‘লিমনের হাতে একটি ধারালো দা ছিল। লিমন আমাকে আঁখ খাওয়ার কথা বলে আখের ক্ষেতে নিয়ে যায়। আখ খাওয়া শেষ হতে না হতেই আমাকে দা দিয়ে কোপ দেয়। কোপে আমার হাতের তালু কেটে যায়। আমি ওর পা জড়িয়ে ধরে প্রাণ ভিক্ষা চাই, কিন্তু আমার কোনো কথা না শুনে আমাকে কোপাতে থাকে।’ – হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানান বরগুনার তালতলী উপজেলার গাববাড়িয়া গ্রামের জহিরুল।
ঘটনাটি আজ রবিবার (৭ অক্টোবর) সকালের। বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে গুরুতর আহত জহিরুল।
জানা যায়, ঘটনার দিন সকাল ৯টার দিকে আহত জহিরুলের বন্ধু লিমনের মা লুৎফা বেগম মোবাইল ফোনে জহিরুলকে তার বাড়িতে যেতে বলে। জহিরুল তাদের বাড়িতে যাওয়ার পথে লিমনের সঙ্গে দেখা হয়। এ সময় লিমন জহিরুলকে আঁখ খেতে নিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে আহত করে। মৃত ভেবে জহিরুলকে ফেলে রেখে চলে যায় লিমন।
এ সময় বিউটি নামে স্থানীয় এক নারী জহিরুলকে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে থাকতে দেখে স্বজনদের খবর দেয়। স্বজনরা উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় তাকে। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা সঙ্কটজনক অবস্থায় জহিরুলকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গাববাড়িয়া গ্রামের ছালাম খানের ছেলে লিমন খান ২০১৬ সালে মোটরসাইকেলের কাগজ বন্ধক রেখে জহিরুল চৌকিদারের ফুফুতো ভগ্নিপতি কালাম কাজীর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার নেয়। টাকা পরিশোধ না করে লিমন ঢাকায় পালিয়ে যায়। দুই বছর পর গত মঙ্গলবার লিমন বাড়ি যায়। পরে শনিবার বিকেলে কালাম কাজীর সঙ্গে লিমনের ছোটবগী পিকে স্কুলের সামনে দেখা হয়।
ওই সময় কালাম লিমনের কাছে ধারের টাকা পরিশোধ করতে বললে সে টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে। এ নিয়ে লিমন ও কালামের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায় কালাম লিমনকে মারধর করে। এ সময় জহিরুল সেখানে উপস্থিত ছিল। এ ঘটনার জেরেই জহিরুল কুপিয়ে জখম করে লিমন।
আহত জহিরুল আর্তনাদ করে বলেন, 'বন্ধু লিমনের মা লুৎফা বেগম আমাকে মোবাইল ফোনে তার বাড়িতে যেতে বলে। আমি তার বাড়িতে যাওয়ার পথে লিমনের সঙ্গে দেখা হয়। লিমন আমাকে আঁখ খাওয়ার কথা বলে ওর চাচা রশিদ খানের আখ খেতে নিয়ে যায়। আখ খাওয়া শেষ হতে না হতেই ভগ্নিপতি কালামের পক্ষে কথা বলার কারণ জানতে চেয়ে আমাকে দা দিয়ে কোপাতে থাকে। আমি ওর পা জড়িয়ে ধরে প্রাণ ভিক্ষা চাই, কিন্তু আমার কোনো কথা না শুনে আমাকে কোপাতে থাকে।'
জহিরুলের মা রওশনা বলেন, 'আমার সহজ সরল ছেলেকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হাত-পা কেটে দিয়েছে লিমন ও তার মা লুৎফা বেগম। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।'
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার গৌরাঙ্গ হাজড়া বলেন,'জহিরুলের বাম হাতের তালু ও ডান পায়ের গোড়ালির নিচে প্রায় বিছিন্ন হয়ে গেছে। সঙ্কটজনক অবস্থায় তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।'
তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুলক চন্দ্র রায় বলেন, 'খবর পেয়েছি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।'