Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা; কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০১৮, ১০:৫৯ AM
আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৮, ০১:০২ PM

bdmorning Image Preview


বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় ১৪ বছর আগে আওয়ামী লীগের জনসমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার মামলার রায় আজ বুধবার। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করবেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির বহু নেতা-কর্মী আহত হন।

রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করাই ছিল হামলার প্রধান উদ্দেশ্য। এ ছাড়া জঙ্গি তৎপরতার সুযোগ করে দেওয়া, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের ক্ষমতায় আসার পথ সুগম করাও ছিল উদ্দেশ্য।

হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়ে ৫২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ জমা দেয় পুলিশ। এর মধ্যে রাজনৈতিক নেতা আছেন ৮ জন, পুলিশের কর্মকর্তা ৮ জন, সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা আছেন ৫ জন এবং পাঁচটি জঙ্গি সংগঠনের ৩১ জন। ২২৫ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে বলেছেন, ২১ আগস্ট হামলার সঙ্গে জড়িত সব আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে প্রমাণ করতে পেরেছে। তাই আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা চান।

একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মোট ৫২ আসামির মধ্যে তিন জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে অন্য মামলায়। বাকি ৪৯ জন আসামির মধ্যে কারও বিরুদ্ধে আছে সরাসরি গ্রেনেড হামলা চালানো, কারও বিরুদ্ধে পরিকল্পনা, কারও বিরুদ্ধে গ্রেনেড সরবরাহসহ সহযোগিতা এবং কারও বিরুদ্ধে হামলাকারীদের পালাতে সহযোগিতা এবং কারও বিরুদ্ধে আলামত নষ্ট এবং তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অভিযোগ রয়েছে।

২০০৫ সালের ১ অক্টোবর গ্রেফতারের পর টিএফআই (টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন) সেলে মুফতি হান্নান যে জবানবন্দি দিয়েছেন তাতে তিনি হামলাকারী হিসেবে কাজল, জান্দাল, আনিসুল মুরসালিন  ও তাঁর ভাই মহিবুল মুত্তাকিন, মাওলানা আবু বকর, শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল , উজ্জ্বল ওরফে রতন , মাসুদ , আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, ইকবাল, জাহাঙ্গীর আলম, মহিবুল ওরফে অভি, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ, খলিল, শুভ ওরফে তৌফিক, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, বাবু , ফেরদৌস, ও মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ারের নাম জানান।

২০১১ সালে জমা দেয়া সম্পুরক অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৪ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে আল মারকাজুল ইসলামীর একটি মাইক্রোবাসে করে হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নান, মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা তাজউদ্দিন আল যোগে বনানীর হাওয়া ভবনে যান। তাদের সঙ্গে আল মারকাজুলের (এনজিও) কর্মকর্তা আবদুর রশিদও ছিলেন।

তারা তারেক রহমান, বাবর, হারিছ চৌধুরী, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠকে জঙ্গিরা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর হামলার বিষয়ে সহযোগিতা চান। বৈঠকে মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীদের তারেক জিয়া সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

হাওয়া ভবনে বৈঠকের পর ১৮ আগস্ট (২০০৪) তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমন্ডিতে সরকারি বাসায় মাওলানা আবু তাহের, তাজউদ্দিন ও মুফতি হান্নান বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর, পরিবহন-মালিক মো. হানিফ ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।

মামলায় বেশ কয়েকজন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২১ আগস্ট হামলার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞাতসারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের নির্দেশে গ্রেনেড সরবরাহকারী তাজউদ্দিনকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ কাজে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ওরফে ডিউক (খালেদা জিয়ার ভাগ্নে), তাঁর ভায়রা ভাই ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার ও ডিজিএফআইয়ের তখনকার পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন পরস্পর যোগসাজশে ২০০৬ সালের ১০ অক্টোবর মাওলানা তাজউদ্দিনকে ভিন্ন নামের পাসপোর্টে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেন।

হামলার সময়কার পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহুদুল হক, তৎকালীন মহানগর পুলিশ কমিশনার (পরবর্তী সময়ে আইজিপি) আশরাফুল হুদা, সিআইডির প্রধান (পরবর্তী সময়ে আইজিপি) খোদা বখ্স চৌধুরী, উপকমিশনার (পূর্ব) ওবায়েদুর রহমান খান ও উপকমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো: তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনাস্থলে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেননি।

এই তিন পুলিশ কর্মকর্তা আসামিদের আক্রমণ পরিচালনার সুবিধায় ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের ওই সমাবেশ ও র‌্যালির জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেননি। ঘটনায় ব্যবহৃত অবিস্ফোরিত তাজা গ্রেনেড আলামত হিসেবে জব্দ করার পরও, তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেননি। আদালতের অনুমতি ছাড়াই উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেনাবাহিনীকে দিয়ে গ্রেনেড ধ্বংস করে আলামত নষ্ট করা হয়।

এদের কেউ কেউ ওই হামলার ঘটনা আগে থেকে জানতেন। তাই হামলার পরপর আহত ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ফলে আক্রমণকারী জঙ্গিরা সহজে পালাতে সক্ষম হয়।

জোট সরকার আমলের সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, এএসপি আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা ভিন্ন খাতে নেওয়ার বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। তারা জজ মিয়াসহ তিনজনকে দিয়ে মিথ্যা জবানবন্দি আদালতে লিপিবদ্ধ করিয়েছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে বলপূর্বক মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের অপরাধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, এ টি এম আমিন, সাবেক দুই আইজিপি আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, খান সাঈদ হাসান, ওবায়দুর রহমান খানের বিরুদ্ধে কর্তব্যকাজে অবহেলার জন্য দণ্ডবিধির ২১২ ও ২১৭ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।

এ ছাড়া খান সাঈদ ও ওবায়দুর রহমানের বিরুদ্ধে আলামত ধ্বংস করার অভিযোগ আনা হয়।

সিআইডি কর্মকর্তারা ২০০০ সালে টুঙ্গিপাড়ায় শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা ও পরের বছর সিলেটে বোমা হামলার মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এই ঘটনায় মুফতি হান্নানের সম্পৃক্ততার কথা জানতে পারেন। কিন্তু খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, মুন্সী আতিক ও আবদুর রশিদ তখন মুফতি হান্নানকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেননি। মূল আসামিদের বাঁচাতে তারা না করে পরস্পর যোগসাজশে জজ মিয়াসহ তিনজনের কাছ থেকে বলপূর্বক মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করেন।

Bootstrap Image Preview