শীতল যুদ্ধকালীন একটি পারমাণবিক অস্ত্র চুক্তি থেকে সরে আসার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এ পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। একই সঙ্গে এ ধরনের বিপজ্জনক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি দিয়েছে রাশিয়া। উল্লেখ্য, শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তিন দশক পুরনো চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসছে বলে জানান। খবর বিবিসি।
শনিবার ট্রাম্প জানান, তিনি ১৯৮৭ সালে স্বাক্ষরিত ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তির অবসান ঘটানোর পরিকল্পনা করছেন। রাশিয়া বহু বছর ধরে চুক্তিটি লঙ্ঘন করে আসায় এ পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
উল্লেখ্য, চুক্তিটিতে ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য ৫০০ কিলোমিটার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১৯৮৭ সালে তত্কালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান মিখাইল গর্ভাচেভ চুক্তিটি করেছিলেন।
এদিকে নিজেদের প্রকৃত পারমাণবিক অস্ত্র সীমিত রাখতে ও কমিয়ে আনতে গত পাঁচের দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া বেশকিছু যৌথ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু আইএনএফ বাতিল করা হলে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিশ্ব উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গত শতকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার শীতল যুদ্ধের প্রায় শেষ দিকে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
নেভাদায় এক প্রচারণা সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, আমি জানি না কেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা চুক্তিটি নিয়ে কোনো মধ্যস্থতা করেননি বা তা থেকে সরে আসেননি। আমরা রাশিয়াকে অস্ত্র তৈরি করে যেতে দিতে পারি না। চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে সম্ভাব্য মস্কো সফরের সময় মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে মস্কো ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে এমন খবরের পরিপ্রেক্ষিতে তত্কালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রাশিয়ার বিরুদ্ধে আইএনএফ চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেন। সে সময় ইউরোপীয় নেতারা চুক্তি থেকে সরে আসার চাপ দিলেও এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ পুনরায় অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু করবে বলে ওবামা চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেননি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রায়াবকভ বলেন, নিঃসন্দেহে এটা ভীষণ বিপজ্জনক পদক্ষেপ। এর ফলে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জড়ানোর পাশাপাশি ব্যাপক নিন্দাও তৈরি হবে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং কৌশলগত ভারসাম্য বহাল রাখার জন্য চুক্তিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে ছাড় পাওয়ার কৌশলের তীব্র নিন্দা জানায়। যুক্তরাষ্ট্র যদি 'অপটু ও অপরিণত' আচরণ অব্যাহত রাখে এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো থেকে সরে আসতে থাকে, তবে পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো উপায় থাকবে না। কিন্তু রাশিয়া সে পরিস্থিতিতে যেতে চায় না বলে জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, রাশিয়া আইএনএফ চুক্তি লঙ্ঘন করে নোভাটর নাইনএমসেভেনটুনাইন নামের একটি নতুন মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। রুশ ক্ষেপণাস্ত্রটি ন্যাটোর কাছে এসএসসি-এইট নামে পরিচিত। নতুন এ ক্ষেপণাস্ত্রের ফলে মস্কো স্বল্প সময়ের মধ্যে যেকোনো ন্যাটো দেশে পারমাণবিক হামলা চালাতে সক্ষম হবে বলে আশঙ্কা করছে ওয়াশিংটন।
অন্যদিকে চুক্তি লঙ্ঘনের কথা অস্বীকার করা ছাড়া রাশিয়া নতুন ক্ষেপণাস্ত্রটি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া এ ধরনের অস্ত্রকে প্রচলিত অস্ত্রের সস্তা বিকল্প হিসেবে দেখছে।