Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘মনোনয়ন লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছাড় নয়’

ঠাকুরগাঁও-৩ আসন

খুরশিদ আলম, রানীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি 
প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:৩৩ PM
আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:৩৩ PM

bdmorning Image Preview


আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রানীশংকৈল ও পীরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত ঠাকুরগাঁও-৩ আসন।এ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কার্স পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজেদের প্রতি সমর্থন আদায়ে নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক প্রচার প্রচারণার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। এ আসনটি নিজেদের দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন প্রত্যেকটি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। মনোনয়ন লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছাড় নয় অবস্থানে রয়েছেন বর্তমানে। 

স্বাধীনতার পর থেকে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীর কাছে নির্বাচনে হেরে যান আ’লীগ। পরবর্তীতে নবম সংসদ নির্বাচনে মহাজোট হওয়ার কারণে আ’লীগের প্রার্থীর বদলে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন দেয় আ’লীগ। দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় মহাজোটের বৃহৎ শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থীর মাঝে ভোটযুদ্বে আসনটি লুফে নেয় ওয়ার্কাস পার্টি। আগামী নির্বাচনেও জাতীয় সংসদের ৫ নম্বর আসনটিতে জোট বা মহাজোটের সমীকরণ সামনে চলে আসতে পারে। সেই ক্ষেত্রে মনোনয়নের জন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কার্যত লড়াই হবে শরিক দলের নেতাদের।

অন্যদিকে বিএনপি এ আসনে কখনোই জয়ী হতে পারেনি। তবুও আশা ছাড়েনি দলটি। এখন পর্যন্ত দলের একজন নেতাকে মাঠে তৎপর থাকতে দেখা যাচ্ছে।

২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ইমদাদুল হককে পরাজিত করেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজ উদ্দীন আহম্মদ। আর তখন থেকেই আসনটি হাতছাড়া হয় আ.লীগের। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান সাবেক সংসদ সদস্য ইমদাদুল হক, জাতীয় পার্টি থেকে হাফিজ উদ্দীন আহম্মদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুল্লাহ শহীদ। কিন্তু মহাজোট হওয়ার কারণে সেইবার কেন্দ্রের নির্দেশে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হয় আ.লীগ প্রার্থী ইমদাদুল হককে। তবে মাঠে থেকে যান ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী।

নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে ওই নির্বাচনে বিএনপিকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন মহাজোটের জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজ উদ্দীন আহম্মদ। তবে বিএনপির প্রার্থী জাহিদুর রহমান অন্যবারের চেয়ে সেবার প্রায় ছয় গুণ ভোট পেয়েছিলেন। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান ইমদাদুল হক, জাতীয় পার্টি থেকে হাফিজ উদ্দীন আহম্মদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে অধ্যাপক ইয়াসিন আলী। আবারও কেন্দ্রের নির্দেশনায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হয় আ.লীগের ইমদাদুল হককে। আবারও মাঠে থেকে যান ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলী। নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজ উদ্দীনের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ান ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলী। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা সমর্থন দেওয়ায় ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জয়লাভ করেন ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলী।

এদিকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ও রাণীশংকৈল উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিনা জাহান লিটা, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ইমদাদুল হক।

আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ইমদাদুল হক আবারো দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই আসনটিতে দীর্ঘদিন ধরে যোগ্য প্রার্থী না থাকায় এলাকার তেমন উন্নয়ন হচ্ছে না। তাই আওয়ামী লীগের হাতকে আরো শক্তিশালী ও এলাকার উন্নয়ন করতে সাধারণ মানুষ তাঁকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। তিনি প্রার্থী হলে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন বলেও আশাবাদী ইমদাদুল হক।

মাঠে বসে নেই ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াসিন আলী। সংসদ সদস্য ইয়াসিন আলী বলেন, সততার সঙ্গে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। সাধ্য অনুযায়ী এলাকার উন্নয়নে ভুমিকা রাখছেন। সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে এলাকার উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আগে থেকেই তিনি খুব স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন। এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে সহযোগিতা করে আসছেন। এছাড়াও সম্প্রতি তার নির্বাচনী দুই উপজেলায় প্রায় ৩৫ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন বরাদ্দ শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে পাশ করিয়েছেন। রাস্তা ঘাট মন্দির মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজও তিনি ব্যাপক করেছেন বলে মন্তব্য করেন।

তিনি জানান, ১৯৮০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সে সময় তিনি দীর্ঘদিন ছাত্র ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৮২ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। বর্তমানে তিনি ওয়ার্কার্স পার্টির ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির সভাপতি। ইয়াসিন আলী বলেন, তিনি সাধারণ মানুষের পাশেই রয়েছেন এবং তাদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। আগামীতে দলীয়ভাবে মনোনয়ন পেলে তিনি আবারও বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন বলে আশা করছেন।

দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা জাহান লিটা বলেন, তিনি ১৯৮৬ সাল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতির পদে রয়েছেন। এখন পর্যন্ত তিনি দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৪ সালে বিপুল সমর্থন নিয়ে তিনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর একই সময় তিনি ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হন।

সেলিনা জাহান লিটা আরো বলেন, তাঁর বাবা প্রয়াত আলী আকবর ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি আওয়ামী লীগের একজন আদর্শবান, সৎ ও বঙ্গবন্ধুর একান্ত বিশ্বস্ত ছিলেন। এছাড়া ২০০১ সাল থেকে এই আসনে আওয়ামী লীগের কোনো দলীয় সংসদ সদস্য না থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই সব দিক বিবেচনা করে এবার তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইবেন।

অন্যদিকে বিএনপির বর্তমান ভোট ব্যাংক ঠাকুরগাও-৩ আসনে আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে চর্তুথ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে এ আসনের দুই উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। সেই ধারণায় বিএনপি’র প্রার্থীর অবস্থানও বর্তমানে মজবুত। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী জাহিদুর রহমান জাহিদকে মাঠে তৎপর থাকতে দেখা যাচ্ছে। দলীয় কর্মীদের নিয়ে চায়ের দোকানে আড্ডা থেকে শুরু করে এলাকার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। জাহিদুর রহমান জাহিদ বলেন, তিনি পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি। অনেক কষ্ট করে এই উপজেলায় তিনি দলকে সুসংগঠিত করে রেখেছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এবার তাঁর হয়ে নির্বাচন করবে। গ্রামে অনেক ভোট রয়েছে বিএনপির। বিএনপি থেকে তিনি মনোনয়ন পেলে এবার এ আসনে দলের বিজয় সুনিশ্চিত। তাই তিনি এবারো মনোনয়ন চাইবেন।

এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার একটু আগে থেকেই দলকে সুসংগঠিত ও কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ করছেন জাতীয় পার্টিও প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দীন আহম্মদ। এবার তিনি এ আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। হাফিজ উদ্দীন আহম্মদ বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টির জন্য নিবেদিত প্রাণ। দলের ও সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে আসছেন তিনি। সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় তিনি তাঁর এ নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে এ অঞ্চলের মানুষ  অত্যন্ত ভালোবাসে। এ আসনে তিনি জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচিত হলে আবারও এ এলাকার শিক্ষা, কৃষি, চিকিৎসাসহ সব ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে বলে হাফিজ উদ্দীন আহম্মদ দাবি করেন।

Bootstrap Image Preview