেলে যে ধারার সূচনা হয়েছে, তার অগ্রপথিক ধরা হয় অঞ্জন দত্ত, ঋতুপর্ণ ঘোষের মতো মেধাবী নির্মাতাদের। নিউ এজ বাংলা সিনেমার প্রবর্তকও বলা হয় তাদের। যৌনতাকে শৈল্পিকভাবে কিভাবে উপস্থাপন করা যায়, এবং তা মেইনস্ট্রিম আর আর্টফর্মের সমন্বয়ের ভিতর দিয়ে চর্চা করা যায় তা ভীষণরকমভাবে পর্দায় তুলে ধরে দেখিয়েছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। প্রায় ছবিতেই তিনি বিচিত্র সম্পর্কের গল্প বলে গেছেন। চোখের বালি, নৌকাডুবি, অন্তরমহলের মতোন সিনেমায় ঋতুপর্ণের ছবিতে পরকিয়া সম্পর্কগুলোর রগরগে দৃশ্যায়ন আমরা দেখেছি, তার ছবিতে দুই পুরুষের সমকামিতা এবং লিঙ্গান্তর বা রূপান্তরিত নারী পুরুষের গল্প দেখিছি। অঞ্জন দত্ত তার সিনেমার ভিতর দিয়ে দেখিয়েছেন সমাজে সম্পর্কের রকমফের। তাদের পরবর্তী সময়ে প্রায় সব ছবি নির্মাতাদের মধ্যে এই বিষয়টি ছড়িয়ে যায়, সৃজিত মূখার্জী থেকে শুরু করে তরুণ নির্মাতা ‘কিউ কৌশিক’ পর্যন্ত সকলের ছবিতে রগরগে যৌনতার উপস্থাপন ভীষণরকম উপস্থিত।

পাওলি দামের ছত্রাক যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা তো জানেন, কী ছিল সেই ছবিতে। অনুব্রত আর পাওলি পর্দায় শুধু নগ্নই হননি। একেবারে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছিলেন। আর এই বঙ্গতনয় তনয়ার যৌন দৃশ্যের শুট হয়েছিল ক্যামেরায়। দেখেছিল সারা বিশ্ব। সারা বিশ্ব এই কারণেই, কারণ বিশ্বের অন্যতম স্বনামধন্য কান ফেস্টিভালে দেখানো হয়েছিল ছবিটি। প্রশংসাও পেয়েছিল প্রচুর। অনেকে বলবেন, এ যে লজ্জার বিষয়। গড়পাড়ের মেয়ে কিনা বিশ্ব বাজারে উলঙ্গ হলো? কলকাতার বাঙালির মাথা কাটা গেল। কিন্তু যাঁরা শিল্পী, তাঁরা জানেন, এক নারীদেহকে কতটা সোহাগ ঢেলে বানিয়েছে প্রকৃতি। সেই দেহ নিঃসন্দেহে আবেদনময়ী। কিন্তু সেই সঙ্গে শিল্পও ভরে আছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। বাংলা ছবি তাইই দেখিয়েছে। তা হোক না গুটিকয়েক। হোক না ব্যান হয়ে যাওয়া চলচ্চিত্র।

গান্ডু ছবিতে ঋ যখন উর্ধ্বাঙ্গ উন্মোচন করেছিলেন, অনেকেই তা মেনে নিতে পারেনি। আবার অনেকে সাময়িক আহ্লাদের জন্য তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছে সেই নগ্নতা। ঋ তখন এমন একজন নায়িকা, পর্দার সামনে জামাকাপড় খুলতে যাঁর আপত্তি নেই। কসমিক সেক্সের বেলাতেও তাই। ওখানে তো আবার ঢাক পিটিয়ে মেনস্ট্রুয়েশন দেখানো হয়েছে।

অবশ্য ঋ বলেছেন, ছবির প্রয়োজনে, স্ক্রিপ্টের প্রয়োজনে, তিনি সবই করতে পারেন। শোনা যায়, একই কথা নাকি বলেছেন পাওলি দামও। তাই ছত্রাক নিয়ে যখন সমালোচনার বন্যা বইছে, তখন পাওলি কান ফেস্টিভালে প্রশংসার আস্বাদ গ্রহণ করছেন।

তবে এই ছাড়াও আরও একজন আছেন যিনি পর্দার সামনে নগ্ন হয়েছিলেন বাংলা ছবিতে। তাঁর নাম কমলিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবির না গান্ডু। সমালোচনা উদ্দেশ্য নয়। সিনেমায় বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলার জন্য যতটা সাহসী হতে হবে... হবে। এই যে বলিউড ছবি আজ সাহসী হয়েছে বলে বড়াই করা হয়, তা কিন্তু আদতে সত্যি নয়। সাহসিকতার পথ দেখিয়েছে বাঙালি। তবে এ বললেও ভুল হবে যে শুধু বাংলা ছবিতেই নারীদেহ উন্মোচন করা হয়েছে। তামিল মেইনস্ট্রিম ছবি কুট্টু স্রাঙ্কে সম্পূর্ণ নগ্নতা দেখানো হয়েছিল। জানেন, ছবিতে কে অভিনয় করেছিলেন? তিনিও এক বাঙালি অভিনেত্রী। নাম কমলিনী মুখোপাধ্যায়।

স্বত্বিকা মূখার্জীর ‘টেক ওয়ান’ কলকাতা বাংলা সিনেমায় আরেক সাহসী নির্মাতা মৈনাক ভৌমিক। গত বছর তিনি তিনি নির্মাণ করেছেন কলকাতা বাংলার টপ রেডেট অভিনেত্রী স্বস্তিকা মূখার্জীকে নিয়ে 'টেক ওয়ান'। ছবিতে একেবারে খোলামেলা চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন স্বস্তিকা। গত বছর কলকাতায় স্বস্তিকার ‘টেকওয়ান’-এ বিবসনা দৃশ্য নিয়ে শিক্ষার্থীদেরও ক্ষোভের মুখে পড়েছিল পুরো ‘টেকওয়ান’ টিম। মৈনাক ভৌমিক পরিচালিত এ সিনেমাতে স্বস্তিকা প্রায় বিবসনা হয়ে ক্যামেরাবন্দি হয়েছিলেন স্বস্তিকা। এতে জনৈ মডেলের সঙ্গে স্বস্তিকার একাধিক আবেগঘন দৃশ্য রয়েছে। তবে সেন্সরে কর্তনের ভয়ে সিনেমাতে স্বস্তিকার বিবসনা দৃশ্যগুলো কিছুটা অস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু বাইরের চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে সিনেমাটির দৃশ্যগুলো স্বাভাবিক রেখেই পাঠানো হয়েছে। যৌনতায় রিষ্টপুষ্ট মৈনাকের আরেক চলচ্চিত্র ‘আমি আর আমার গার্ল ফ্রেন্ড’। ২০১৩ মুক্তি পায় চলচ্চিত্রটি। এটি রচনা, চিত্রনাট্যরচনা এবং পরিচালনা করেছেন মৈনাক ভৌমিক নিজেই। অভিনয়ে ছিলেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, পার্ণো মিত্র, রাইমা সেন, বিক্রম চ্যাটার্জি, বিশ্বনাথ বসু, নীল মুখার্জি, অনুবর্ত বসু প্রমুখ। তিনজন বাঙালি মেয়ের বন্ধুত্ব এবং তাদের নিজস্ব জগতের মধ্যে এই চলচ্চিত্রের গল্প আবর্তিত হয়েছে চলচ্চিত্রটি। মুক্তির পর যথারীতি ব্যাপক আলোচিত হয় সিনেমাটি।

‘আমি আর আমার গার্ল ফ্রেন্ড’ এর দৃশ্য এছাড়াও কলকাতা বাংলা সিনেমায় এ সময়ে যারা মূল ধারার বাইরে গিয়ে ছবি নির্মাণ করছেন, তাদের প্রায় সব ছবিতেই থাকে যৌনতার প্রবল সুড়সুড়ি। গৌতম ঘোষ কিংবা এ সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় নির্মাতা সৃজিত মূখার্জীও এর বাইরে নয়।তার সাম্প্রতিক মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘নির্বাক’ও তো একজন নিঃসঙ্গ অবদমিত পুরুষের গল্প দেখাতে গিয়ে যৌনতার আশ্রয় নিয়েছেন।

শেষ কথা, কলকাতার বাঙালি মেয়েদের বুকের পাটা আছে। অন্তত এই জায়গায় বলিউডকে হার মানতেই হবে। নিন্দুকরা অবশ্য বলবে অন্য কথা। বলবে, বাঙালি মেয়েদের জাতই নেই আর। বুদ্ধিজীবীরা বলবেন অন্য কথা। বলবেন, ওরা বড় হয়েছে। স্বাধীন হয়েছে।

Bootstrap Image Preview