খনিজ সম্পদ ভূ-তাত্ত্বিক দিক থেকে বাংলাদেশের ভূ-ভাগের বেশিরভাগই বঙ্গীয় অববাহিকার (বেঙ্গল বেসিন) অন্তর্গত হলেও গাইবান্ধায় এখন পর্যন্ত কোন খনিজ সম্পদের সন্ধান মেলেনি। আর এ কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক থেকে এখনও অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে এ জেলার মানুষ।
কয়লা পাওয়ার আশায় উত্তরের জেলা গাইবান্ধায় সেই সত্তরের দশকে একবার ছাড়া আর কোন খনন পরিচালনা করেনি রাষ্ট্রীয় খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর। এছাড়া পেট্রোবাংলা কখনো সার্ভে বা খনন পরিচালনা করেছে কিনা তা জানা না গেলেও গাইবান্ধায় সাইসমিক সার্ভে করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বাপেক্স।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৯৭২ সালের ১০ নভেম্বর মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরকে (জিএসবি) তেল ও গ্যাস ছাড়া দেশের অন্যান্য খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। একই বছরের ২৬ মার্চ গঠিত বাংলাদেশ খনিজ, তৈল ও গ্যাস করপোরেশনকে ১৯৭৪ সালের ২২ আগস্ট বাংলাদেশ তৈল ও গ্যাস করপোরেশন নামে পুনর্গঠন করে নামকরণ করা হয় পেট্রোবাংলা।
১৯৮৯ সালের ১ জুলাই পেট্রোবাংলার অনুসন্ধান পরিদফতরকে অবলুপ্ত করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) নামে পেট্রোবাংলার অধীনে একটি স্বতন্ত্র কোম্পানি গঠন করা হয় ও পরে ২০০০ সালে অনুসন্ধান কার্যক্রমের পাশাপাশি উৎপাদন কোম্পানি হিসেবে পুনর্গঠন করা হয় বাপেক্সকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিএসবি গাইবান্ধার পাশ্ববর্তী জেলা দিনাজপুরে দুইটি, রংপুরে ও জয়পুরহাটে একটি করে কয়লা খনি, জয়পুরহাটে দুইটি চুনা পাথর খনি, দিনাজপুরে তিনটি ও জয়পুরহাটে একটি সাদা মাটি খনি, দিনাজপুরে তিনটি ও রংপুরে একটি কঠিন শিলার (পাথর) মজুত আবিস্কার করেছে। দিনাজপুরে তিনটি কাঁচ বালির মজুত, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাটে নুড়ি পাথরের সন্ধান লাভও জিএসবির অবদান। এ ছাড়া সম্প্রতি জামালপুরের মাদারগঞ্জে পাওয়া গেছে একটি গ্যাসের খনি।
আশেপাশের এসব জেলায় বিভিন্ন প্রকার খনিজ সম্পদ পাওয়া গেলেও গাইবান্ধায় এখন পর্যন্ত কোন খনিজ সম্পদের খনি আবিস্কৃত হয়নি। মানুষের বিশ্বাস গাইবান্ধার আশেপাশের জেলাগুলোতে যদি খনিজ সম্পদ পাওয়া যায় তবে এ জেলাতেও অবশ্যই খনিজ সম্পদ রয়েছে। তাই জিএসবি ও বাপেক্সের কাছে খনিজ সম্পদের সার্ভে ও কূপ খনন কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য দাবি করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। আর তারা কখনও গাইবান্ধায় সার্ভে করেছে কিনা তা খোঁজ নিয়ে জানা যায় নি।
এ দিকে, একটি সূত্রে জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ কুইন্সল্যান্ডের ভূপদার্থ বিজ্ঞানের গবেষক ডিওন ওয়েদারলির মতে, ভূমিকম্পের প্রচন্ড তাপ ও চাপের ফলে ভেঙ্গে যায় সেখানকার পানির কণাগুলো। এতে বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান খনিজ পদার্থের সৃষ্টি হয়। তখন অন্যান্য খনিজ পদার্থের মতো স্বর্ণের উপাদানগুলো সেখানে বালি ও কাদা মিশ্রিত থাকে। এভাবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের খনিও সৃষ্টি হতে পারে।
গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সাবু বলেন, গাইবান্ধাতেও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কেননা আগে গাইবান্ধা জেলার মূল ভূখন্ড নদীর তলদেশে ছিল এবং ১৯৯৮ সালে শক্তিশালী ভূমিকম্পের ফলে নদী তলদেশের উত্থান ঘটে এবং স্থলভূমিতে পরিণত হয়। এই ভূমিকম্পের ফলে এ জেলার ভূপৃষ্ঠের যথেষ্ট পরিবর্তনও ঘটে। আর বিজ্ঞানীদের গবেষণামতে যদি ভূমিকম্পের ফলে মূল্যবান খনিজ পদার্থের সৃষ্টি হয় তাহলে এ জেলাতেও স্বর্ণের মতো মূল্যবান খনিজ সম্পদ পাওয়া অসম্ভব নয়।
ঢাকাস্থ বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের উপ পরিচালক (খনন প্রকৌ:) মো. মহিরুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৮-৭৯ সালের দিকে গাইবান্ধায় একবার কয়লা অনুসন্ধানের জন্য কূপ খনন করা হয়েছিল। তবে সেখানে কয়লা বা কোন খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, রংপুর-দিনাজপুর আর গাইবান্ধার মাটির নিচের স্ট্রাকচার আলাদা। সুতরাং গাইবান্ধার পাশাপাশি জেলায় পাওয়া গেলেও গাইবান্ধাতে খনিজ সম্পদ পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
বাপেক্সের খনন পরিচালনা বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, গাইবান্ধায় সাইসমিক সার্ভে রিপোর্টে পজিটিভ সাইন পাওয়া যায়নি। তাই খননও করা হয়নি। তবে বাপেক্সের একটি সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গাইবান্ধায় কোন সার্ভে পরিচালনা করেনি প্রতিষ্ঠানটি।