Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা শুনবে কে?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০১৮, ১২:২০ PM
আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮, ০৪:০৭ PM

bdmorning Image Preview


আরিফ চৌধুরী শুভ।।

পড়াশুনার মানে যতটা এগিয়ে, পরিবেশের দিকে ঠিক ততটাই এখনো পিছিয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি)। এত দামী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন করুণ অবস্থা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না অনেকেরই। কিন্তু এই নির্মম সত্যের মুখোমুখি এখানকার প্রায় ৪হাজার শিক্ষার্থী। তবে এই অবস্থার জন্য কর্তৃপক্ষের একমাত্র অবহেলা আর গাফলতিকেই দায়ী করেছেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই সকল অনিয়ম চোখের সামনে দেখলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরবতায় আক্ষেপ ও হতাশ শিক্ষার্থীরা। তারা খুব দ্রুতই এই অবস্থার পরিবর্তন চান।

বাংলাদেশের ৪০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নোবিপ্রবি একটি এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালগুলোর র‌্যাংকিংয়ে এর অবস্থান পঞ্চম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯টি ডিপার্টমেন্ট রয়েছে যার বেশিরভাগই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভর্তি পরীক্ষার সময় উপচেপড়া ভীড় জমে শিক্ষার্থীদের। কিন্তু নোবিপ্রবিতে ভর্তি হবার পরপরই শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। নিজ ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের কাছে অনেকটা জিম্মি থাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত শিক্ষার্থীরা নানামুখি সমস্যার সম্মুখি হয়ে কখনো মুখ খোলেন, কখনো নিরবে সহ্য করেন। কারণ কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন সমস্যার কথা বলেও তেমন কোন প্রতিকার পাওয়ায় যায় না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশটা দিনদিনই নোংরা হয়ে যাচ্ছে। পুরো ক্যাম্পাসে গরু আর কুকুরের আনাগোনা। গরু আর কুকুর তাড়াতে নেই প্রশাসনিক উদ্যোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সমস্যাও রয়েছে প্রকট। বহিরাগতরা দলবল নিয়ে যেকোন সময় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে এবং ঘুরে বেড়ায়। তারা শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। কোথাও দুজন শিক্ষার্থীকে একসাথে বসে থাকতে দেখলে ঘেরাও করে চাদা আদায় করে। চাদা না দিলে বিভিন্ন আপত্তিকর কথা বলে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চাদা দিতে বাধ্য করে। অাগে এই অবস্থা বেশি থাকলেও এখন একটু কমেছে।

সন্ধার পর পরই পুরো ক্যাম্পাসের বেশিরভাগ জায়গায় ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। লাইট নেই পর্যাপ্ত। যেগুলো আছে সেগুলো নষ্ট হয়ে আছে। হলগুলোতে রাজনৈতিক আধিপত্যের কারণে বাধ্য হয়ে অনেক শিক্ষার্থী সাধ্য না থাকা সত্ত্বেও ক্যাম্পাসের বাইরে বাসা ভাড়া করে থাকে। স্থানীয় ও বহিরাগতদের হাতে আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা লাঞ্চিত হবার ঘটনা অনেক। ক্যান্টিনে এক কাপ চা বিক্রি হয় ১০ টাকা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে তার দাম অর্ধেক কম। অন্যান্য জিনিসের দাম এত চওড়া যে তা অনেক শিক্ষার্থীর ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। ফলে বাধ্য হয়ে বাড়তি দামেই ক্যান্টিনের খাবার খেতে হয় শিক্ষার্থীদের। ক্যান্টিন মালিকদের সাথে শিক্ষার্থীদের দুব্যবহারের ঘটনা নতুন কিছু নয়। কথায় কথায় স্থানীয় প্রভাব দেখায় তারা।

ডিপার্টমেন্টগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওয়াশরুম সংকট রয়েছে। যেগুলো আছে তার বেশির ভাগই থাকে অপরিস্কার এবং তালাবদ্ধ। হাজী ইদ্রিস অডিটোরিয়াম পাঁচ তলা বিশিষ্ট। এই অডিটোরিয়ামের ২য়, ৩য় এবং ৪র্থ তলায় সামাজিক বিজ্ঞান, বাংলাদেশ এবং লিবারেশন স্টাডিজ এবং পরিসংখ্যান বিভাগের ক্লাস করানো হয়। অথচ এখানকার কোন তলাতেই ছাত্রীদের জন্য আলাদা  ওয়াশরুম নেই বলে জানান শিক্ষার্থীরা।  তারা অভিযোগ করেন, ছাত্রীদের ওয়াশরুমগুলো শিক্ষকরা ব্যবহার করে তালা ঝুলিয়ে রাখেন। বাধ্য হয়ে ছেলেদের ওয়াশরুমই ব্যবহার করতে হয় ছাত্রীদের। ছেলেদের ওয়াশরুম ব্যবহার করতে গিয়ে ছাত্রীরা অনেক অসস্থিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেছেন, ছেলেদের ওয়াশরুম ব্যবহার করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার, ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানদের জানালেও তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। শুধু আশ্বাস দেন। 

ছাত্রীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে হাজী ইদ্রিস অডিটোরিয়ামের বিভিন্ন তলায় ক্লাস নেওয়া তিন ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানের সাথে বিডিমর্নিংয়ের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। শুধু মাত্র বাংলাদেশ এন্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্রীরা কেন ছেলেদের ওয়াসরুম ব্যবহার করবে। তাদের জন্যে আলাদা ওয়াশরুম রয়েছে।শিক্ষকদের জন্যেও অালাদা একটি ওয়াসরুম রয়েছে। তালা ঝুলানোর বিষয়টি আমার জানা নেই। আমার সাথে ছাত্রীরা দেখা করেছে। তাদের অভিযোগ ছিল যে ওয়াশরুম আছে তা অপরিস্কার থাকে। আমি সেই সমস্যার সমাধান করেছি। তবে ওয়াসরুম সংকটের কারণে ছেলেরা ভুলে অনেক সময় মেয়েদের ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।

হাজী ইদ্রিস অডিটোরিয়ামে ক্লাস করতে আসা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের ছাত্রীদের ওয়াসরুমে ছেলেরা ঢুকে পড়ে এমন প্রশ্ন শুনে বিব্রত নোবিপ্রবির প্রক্টর প্রফসর ড. এস এম নজরুল ইসলাম। তিনি বিডিমর্নিংকে বলেন, এটাতো আমার দেখার বিষয় না। কিন্তু ওয়াশরুম না থাকলেওতো ছেলেরা মেয়েদের ওয়াশরুম ব্যবহার করার কথা না। আমাদের কাছে কেউ এ ব্যাপারে লিখিত দিলে ব্যবস্থা নিবো।

ক্যাম্পাসের এমন নানা সমস্যা ও আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে গত ৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা সাক্ষাত করেন নোবিপ্রবির উপাচার্য প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামানের সাথে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বিডিমর্নিং থেকে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, নোবিপ্রবির উপাচার্য প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামান ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকদের সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। ক্যাম্পাসের পরিবেশ, পড়াশুনা, পরিবহন সমস্যা, হল সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা হয়েছে। তবে নোবিপ্রবি প্রশাসন দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে এইসব সমস্যার সমাধানে।

উপাচার্য আবাসিক সমস্যার ব্যাপারে বলেন, আমার যোগদানের পরেই আবাসিক সমস্যা কিছুটা সমাধান হয়েছে। ৩টা হল চালু আছে বর্তমানে। বঙ্গমাতা ও বঙ্গবন্ধু নামে আরো দুটি হলের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই দুটি হল চালু হলে আরো ১১০০ শিক্ষার্থীর আবাসন সমস্যার সমাধান হবে।

পরিবহন সমস্যার কথা উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, নোবিপ্রবিতে বর্তমানে ২৯টি ডিপার্টমেন্টে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্যে ২ তলার ৮টি বিআরটিসি বাস এবং ১ তলার ৪টি বাস চালু আছে। যদিও চাহিদার তুলনায় বাস অনেক কম কিন্তু এই মাসে আরো একটা বাস এবং পরের মাসে আরো ৪টা বাস শিক্ষার্থীদের জন্যে চালু করা হবে।

তবে বহিরাগতদের কিভাবে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা যায় সে ব্যাপারে জরুরি কোন পদক্ষেপ নিবেন কিনা এমন প্রশ্নে নোবিপ্রবির প্রক্টর প্রফেসর ড. এস এম নজরুল ইসলাম বিডিমর্নিংকে বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়েছি অক্টোবরের ১ তারিখে। আসলামইতো মাত্র। সাংবাদিকদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এরই মধ্যে আমরা কথা বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের আনাগোনা আছে এটা সত্যি। আমি যেহেতু দায়িত্ব নিয়েছি, সেহেতু কমিটি করে সিদ্ধান্ত নিবো কিভাবে কি করা যায়। কিন্তু কবে নিবো এই সিদ্ধান্ত সেটি ঠিক এই মুহুর্তে বলতে পারছি না। আপনারা চাইলে রেজিস্টারের সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে পারেন।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখিত সমস্যা সম্পর্কে জানতে নোবিপ্রবির রেজিস্টার প্রফেসর মো. মমিনুল হককে বার বার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

 

Bootstrap Image Preview