Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দেশে বেকারের সংখ্যা ৪ কোটি ৮৩ লাখ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০১৮, ০১:৫৪ PM
আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮, ০১:৫৪ PM

bdmorning Image Preview


আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনের ইশতিহারে ছিলো ঘরে ঘরে চাকরি দেয়া হবে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে বিনিয়োগ। সেই সাথে বেড়ে চলছে বেকারের সংখ্যা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৬৬ লাখ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার। কিন্তু বাস্তবে বেকারের সংখ্যা আরও বেশি বলে মন্তব্য করছেন অর্থনীতিবিদরা।

ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, বিবিএসের জরিপে আইএলওর সংজ্ঞা অনুযায়ী যে বেকার সংখ্যা দেখানো হয়েছে, বাস্তব অবস্থা তার ধারে কাছেই নয়। বাস্তবে বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি। কেননা শ্রমশক্তির বাইরে থাকা মানুষগুলোর অধিকাংশই মহিলা ও তরুণ। এরা অনেকেই সামাজিক, পারিবারিক ও কর্মস্থলের পরিবেশের অভাবসহ নানা বাধার কারণে কর্মে যুক্ত হতে পারছে না। আর একটি অংশ আছে যারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ খুঁজতে খুঁজতে হতাশ হয়ে পড়েছেন। যখন জরিপ চলে তখন হয়তো কাজ খোঁজাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে তারা বেকারের তালিকায় আসেননি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার পর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ যত বেশি শিক্ষিত হয়, বেকার হওয়ার ঝুঁকি তত বেশি হয়। দেশের মোট যুবকদের এক-তৃতীয়াংশ বেকার। বেকারত্ব কমিয়ে আনতে সরকারকে অবশ্যই উদ্যোগ নিতে হবে।

অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও স্বীকার করেছেন, দেশে এখন দরিদ্র মানুষের পরিমাণ তিন কোটি। যার মধ্যে এক কোটি হতদরিদ্র। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ কিশোর-কিশোরী সম্মেলন-২০১৮’ অনুষ্ঠানে রবিবার সকালে তিনি এ কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী ১০ বছরে দেশ থেকে দারিদ্র্যতা দূর করতে হলে বছরে ২ শতাংশ হারে দরিদ্র কমাতে হবে। কিন্তু আমরা এখনও সেটি পারিনি।

তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান সরকারের টার্গেট হচ্ছে- আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশে কোনো দরিদ্র মানুষ থাকবে না। তবে এমন নয় যে, একেবারে দারিদ্র্য শেষ হয়ে যাবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছুটা হলেও দারিদ্র্য থাকে। : দেশে বেকার সংখ্যার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগ স্থবিরতা।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে দেশে বিনিয়োগ করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিদেশি উদ্যোক্তারা। একই সঙ্গে আমানতের সুদহার কমায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও কমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। গত আগস্ট শেষে প্রবৃদ্ধি নেমেছে ১৪ দশমিক ৯৫ শতাংশে। আগের মাস জুলাইতে যা ছিল ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

মূলত নির্বাচনের বছরে ব্যাংকগুলোর ঋণে লাগাম টানতে গত জানুয়ারিতে ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) কমানো এবং সুদ হার কমানোর সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংক খাতে তারল্যের টানাটানি তৈরি হয়েছে। এতে করে কমছে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি। যা অর্থনীতির জন্য ভালো খবর নয়। কেননা এ রকম প্রবণতা থাকলে কর্মসংস্থান কমবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মোট কর্মোপযোগী মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৯১ লাখ। এর মধ্যে কর্মে নিয়োজিত ৬ কোটি ৮ লাখ মানুষ। বাকি ৪ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ কর্মক্ষম তবে শ্রমশক্তির বাইরে। এর মধ্যে শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ও অশিক্ষিত নারী-পুরুষ আছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আইএলওর সংজ্ঞার মধ্যে না পড়লেও বাংলাদেশে এরাই হচ্ছে প্রকৃত বেকার। আইএলওর সংজ্ঞায় বেকার হচ্ছে যারা জরিপের সময় থেকে গত এক মাসের মধ্যে কাজ খুঁজেছেন, কিন্তু পাননি। তাদেরই বেকার হিসেবে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে যারা সপ্তাহে ১ ঘণ্টা কাজ করেছেন (মূল্য পরিশোধ হোক বা না হোক) তারা কর্মে নিয়োজিত হিসেবে ধরা হয়েছে। তা ছাড়া যারা এক মাসের মধ্যে কোনো কাজ খোঁজেননি তারা শ্রমশক্তির বাইরে রয়েছেন।

আইএলও বেকারের যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে তা বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। কর্মে নিয়োজিত ৬ কোটি ৮ লাখ মানুষের মধ্যে কৃষিক্ষেত্রে আছেন দুই কোটি ৪৭ লাখ, শিল্পে এক কোটি ২৪ লাখ এবং সেবা খাতে যুক্ত দুই কোটি ৩৭ লাখ মানুষ। কর্মক্ষম তবে শ্রমশক্তির বাইরে থাকা ৪ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজারের মধ্যে নারীর সংখ্যা তিন কোটি ৬৩ লাখ ৩৩ হাজার এবং পুরুষ এক কোটি ১৯ লাখ ৪৭ হাজার।

Bootstrap Image Preview