ওয়াহিদ সোহান, মালয়েশিয়া প্রতিনিধি
মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবপাচার ব্যবসায়ী মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি বাদলুর রহমান খানের প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বশান্ত হলো ৬৩ জন মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশী শ্রমিক। দুইদিন কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে অপেক্ষা করেও ৬৮ জন বাংলাদেশি শ্রমিককে গ্রহণ করেনি মালয়েশিয়ার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। বিমানবন্দর অভ্যন্তরে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর অবশেষে তাদের দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে দেশটির ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।
গত শনিবার বিকেলে (সাড়ে ৫টা) বাংলাদেশ বিমানের বিজি-০০৮৬-এর একটি ফ্লাইটে তারা ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে অবস্থিত প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফেরত আসা কর্মীদের সংখ্যা ৬৮ নয় বরং ৬৩ জন। তাদের সবারই বিএমইটির (জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো) স্মার্টকার্ড রয়েছে।
আরেকটি সূত্র বলছে, ৬৩ জন একই ফ্লাইটে এসেছে বাকীরা পরবর্তী ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছবে।
মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মালয়েশিয়ার সুপারম্যাক্স গ্লোব নামের একটি কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে এই ৬৮ জন পাঠিয়েছিল প্রান্তিক ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরিজম। তবে কর্মীদের চাহিদাপত্র (ডিমান্ড) এনেছিলেন মালয়েশিয়া বিএনপিনেতা ও ম্যানপাওয়ার ব্যবসায়ী ইঞ্জিনিয়ার বাদলুর রহমান খান। কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে এসব কর্মীর চাহিদাপত্র বিক্রি করেন তিনি। ফলে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি সুপারম্যাক্স গ্লোব নামের ওই কোম্পানিতে পাঠাতে কর্মী সংগ্রহ করে এবং তা প্রান্তিক ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরিজম ( জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অনুমোদিত ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির অন্যতম)-এর মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যায়।
গত ১১ অক্টোবর এই ৬৮ জন শ্রমিককে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে (বিজি-০৮২) কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে পৌঁছানো হয়। তারা স্থানীয় সময় ওই দিন দুপুর ২টায় বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এরপর থেকে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও তাদের রিসিভ করতে আসেনি কেউ। শ্রমিকদের গ্রহণ করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্যাসেজ এ্যাসোসিয়েটস-এর এমডি আরিফ আলম বাদলুর রহমান খান ও মি. লি নামের একজনকে ক্ষুদে বার্তা পাঠান। যেখানে তিনি ৬৮ জনকে প্রান্তিকের পাঠানো কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার ফলে শ্রমিকরা হতাশায় ভেঙ্গে পড়েন এবং কেউ কেউ অসুস্থও হয়ে পড়েন বলে জানা যায়। অবশেষে শনিবার দুপুরে তাদের বাংলাদেশ বিমানের (বিজি-০০৮৬) একটি ফ্লাইটে তুলে দেয় সেদেশের ইমিগ্রেশন।
এ ব্যাপারে মালয়েশিয়ার সাংবাদিকের একটা প্রতিনিধি দল কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা শ্রম কাউন্সেলর সায়েদুল ইসলাম ফোন রিসিভ করেননি।
তবে নাম না প্রকাশের শর্তে দূতাবাসের এক কর্মকর্তা ৬৮ জন কর্মীর ফেরত যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বাংলাদেশের কিছু ম্যানপাওয়ার ব্যবসায়ীর কারণে মাঝে মধ্যেই বিব্রত হতে হয় আমাদের। তাদের কারণে অনেক সময় শ্রমিকদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
এ ব্যাপারে প্যাসেজ এ্যাসোসিয়েটসের এমডি আরিফ আলমের সঙ্গে কথা হয় এই সাংবাদিকদের। তিনি বলেন, ফেরত আসা কর্মীগুলো প্রান্তিক পাঠিয়েছে, তাদের সাথে কথা বলুন। প্রান্তিক ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরিজমের মালিক গোলাম মোস্তফাকে কয়েকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি, হোয়াট’সঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা দিলেও রিপ্লাই পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত ম্যানপাওয়ার ব্যবসায়ী বাদলুর রহমান খানকে হোয়াট’সঅ্যাপে ফোন দিলেও রিসিভ করেননি। হোয়াট’সঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা দিলেও রিপ্লাই দেননি।