Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

হবিগঞ্জে ডাঃ সুবিমলের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত ও যৌন হয়রানির অভিযোগ

আজিজুল ইসলাম সজীব, হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ 
প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৩৭ PM
আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৩৭ PM

bdmorning Image Preview


হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সুবিমল চন্দ'র বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর রোমেনা বেগম সিলেট বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক মোঃ কুতুব উদ্দিন চৌধুরীর নিকট লিখিতভাবে এমন অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ডাক্তার সুবিমল চন্দ নিজ এলাকা বানিয়াচংয়ে যোগদানের পর থেকে নানা ধরণের অনিয়ম করে যাচ্ছেন। অনিয়মের মাধ্যমে তিনি গত অর্থ বছরে ক্লিনিক অধিক্ষেত্রের ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা আত্মসাত করেন। তার অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে নিজে দুর্ব্যবহারসহ স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অফিসে ডেকে নিয়ে তাদের দিয়ে অধীনস্থ কর্মচারীদের ভয়ভীতি দেখান। 

এছাড়াও প্রতিবাদ করলে শান্তিতে চাকরি করতে দেবেন না, বদলি করে দেবেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের কাছে অভিযোগ করেও কাজ হবে না, তারা তার নিজস্ব লোক ইত্যাদি বলে হুমকি দেন।

অভিযোগকারী রোমেনা আরো উল্লেখ করেন, গত এক বছর নিজের টাকায় ইমপ্রেস্ট ফান্ড ক্যাম্প পরিচালনার পাওনা টাকা চাওয়ায় ডাক্তার সুবিমল তাকে ফাঁসাতে পরিবার পরিকল্পনা সহকারী রিপন দেবনাথ ও পিয়ন আবুল কালামের মাধ্যমে ইমপ্রেস্ট ফান্ডের ফাইল চুরি করান। এছাড়া তিনজনে মিলে রোমেনাকে যৌন হয়রানি করেন। 

গত জুলাই মাসে ডাক্তার সুবিমল ক্লিনিক অধিক্ষেত্রের সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেবেন বলে রোমেনার নিকট ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করলে তন্মধ্যে রোমেনা ২০ হাজার টাকা দেন এবং অবশিষ্ট টাকার জন্য ডাক্তার সুবিমল পিয়ন কালামের মাধ্যমে রোমেনাকে চাপ প্রয়োগ করেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এদিকে প্রেরকবিহীন চিঠির মাধ্যমে ডাক্তার সুবিমলের স্বাক্ষর সম্বলিত কিছু বিল ভাউচার ডাকযোগে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে প্রেরণ করা হয়। এসবের সাথে প্রেরিত বেনামি চিঠিতে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে ডাক্তার সুবিমল কর্তৃক সরকারি অর্থ আত্মসাত ও অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে কর্মচারীদের শ্রান্তি বিনোদন, ভ্রমণ ভাতা বিল ও স্যাটেলাইট ভাতা বিল কম দিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। 

অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে সরেজমিন বিভিন্ন দোকানে গিয়ে বানিয়াচং উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের মালামাল ক্রয়ের ভাউচার দেখালে দোকানিরা এসব ভাউচার তাদের দোকানের নয় বলে দোকান মালিক জানান। তারা এসব ভাউচারকে বানোয়াট ও ভুয়া ভাউচার হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কোন কোন দোকানি তাদের দোকানের নামে ভুয়া ভাউচার তৈরি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ডাক্তার সুবিমলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান। এই ভাউচারগুলোর মধ্যে গায়েবি দোকানের ভাউচারও রয়েছে।   

হবিগঞ্জ কালীবাড়ী রোডে শামীম স্টোর নামে একটি দোকান থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকার মালামাল ক্রয় করা হয়েছে মর্মে একটি ভাউচার পাওয়া গেলেও এ নামে হবিগঞ্জ কালীবাড়ী রোডে কোন দোকান পাওয়া যায় নি।

এ রোডে প্রায় ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন এমন দোকানীরা জানান, কোনদিন এই দোকানের সাইনবোর্ড পর্যন্ত তাদের চোখে পড়েনি বা দোকানের মালিকক শামীম আহমেদকেও তারা চেনেন না। এমন দোকানের ভাউচারও রয়েছে যে দোকানে যেসব পণ্য কখনোই বিক্রয় করা হয় না সেসব পণ্য ক্রয় করার কথাও ভাউচারে লেখা। এছাড়া যাচাইকৃত প্রতিটি ভাউচার একই হাতের লেখা। 

অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে পরিবার পরিকল্পনার মাঠকর্মীদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ডাক্তার সুবিমল স্যাটেলাইট ভাতা বিলসহ এমন কোন বিল নেই যা থেকে শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ টাকা কেটে রাখেন নি। 

তারা আরো বলেন, শান্তি বিনোদন ও ভ্রমণ ভাতা বিল ব্যাংক একাউন্টে পরিশোধের নিয়ম থাকলেও ৩০/৪০ পার্সেন্ট টাকা আত্মসাত করতে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে সব সময় হাতে হাতে পরিশোধ করে থাকেন। 

কর্মচারীদের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন দেবার জন্যও তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নেন। আইওডি নষ্ট বাবদও কর্মচারীদের কাছ থেকে টাকা দাবি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিটি নষ্ট আইওডি'র জন্য ১৫ ডলার করে টাকা দাবি করেন ডাক্তার সুবিমল। 

এছাড়া জন্ম বিরতিকরণের স্থায়ী পদ্ধতি ক্যাম্পে মেরী স্টোপস থেকে ক্লায়েন্ট রেফারকারীর নাস্তা ববাদ বরাদ্দকৃত জনপ্রতি একশত টাকাও নাস্তা না করিয়ে ডাক্তার সুবিমল আত্মসাত করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

আয়াদের নামে ভ্রমণ ভাতা বিল তৈরি করার নিয়ম না থাকলেও ডাক্তার সুবিমল ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে তাদের নামে ভ্রমণ ভাতা তৈরি ও উত্তোলন করে আত্মসাত করেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। 

সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ডাক্তার সুবিমলের অফিস টাইম সকাল ৯টা থেকে ৫টা হলেও তিনি বিকাল ৩টা থেকে প্রতিদিন বানিয়াচঙ্গের বড়বাজার শাপলা মেডিকেলে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন। 

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার স্বাক্ষরিত প্রেসক্রিপশনেও পাওয়া যায় যাতে সময় এবং তারিখ উল্লেখ রয়েছে।

এসব অনিয়ম দুর্নীতি ও যৌন হয়রানির ব্যাপারে ডাক্তার সুবিমল চন্দ'র বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদেরকে কোন বক্তব্য দেন নি। 

এব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ পরিচালক ডাঃ নাসিমা খানম ইভা'র যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডাক্তার সুবিমলের বিরুদ্ধে আমার কাছে কোন ধরণের অভিযোগ আসে নি। এমনকি লিখিত বা মোখিক কোন অভিযোগ পাই নি। সরকারি কিছু নিয়ম কানুন মেনে আমাদের চলতে হয়। তবে অভিযোগ আমাদের কাছে আসলে দোষী যেই হোক নিয়ম অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

Bootstrap Image Preview