Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যে কারণে ইসির বৈঠক বর্জন করলেন কমিশনার মাহবুব

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৫:২১ PM
আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:৫৮ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে আবারও বৈঠক বর্জন করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। বর্জন করার চারটি কারণ জানিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে আছে, তাকে বক্তব্য রাখতে না দেয়া, তার প্রস্তাব অনুযায়ী কাজ না করা, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে উঠে আসা বিষয়বস্তু নিয়ে কমিশন সভায় আলোচনা না করা প্রভৃতি।

সোমবার বেলা ১১ টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশন সভা শুরু হয়। সভা শুরুর ৭ মিনিট পর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ প্রদান করে বের হয়ে আসেন মাহবুব তালুকদার।

নোট অব ডিসেন্টে তিনি লিখেছেন, নির্বাচন কমিশন কোনোভাবেই আমার অধিকার খর্ব করতে পারে না, বাকস্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা আমার সংবিধানপ্রদত্ত মৌলিক অধিকার। এমতাবস্থায় অনন্যোপায় হয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট প্রদান করছি এবং প্রতিবাদ স্বরূপ কমিশন সভা বর্জন করছি। কমিশন সভায় তাকে বক্তব্য উপস্থাপন করতে না দেয়ার বিষয়ে কমিশনারদের ‘অভিন্ন অবস্থান’ তাকে ‘বিস্মিত ও মর্মাহত’ করেছে।

এদিকে মাহবুব তালুকদার সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলেও অন্যদের নিয়ে বৈঠক চালিয়ে যান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। বৈঠকে কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ৫ দফা প্রস্তাব দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সুযোগ না পাওয়ায় ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে তিনি বেরিয়ে যান।

তার দাবিরগুলোর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচনী দায়িত্বে সেনাবাহিনীর কার্যপরিধি নির্ধারণ, সবার জন্য সমান সুযোগ রেখে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন, ভোটে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, ইসির সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সরকারের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। তবে লিখিতভাবে এ দফাগুলো ৮ অক্টোবর ইসিকে জানিয়েছিলেন তিনি। সোমবার এ বিষয়ে আবারও বক্তব্য দিতে চেয়েছিলেন তিনি।

ওই পাঁচ দফা প্রস্তাব কমিশন সভার কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করারও অনুরোধ করেন এ নির্বাচন কমিশনার।

মাহবুব তালুকদার বলেছেন, এসব ঘটনায় তিনি বিস্মিত ও মর্মাহত হয়েছেন। আর অনুন্যাপায় হয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন।

‘নোট অব ডিসেন্ট’ এই নির্বাচন কমিশনার লেখেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ অংশীদারত্বমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে কতিপয় প্রস্তাবনা' শিরোনামে গত ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি তার বক্তব্য আজকের নির্বাচন কমিশন সভায় উপস্থাপন করতে সিইসি বরাবরে নোট পাঠান। পরবর্তীতে এর একটি সংশোধনীও পাঠানো হয়। পরে ৮ অক্টোবর কমিশন সচিবালয় থেকে নোটের মাধ্যমে আমাকে জানানো হয়, তারর প্রস্তাবনাগুলি ১৫ অক্টোবর ৩৬তম কমিশন সভায় উত্থাপন করার জন্য সিইসি তাকে অনুরোধ জানিয়েছেন।

দ্বিতীয় অংশে মাহবুব তালুকদার লিখেন, গত ৩১ জুলাই ২০১৭ থেকে ২৪ অক্টোবর ২০১৭ পর্যন্ত প্রায় তিন মাস নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে। এতে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অংশীজন ছাড়াও ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। পরে তা একত্রিত করে বই আকারে প্রকাশ করা হয়। তবে সংলাপের বিষয়ে আজ পর্যন্ত কমিশন সভায় কোনো আলোচনা করা হয়নি। সংলাপের কোনো কার্যকারিতা পরিলক্ষিত না হওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে আমি এটির পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এবং অংশীজনের সংলাপের আলোকে উপরোক্ত শিরোনামে প্রস্তাবনাসমূহ লিপিবদ্ধ করে কমিশন সভায় পেশ করার নিমিত্তে কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানাই।’

তৃতীয় অংশে মাহবুব লিখেন, ‘আমার প্রস্তাবনাসমুহ যাতে কমিশন সভায় উপস্থাপনা করতে না দেয়া হয়, এজন্য তিন জন মাননীয় নির্বাচন কমিশনার এক এবং অভিন্ন চিঠি লিখে পৃথক পৃথক নোটরে মাধ্যমে মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাদের সঙ্গে একমত হওয়ার আমাকে প্রস্তাবনাসমূহ করতে দেয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন সভায় আমার বক্তব্য উপস্থাপন করতে না দেয়ায় তাদের অভিন্ন অবস্থান আমাকে বিস্মিত ও মর্মাহত করেছে।’

চতুর্থ অংশে মাহবুব লিখেন, ‘বাক প্রকাশের স্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধান প্রদত্ত আমার মৌলিক অধিকার। নির্বাচন কমিশন কেনোভাবেই আমার এই অধিকার খর্ব করতে পারে না। এমতাবস্থায় অনুন্যাপায় হয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের এরূপ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ‌নোট অব ডিসেন্ট প্রদান করছি এবং প্রতিবাদস্বরূপ নির্বাচন কমিশন সভা বর্জন করছি।’

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ৩০ আগস্টও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (ভিন্নমত পোষণ) দিয়ে ইসির সভা বর্জন করেছিলেন এই মাহবুব তালুকদার। ওই সময় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করে আলোচনার সভাটি বর্জন কছিলেন তিনি।

এরপর দেড় মাসের বিরতি দিয়ে আজ সোমবার ডাকা হয় ইসির কমিশন সভা। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বর্তমান কমিশন গঠনের পর দুই কমিশন সভার মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ সময়ের ব্যবধানে ডাকা সভা।

Bootstrap Image Preview