দলীয় প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময় নেতাকর্মীদের থেকে পুরস্কার পান। আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও বিভিন্ন সময় দেশ বিদেশ খেকে পুরস্কার পান। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়া এবং দলীয় প্রধান হিসেবে পাওয়া পুরস্কার কোথায় রাখা হয়।
বিধান রয়েছে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে পাওয়া প্রধানমন্ত্রীর ক্রেস্ট ও পুরস্কারগুলো রাষ্ট্রীয় সংরক্ষণাগার হিসেবে পরিচিতি তোষাখানায় সংরক্ষিত থাকবে।তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে এসব পুরস্কার ও ক্রেস্ট পছন্দ অনুযায়ী নিজ দফতরেও প্রদর্শনের জন্য রাখতে পারেন।
জানা গেছে, যদি তিনি এগুলো নিজ দফতরে প্রদর্শনের জন্য রাখেন তাহলে তা রাষ্ট্রীয় সংরক্ষণাগার হিসেবে পরিচিত তোষাখানায় রয়েছে বলেই বিবেচিত হবে। বঙ্গভবনে স্থাপিত তোষাখানার দায়িত্বে রয়েছে যৌথভাবে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বঙ্গভবন।
জানা যায়, দলীয় নেতা হিসেবে পাওয়া ক্রেস্টগুলো রাষ্ট্রীয় সম্পদ নয়। এগুলো দলীয় সম্পদ। এসব ক্রেস্ট সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তেমন কোনও বিধিবিধান নেই। তিনি চাইলে তা দলীয় অফিসে অথবা নিজ বাসস্থানেও রাখতে পারেন।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়া ক্রেস্ট বা সম্মাননা রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এ কারণে এসব ক্রেস্ট বা সম্মাননা তোষাখানায় রাখার বিধান রয়েছে। এটি তিনি প্রদর্শনের জন্য নিজ দফতরেও রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রে নিয়মের কোনও ব্যত্যয় হবে না। তোষাখানায় না রেখে যদি প্রধানমন্ত্রী নিজ দফতরে প্রদর্শনের জন্য রাখেন তা তোষাখানায় রয়েছে বলেই বিবেচিত হবে।
একইভাবে বিভিন্ন সেক্টরে অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেন। এসব পুরস্কার তোষাখানায় সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। তবে তা প্রধানমন্ত্রী তার দফতরেও প্রদর্শনের জন্য রাখতে পারেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব। তিনি জানিয়েছেন, যদিও এমনটি হয় না, তারপরও যদি কোনও পুরস্কারের সঙ্গে অর্থের যোগান থাকে তাহলে তা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখা হয়।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীসহ সকল মন্ত্রীর পাওয়া উপহারই রাষ্ট্রীয় সম্পদ যা তোষাখানায় রাখার বিধান রয়েছে। তবে ব্যক্তিগতভাবে পাওয়া কোনও পুরস্কার বা ক্রেস্ট তো ব্যক্তিগত সম্পদ। সেক্ষেত্রে কোনও বাধ্যবাধকতা নাই। ব্যক্তিগতাবে পাওয়া যেকোনও উপহার প্রধানমন্ত্রী বা কোনও মন্ত্রী নিজ তত্ত্বাবধানে রাখলে তাতে আইনের ব্যত্যয় হবে না।’
প্রসঙ্গত, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের কাছ থেকে একটি অত্যাধুনিক পিস্তল উপহার পেয়েছিলেন। অভিযোগ ছিল, উপহার হিসেবে পাওয়া পিস্তলটি রাষ্ট্রীয় তোষাখানায় না রেখে নিজের কাছে রেখেছিলেন এরশাদ। এটি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। আদালত এরশাদের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন এরশাদকে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, তার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পিস্তলটি উপহার দিয়েছিলেন। কাজেই পিস্তলটি তিনি ব্যক্তিগতভাবে উপহার পেয়েছিলেন। তাই সেটি তোষাখানায় না রেখে তিনি নিয়মের ব্যত্যয় করেননি।’