'উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ' এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ৩ দিনব্যাপী চতুর্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলা-২০১৮ এর শুভ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে তিনি এ মেলার উদ্বোধন করেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাঠে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
এবারের মেলায় পর্যটন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ জন্য আলাদা একটি স্টলের পাশাপাশি জেলা কর্নারগুলোতে পর্যটন বিষয়ক নানা তথ্য দেয়া হবে।
ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভিক্ষুক জাতি হিসেবে নয়, বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে বাঁচবে। দেশের প্রতিটি শিশু যেন লেখাপড়া করে বড় হতে পারে এবং মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে এমন দেশ গড়তে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষিত জাতি ছাড়া কোনো দেশ ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্রমুক্ত হতে পারে না। তাই এই সরকার প্রতিটি শিশুর শিক্ষার অধিকার প্রথমে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত দেশ। আজ এই উন্নয়ন মেলা আমি তরুণদের জন্য উৎসর্গ করছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি, যার সুফল পাচ্ছে জনগণ। ২০২১ সালে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেখতে চাই। এটি যেন অব্যাহত থাকে সেজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যেন সঠিকভাবে পরিচালনা করা হয় সেজন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ঘর-বাড়ি পাবে, সূচিকিৎসাসেবা পাবে, প্রতিটি মানুষ আলোকিত হবে।’
এবারের উন্নয়ন মেলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌ মন্ত্রাণালয়, গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তাদের স্ব স্ব উন্নয়নমূলক কাজের চিত্র ফুটিয়ে ধরেছেন। মেলায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের দেখা যায় মেলা পরিদর্শন করতে।
সকাল থেকে উন্নয়ন মেলা ঘুরে এবং মেলায় বিভিন্ন স্টলের কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মেলার প্রথম দিনে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাই বেশি আসছে। দেশের উন্নয়ন বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা এসেছে বলে জানা গেছে। মেলায় আগত এসব শিক্ষার্থীরা উন্নয়ন মেলা বেশ উপভোগ করছে। শিক্ষার্থীরা স্টলে স্টলে ঘুরে বিভিন্ন বিষয়ে স্টল সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে প্রশ্ন করে জানার চেষ্টা করছে।
উন্নয়ন মেলা দেখতে এসেছে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা টেকনিকাল ট্রেইনিং সেন্টারের একদল শিক্ষার্থী। উন্নয়ন মেলায় আসার কারণ জানতে চাইলে এসব শিক্ষার্থীরা বিডিমর্নিংকে জানায়, তারা উন্নয়ন মেলা খুব উপভোগ করছে। বিভিন্ন নতুন জিনিসের সাথে পরিচিত হচ্ছে। নানা রকম জিনিসের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারছে।
কোন স্টল সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বিডিমর্নিংকে জানায়, এবারের মেলায় আমাদের নৌ বাহিনীর স্টলটা খুব ভাল লেগেছে। সেখান অনেক অজানা জিনিস দেখছি যেগুলো আগে কখনো দেখি নাই। বেশির শিক্ষার্থীই উন্নয়ন মেলায় আসতে পেরে খুবই আনন্দিত বলে জানায় তারা।
ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু সালেহ মো. ফেরদৌস এর দেয়া তথ্যমতে, এবছরের উন্নয়ন মেলায় মোট ৩৩০টি স্টল রয়েছে। এসব স্টলের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০টি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ১৯টি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৬টি, কৃষি মন্ত্রণালয় ১৬টি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১০টি এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৯টি স্টলে কর্মকাণ্ড প্রদর্শন করবে।
চলতি জাতীয় উন্নয়ন মেলা উপলক্ষে ৪ অক্টোবর দুপুরে ইআরডিতে বিদেশি কূটনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। পরে তারা মেলাও পরিদর্শন করবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া জাতীয় উন্নয়ন মেলার তিনটি সেমিনার হবে।
মেলার প্রথম দিনে বিকাল ৫টায় ‘বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান।
দ্বিতীয় দিনে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগ ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ শীর্ষক সেমিনার এবং শেষ দিনে ‘শিক্ষিত জাতি সমৃদ্ধ দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় বিভিন্ন জেলা বিষয়ে ব্র্যান্ডিং করা হবে। তুলে ধরা হবে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য।
এ ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যায় মেলায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে দেশের নানা উন্নয়ন বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে। উন্নয়ন মেলা চলাকালে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা নিজ নিজ জেলায় যাবেন। তারা মেলা তদারকি করবেন।