Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মজুরি না পাওয়া ৭২ লাখ মানুষের মধ্যে ৫৪ লাখই নারী

নারী ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৩৬ PM
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৩৬ PM

bdmorning Image Preview


প্রতিযোগিতার বাজারে পুরুষের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে যেমনি বেড়েছে নারীর অংশগ্রহণ, তেমনি বেড়েছে অর্থনীতিতে অবদান। তবে নারীদের কাজের সিংহভাগই আর্থিক অংকে পরিমাপ করা হয় না। এর মধ্যে নারীর সাংসারিক ও গৃহস্থালি কাজ অন্যতম। দেশের ৫৪ লাখ নারী মজুরি ছাড়াই রাতদিন পরিশ্রম করেন এমন তথ্যই উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত সর্বশেষ চূড়ান্ত শ্রমশক্তি জরিপে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, নারীরাই মজুরি ছাড়া বেশি কাজ করেন, নানাভাবে আমাদের সহায়তা করেন। কৃষি,দোকানেও নারীরা সহায়তা করেন। তবে এসব কাজে নারীদের একটা মজুরি ধরা দরকার। গৃহস্থালি কাজে নারীরা সব সময় আমাদের সহায়তা করে আসছেন কোনো মজুরি ছাড়াই।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকেই ৬ শতাংশের উপরে আছে প্রবৃদ্ধির হার। বৃদ্ধি বাড়ছে তবুও বাড়ছে না কর্মসংস্থান। বরং দিনকে দিন কমছে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে দেশে কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৪ শতাংশেরও বেশি। ফলে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে।

এমনকি দেশে ৭২ লাখ মানুষ আছে যারা কাজ করেন অথচ কোনো মজুরি পান না। গৃহস্থলি, কৃষি, মুদি দোকান ও অথবা বাবা-মার ব্যক্তিগত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৭২ লাখ মানুষ কাজ করেন কোনো মজুরি ছাড়াই।

এদিকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে মোট আনপেইড ফ্যামিলি হেলপার ছিলো ৮৬ লাখ, এর মধ্যে নারী ৬৭ লাখ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিলো আরও ভয়াবহ ১ কোটি ৬ লাখ, এরমধ্যে নারী ৮৪ লাখ। ২০১০-১১ অর্থবছরে আনপেইড ফ্যামিলি হেলপার ছিলো ১ কোটি ১৮ লাখ, এরমধ্যে নারীর সংখ্যা ৯১ লাখ।

দেশে বর্তমানে মোট কর্মক্ষম মানুষ ৬ কোটি ৩৫ লাখ, এরমধ্যে নারী ২ কোটি। এরমধ্যে সরকার দাবি করছে তারা ৬ কোটি ৮ লাখ মানুষকে কাজ দিতে পেরেছে। এর মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে ২ কোটি ৪৭ লাখ, শিল্পে ১ কোটি ২৪ লাখ এবং সেবা খাতে ২ কোটি ৩৭ লাখ মানুষ কাজ পেয়েছেন।

এদিকে এ বিষয়ে নারীনেত্রী খুশি কবির জানান, দেশে আনপেইড ওয়ার্কার মানেই যেন নারী। আমরা বার বার দাবি জানিয়ে আসছি নারীরা যেন সঠিকভাবে মজুরি পাই। বাইরে কাজ করলে যেন সঠিক মজুরি পাই। আমরা দেখেছি, নারীদের মজুরিকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। নারীরা ঘরে অনেক কাজ করেন, এসব কাজেরও একটা মূ্ল্য আছে এগুলো নির্ধারণ করা দরকার।ঘরের কাজের অবশ্যই মূল্য আছে। এটা বের করলে নারীর মর্যাদা আরও বেড়ে যাবে। আমরা এখনও দেখি কৃষিকাজে পুরুষ কাজ করলে সেটার মূল্য ধরে অথচ নারীর বেলায় ধরা হয় না। অনেক নারী পেটভাতায় কাজ করেন। এর ফলে বৈষম্য বেশি হচ্ছে। ঘরের ভেতরে নারী যেসব কাজ করেন এর মূল্য বের করতে হবে।

 

এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ১২ হাজার ৫৩০ জন নারী নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আরও একটি জরিপ চালিয়ে নারী নির্যাতনের চিত্র তুলে আনে। এতে উঠে আসে ৬৫ শতাংশ নারী স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক নির্যাতন, ৩৬ শতাংশ যৌন নির্যাতন, ৮২ শতাংশ মানসিক এবং ৫৩ শতাংশ নারী স্বামীর মাধ্যমে অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

জরিপে আরও বলা হয় অধিকাংশ নারীকেই তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বামীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়তে বাধ্য হতে হয়েছে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থার (বিএমবিএস) মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনের তথ্যমতে, ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই দেশের ৫.১৭ শতাংশ শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নির্যাতিতদের আইনি সুবিধার্থে ২০০০ সালে সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন তৈরি করে।

এটি প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য ছিল এ আইনের আওতায় সংঘটিত অপরাধের যথাযথ বিচার এবং অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে ভুক্তভোগীদের রক্ষা করা।

২০১৩ সালে সরকার এ আইন সংশোধন করে আরো কঠোর করে কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায় অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার হার কম।

পুলিশ সদর দপ্তরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৭ সালে নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে ১৫ হাজার ২শ ১৯টি, ২০১৬ সালে ১৬ হাজার ৭৩০টি, ২০১৫ সালে ১৯ হাজার ৪৮৬টি, ২০১৪ সালে ১৯ হাজার ৬১৩টি, ২০১৩ সালে ১৮ হাজার ৯১টি, ২০১২ সালে ১৯ হাজার ২৯৫টি এবং ২০১১ সালে ১৯ হাজার ৬৮৩টি।

 

Bootstrap Image Preview