পাকিস্তানের আইসক্রিম বিক্রেতা আব্দুল কাদির থাকেন বস্তিতে। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ভালোই দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎই দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফআইএ) কর্মকর্তারা তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে জেরা শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অর্থপাচারে জড়িত। তাকে জানানো হয়, তার ব্যাংক হিসাবে দুই কোটি ৩০ লাখ রুপি লেনদেন হয়েছে।
৫২ বছর বয়সী এ প্রৌঢ় বলেন, দুনিয়াতে আমার মতো দুর্ভাগা আর কেউ নেই। যখন আমি জানতে পারলাম, আমার ব্যাংক হিসাবে দুই কোটির বেশি রুপি আছে, তখন তা উধাও হয়ে গেছে।
বন্দরনগরী করাচির ওরগানি বস্তিতে নিজের ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে এই কোটিপতি বলেন, হঠাৎ করেই তার জীবনে এমন বিপর্যয় নেমে এসেছে। এ নিয়ে তার ন্যূনতম ধারণা নেই।
দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ৭৭টি ব্যাংক হিসাবের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে। এসব অ্যাকাউন্ট বিভিন্ন শ্রমিক, নিরাপত্তা প্রহরী ও অন্যান্য নিম্ন পেশার লোকজনের নামে খোলা হয়েছে, যা দিয়ে সাড়ে তিন হাজার কোটি রুপি পাচার করা হয়েছে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।
আব্দুল কাদিরের ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থপাচার হচ্ছে বলে বছর দুয়েক আগে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশটির কেন্দ্রীয় সংস্থাকে জানায়। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে যেটি খোলা হয়েছিল। এর মধ্যে সেটি থেকে কয়েক কোটি রুপি তুলে নেয়া হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত এফআইএ নিশ্চিত হয়েছে যে আব্দুল কাদির এ অর্থপাচারে জড়িত নয়। যদিও তার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করেই সেটি খোলা হয়েছে।
অথচ এই অর্থ লেনদেনের ব্যাপারে তার কোনো ধারণাই নেই। তার ব্যাংক হিসাব থেকে যে দুই কোটি ৩০ লাখ রুপি লেনদেন হয়েছে, সেসব চেকেও তিনি কোনো সই করেননি কারণ তিনি নিজে লিখতে বা পড়তেও জানেন না।
দুই সন্তানের এ বাবা বলেন, লোকজন আমাকে কটাক্ষ করতে থাকেন। আমাকে দেখলেই বলেন, দেখ, রাস্তায় কোটিপতি আইসক্রিম বিক্রি করছেন।
ছিনতাইকারীরা পিছু লাগতে পারে বলেও তার পরিবারের সবাই আতঙ্কিত থাকতে হচ্ছে। তার এক বন্ধু বলেন, তিনি সত্যিকার কোটিপতি হলে আইসক্রিমের গাড়ি নিয়ে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো না। সত্যিকার অর্থে তিনি কপর্দকশূন্য।