Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা আজ, বেড়েছে আসন কমেছে শিক্ষার্থী!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ১২:১১ PM
আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ১২:১১ PM

bdmorning Image Preview


আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হলো এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি পরীক্ষা। সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের আসনসংখ্যা বেড়েছে বহুগুন, কিন্তু মেধাবীদের আগ্রহ কমেছে মেডিক্যাল শিক্ষার প্রতি। গত দুই বছরে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির আবেদনকারীর সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার কমেছে। চিকিৎসকদের প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থার প্রতিফলন আর বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কারণে এমনটি ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

এইসব কারণে দেশের অনেক শিক্ষার্থী ডাক্তারি পড়ার জন্য চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে চলে যায়। দেশের প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজের চেয়ে বিদেশের কোথাও কোথাও পড়ার খরচ কম। তাই দেশে বেশি খরচে কোনো নিম্নমানের কলেজে না পড়ে বরং বিদেশে গিয়ে কম খরচে তুলনামূলক ভালো কলেজে পড়ার আগ্রহ তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া বেসরকারি কোনো কোনো মেডিক্যাল কলেজে উপযুক্ত শিক্ষার মান সংরক্ষণ করতে না পারা, পরিবেশ না থাকা এবং এ ধরনের মেডিক্যাল শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ডাক্তারি পাস করার পর ভালো কোথাও চাকরি না পাওয়ার ঘটনায় অনেক শিক্ষার্থী নিরুৎসহিত।

মেডিক্যালে পরীক্ষায় আবেদন করেও পরীক্ষা দিবেন না এমন অনেক শিক্ষার্থীদের সাথে কারণ জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, ‘একসময় ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হব, কিন্তু ডাক্তারি প্রফেশন নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের অনাস্থা কাজ করছে; সাধারণ মানুষের ধারণা ডাক্তারদের বেশির ভাগই এখন সেবার চেয়ে টাকা উপার্জনের দিকেই বেশি নজর দিচ্ছেন।’

অভিভাবকদের ও একই কথা।  তবে কয়েকজনে বললেন, এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সরকারিতে চান্স না পেলেও প্রাইভেটে চান্স পেয়েছিল তাদের সন্তান। কিন্তু টাকা এত বেশি চেয়েছিল যে তাদের পক্ষে অত টাকা দিয়ে ভর্তির ক্ষমতা ছিল না। ফলে তাদের সবার মানসিক কষ্টে ভুগতে হয়। তখন মনে হয়েছে মেডিক্যাল শিক্ষা যেন টাকার খেলায় পরিণত হয়েছে। সে জন্য আমরা আমাদের সন্তানকে আর ডাক্তারি পড়াতে চাই না।’

এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমবিবিএস কোর্সে আবেদন না করার কারণ বলেন, ‘এমবিবিএসে ভর্তির যোগ্যতা থাকলেও আমি সেখানে আবেদন করিনি, শেষ পর্যন্ত মেরিট লিস্টে টিকব কি না তা নিয়ে কিছুটা সংশয় ছিল; আবার এক ধরনের অনাগ্রহও কাজ করেছে ভেতরে ভেতরে।’

অনেক শিক্ষার্থী বলেন, আগে জিপিএ ৫ পেয়ে এইচএসসি পাসের হার বেশি ছিল বলে তখন এমবিবিএসে ভর্তির যোগ্যতা জিপিএ ৯ করা হয়েছিল, কিন্তু এবার যেহেতু জিপিএ ৫ কম পেয়েছে তাই এবার যদি এমবিবিএস ভর্তির যোগ্যতা জিপিএ ৮ করা যেত তবে হয়তো ঠিকই আরো অনেকে আবেদন করার সুযোগ পেত।

এবার এমবিবিএস কোর্সে ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা (পাস নম্বর ৪০) ও এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। লিখিত পরীক্ষায় প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য দশমিক ২৫ নম্বর কাটা হবে। এ ছাড়া এর আগে সরকারি মেডিক্যাল বা ডেন্টাল কলেজে ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রে মোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে ০৫ (পাঁচ) নম্বর কেটে মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থীকে সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করতে বলা হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষার্থীসহ কর্তব্য পালনকারী কর্মকর্তা- কর্মচারী মোবাইল ফোনসহ কোনো ধরনের ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ও ঘড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। শিক্ষার্থীদের প্রবেশ পত্র ও সাধারণ কলম নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হবে। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষাকে সর্বোচ্চ কঠোর ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করার সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর আবেদনকারীর সংখ্যা ৬৫ হাজার ৯১৯। গত বছর ছিল ৮২ হাজার ২৬৫ জন। ২০১৬-১৭ শিক্ষা বর্ষে ছিল ৯০ হাজার ৩০০ জন। ২০১৫-২০১৬ সালে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্স মিলে আবেদন করেছিলেন ৮৪ হাজার ৭৮৪ জন। সে হিসাবে তিন বছর আগেও আবেদনকারীর সংখ্যা বেড়েছিল, কিন্তু এর পরের দুই বছরে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৩৫ হাজার আবেদনকারী কমে গেছে। এ ক্ষেত্রে প্রথম বছরে কমেছিল প্রায় আট হাজার এবং গত বছরের তুলনায় এবার কমেছে ১৯ হাজার।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডা. সারফুদ্দিন আহম্মেদ বলেন, যেভাবে মেডিক্যাল কলেজ বাড়ছে, আসন বাড়ছে, চিকিৎসক বাড়ছে, সেভাবে কিন্তু গুণগত মান বাড়ছে না, পাশাপাশি চিকিৎসকদের মধ্যে বেকারত্বের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। তা না হলে আগের ধারা অনুসারে আবেদনকারীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি হওয়া উচিত ছিল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার মতে, আবেদনকারী কমে যাওয়ার অর্থ ডাক্তারি পড়ায় আগ্রহ কমে যাওয়া নয়। বরং এখন যারা আবেদন করছে তারা প্রকৃত মেধাবী। আগে মেধাবীদের সঙ্গে বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে অনেক নিম্নমানের শিক্ষার্থীরাও ভিড় জমাত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎস শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রশীদ বলেন, ‘এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির প্রক্রিয়াগত ও মানগত অনেক উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছি নানা পদ্ধতি অবলম্বন করে। এখন খুব মেধাবী ছাড়া কেউ এমবিবিএসে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না, আমাদের চাহিদা জিপিএ ৯ থাকলেও গত বছর প্রায় ৯০ শতাংশ আবেদনকারী ছিল জিপিএ ১০ এর ওপরে, এবারও তেমনটা ঘটছে। এ ছাড়া আগে যেমন পুরনো পরীক্ষার্থীরাও বারবার আবেদন করত, এখন ৫ নম্বর করে কাটা যাওয়ার বিধান করায় পুরনোদের চাপও কমে গেছে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এ বি এম মাকসুদুল আলম বলেন, আবেদনকারী কমার ক্ষেত্রে পুরনো শিক্ষার্থীদের আবেদনের সুযোগ কমে যাওয়া এবং এইচএসসিতে জিপিএ কমে যাওয়ার বিষয়টিও ভূমিকা রেখেছে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত চিকিৎসক হওয়ার ঝুঁকি, চিকিৎসকদের ওপর মানুষের আস্থার ঘাটতি ও কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টিও কাজ করতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক জানান, এবার সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে দফায় দফায় প্রস্তুতিমূলক সভা-বৈঠক করা হয়েছে। আজ মোট ১৯টি কেন্দ্রের ২৭ ভেন্যুতে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র অনুসারে দেশে বর্তমানে সরকারি ৩৬টি মেডিক্যাল কলেজে আসন চার হাজার ৭৮ ও বেসরকারি ৬৯টি কলেজে আসন ছয় হাজার ২৫টি। এ ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে মেধার ভিত্তিতে প্রথমে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হবে। বাকি উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ থাকবে। এর বাইরে আর্মড ফোর্সেস ছয়টি মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া আলাদাভাবে সম্পন্ন হয়।

Bootstrap Image Preview