Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় আজ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:৩৮ AM
আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:৫৫ AM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষিত হবে আজ বুধবার (১০ অক্টোবর)। দেশের ইতিহাসে এটিই প্রথম মামলা, যে মামলার আসামির তালিকায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দেশের সাবেক তিন আইজিপি ছাড়াও পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর একাধিক কর্মকর্তার নাম রয়েছে। একইসঙ্গে তারেক রহমানকে এ গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্রের মূল ব্যক্তি বলে মনে করে রাষ্ট্রপক্ষ। তাই তারেক রহমানসহ এ মামলার সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করা হচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে।

অন্যদিকে আসামিপক্ষ মনে করছে, অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে তারেক রহমানসহ যাদের আসামি করা হয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। এসব আসামির বিরুদ্ধে আনা কোনও অভিযোগই রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি বলেও মনে করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা।

এ মামলাকে ঘিরে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে বক্তব্য পাল্টা বক্তব্য। গত ১৮ সেপ্টেম্বর যেদিন মামলার রায়ের দিন ধার্য করা হয়। মামলাটিকে রায়ের পর্যায়ে নিয়ে আসতে সহযোগিতার জন্য ওইদিন বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন সব পক্ষের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

বিচারক আরও বলেন, ‘আসামিদের সহযোগিতা ছাড়া তো এ মামলা শেষ করাই যেতো না। আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে হয়তো আসামিদের অনেক আবেদন মঞ্জুর করতে পারিনি। তবে এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলার সময়ে কখনও কাউকে অধিকার বঞ্চিত করিনি। বিচারিক কার্যক্রমে কোনও ফাঁক রাখিনি। তারপরও সিদ্ধান্ত একটা আমাকে দিতেই হবে।’

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। আর এ হামলার ষড়যন্ত্রের মূল হোতা হচ্ছেন তারেক রহমান।’ বিচার কার্যক্রম চলার সময়ে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই তারা প্রমাণ করতে পেরেছেন বলে জানান তিনি।

দেশব্যাপী সন্ত্রাসবিরোধী ও বোমা হামলার প্রতিবাদে ১৪ বছর ৪৯ দিন আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ সমাবেশের আয়োজন করেছিল। এই সমাবেশ শেষ হওয়ার মুহূর্তে চালানো হয় পৈশাচিক গ্রেনেড হামলা। এ হামলায় নিহত হন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম আইভী রহমানসহ ২৪ জন। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তত্কালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আহত হন প্রায় ৪শ’ নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ। এদের অনেকেই এখনও শরীরে গ্রেনেডের স্প্লি­ন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবন কাটাচ্ছেন। 

বর্বরোচিত ও ভয়াবহ এ গ্রেনেড হামলার তদন্ত নিয়েও ঘটেছে নানা নাটকীয় ঘটনা। ২০০৫ সালের ৯ জুন গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগের একটি চায়ের দোকান থেকে জজ মিয়াকে আটক করে সেনবাগ থানা পুলিশ। ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্তের এক আলোচিত অধ্যায় হলো জজ মিয়া নাটক।

গ্রেফতারের পর তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়। এরপর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে পুলিশ জানায়। জবানবন্দিতে জজ মিয়া বলেন, তিনি আগে কখনও গ্রেনেড দেখেননি; গ্রেনেড ও বোমার মধ্যে পার্থক্যও তিনি জানেন না। পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে বড় ভাইদের নির্দেশে তিনি অন্যদের সঙ্গে গ্রেনেড হামলায় অংশ নেন। সেই বড় ভাইরা হচ্ছেন- সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, জয়, মোল্লা মাসুদ, মুকুল প্রমুখ।

২০০৬ সালের আগস্টে এই নাটকের পেছনের ঘটনা ফাঁস করে দেন জজ মিয়ার মা জোবেদা খাতুন। জজ মিয়াকে গ্রেফতারের পর থেকে সিআইডি তার পরিবারকে মাসে মাসে ভরণপোষণের টাকা দিয়ে আসছে। জজ মিয়াকে এই মামলায় রাজসাক্ষী করতে সিআইডির প্রস্তাবের কথাও ফাঁস করে দেন জোবাদা খাতুন।

এরপর নানা ঘটনাপ্রবাহের পর ২০০৮ সালে তাকে আসামির তালিকা থেকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। পরে আদালত এ মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেন। ২০০৯ সালে মুক্তি পান জজ মিয়া।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১১ জুন মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির। ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন।  ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় গেলে পুরোপুরি পাল্টে যায় এ মামলার তদন্তের ধারা। ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর ২০০৯ সালের ২৫ জুন আদালতের কাছে এ মামলার অধিকতর তদন্তের আবেদন জানান রাষ্ট্রপক্ষ।

শুনানি শেষে ওই বছরের ৩ আগস্ট আদালত অধিকতর তদন্তের আবেদন মঞ্জুর করেন। অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দকে। দীর্ঘ তদন্তের পর তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও আবদুস সালাম পিন্টুসহ আরও ৩০ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১১ সালের ২ জুলাই আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। অধিকতর তদন্তে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) পাশাপাশি হাওয়া ভবনের সংশ্লিষ্টতাও খুঁজে পান তিনি। মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অভিযোগে সিআইডি’র প্রথম তিন তদন্ত কর্মকর্তাকেও অধিকতর তদন্তে অভিযুক্ত করেন আবদুল কাহার আকন্দ।

অভিযোগ গঠনের পর বিচারিক কার্যক্রম শুরুর পর ২২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এরপর আসামিদের জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। পরে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষে ১১৯ কার্যদিবস যুক্তিতর্কের মাধ্যমে শুনানি করেন। এতে আসামিপক্ষ ৯০ কার্যদিবস এবং রাষ্ট্রপক্ষ ২৯ কার্যদিবস শুনানি করেছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান।

অধিকতর তদন্তের পর সম্পূরক চার্জশিটে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ৩০ জন আসামি যুক্ত হওয়ার পর এ মামলার আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জনে। এ মামলার বিচার কার্যক্রম চলার সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এ মামলার আসামিদের তালিকা থেকে তাদের বাদ দেওয়া হয়। এ মামলায় বর্তমানে আসামির সংখ্যা ৪৯। এসব আসামির মধ্যে পলাতক রয়েছেন ১৮ জন। বাকি ৩১ জন কারাগারে রয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরদিন ২২ আগস্ট দণ্ডবিধির ১২০/বি, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২, ২০১, ১১৮, ১১৯, ২১২, ৩৩০, ২১৮, ১০৯ ও ৩৪ ধারায় মতিঝিল থানার এসআই শরীফ ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা (নং-৯৭) দায়ের করেন। ২০০৮ সালের ৯ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে সিএমএম আদালতে দু’টি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন সিআইডির সিনিয়র এএসপি ফজলুল কবির। ওই বছরই মামলা দু’টির কার্যক্রম দ্রুত বিচার আদালত-১-এ স্থানান্তর করা হয়। এ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের ২৯/১১ (হত্যা) ও ৩০/১১ (বিস্ফোরক) মামলা দু’টির বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

Bootstrap Image Preview