Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রবীণবান্ধব সমাজ গঠনের দাবি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ অক্টোবর ২০১৮, ০৫:৫৭ PM
আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৮, ০৬:৫৮ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


প্রবীণদের জন্য সহজলভ্য চিকিৎসা সেবা, বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের উদ্যোগ এবং সমাজ, পরিবারসহ সর্বস্তরে প্রবীণবান্ধব পরিবেশ গঠনের দাবি জানিয়ে আজ দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস-২০১৮।

‘মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রবীণদের স্মরণ পরম-শ্রদ্ধায়’ প্রতিবাদ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পালিত হচ্ছে ২৮ তম আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ প্রতিবছর ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রবীণদের সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি বার্ধক্যের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয়।

দিবসটি উপলক্ষে আজ সোমবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের সমাজসেবা অধিদফতরে আলোচনা এক সভার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন খান মেনন বলেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রবীণরা কাজ করে গেছেন। প্রবীণদের নেতৃত্বে দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যৌথ পরিবার ভেঙে যাবার কারণে প্রবীণরা এখন সমাজে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। এসময় সবাইকে তিনি প্রবীণবান্ধব পরিবার, সমাজ গঠনের আহ্বান জানান।

সমাজে প্রবীণদের অবস্থার কথা চিন্তা করে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার বয়স আরও বাড়ানো উচিত বলে জানান তিনি। বর্তমানে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার সময় ৫৯ বছর। কিন্তু প্রবীণরা যেহেতু সে সময়ও কাজে সক্ষম থাকে এবং অবসরে গেলে তাদের দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হয় সে কারণে অবসরের বয়স আরও বাড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, তরুণরা যেন চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ পায়, সেজন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করা হবে। সরকারে ঊর্ধ্বতন মহলে বিষয়টা আগেই আমি বলছি। এখন এই দুটি নিয়েই সরকার কাজ করছে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, যেসব মানুষের পেনশন স্কিম বন্ধ ছিল সেটা আবার চালু হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আগেই ঘোষণা করেছেন বয়স্কদের পেনশন স্কিম চালু হবে। আমি আবারও বলছি এটা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। সব কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। আগামীতে যে সরকারই ক্ষমতায় আসবে তারা এটা চালু করতে পারবে।

তিনি বলেন, আমরা বয়স্ক ভাতার হার বাড়িয়েছি। আগে ১০০ টাকা ছিল এখন এটা ৫০০ টাকায় এসেছে। এ সুযোগ পাচ্ছে দেশের ৪০ লাখ বয়স্ক মানুষ। আগামীতে এই সংখ্যা এবং পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জিল্লার রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) গাজী মো. নুরুল কবির, অতিরিক্ত সচিব আবু মো. ইউসুফ, অধ্যাপক ড. এ এস এম আতীকুর রহমান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরীকে দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে সেবা করায় চট্টগ্রামের আলাউদ্দিন আহমেদ, ‘আপন নিবাস’ প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা সেলিনা শেলি, শ্বশুর-শাশুড়িকে সেবা করায় শামসুন্নাহার, মাকে সেবা করায় হিজড়া ইভান আহমেদ কথাকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়।

বাংলাদেশে ৬০ বছরের এবং তার বেশি বয়সীদের সিনিয়র সিটিজেন ঘোষণা করেছেন রাষ্ট্রপতি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় বিশ্বব্যাপী এখন প্রবীণ জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।

প্রবীণদের নিয়ে কাজ করছেন তাদের দেয়া তথ্যমতে, ১৯৯৫ সালে বিশ্বে প্রবীণ জনসংখ্যা ছিল ৫৪ কোটি। যা আড়াই গুণ বেড়ে ২০২৫ সালে হবে ১২০ কোটি । আর ২০৫০ সালে এই সংখ্যা হবে ২০০ কোটি টাকা।

বর্তমানে বাংলাদেশে ১ কোটি ৪০ লাখ প্রবীণ। আগামী ২০২৫ সালে এই সংখ্যা হবে ২ কোটি আর ২০৫০ সালে হবে ৪ কোটি ৫০ লাখ, ২০৬১ সালে হবে ৫ কোটি ৫০ লাখ। এই সংখ্যাট বেশ উদ্বেগজনক। উদ্বেগের আরও একটি কারণ হলো দেশে অতি প্রবীণের সংখ্যা(৮০ বছরের বেশি বয়স) সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বাড়ছে।

প্রবীণদের নিয়ে যারা কাজ করেন তারা বলছেন, বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সমস্যা মোকাবেলার ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো পরিবার সমাজের অনীহা এবং অনাগ্রহ। পাঠ্যসূচী, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবীণদের বিষয়গুলো উপেক্ষিত থাকার কারণেও এই প্রবীণদের নিয়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।

বার্ধক্য মোকাবেলায় দেশে অবিলম্বে এলোপ্যাথিক, মনোরোগ, হোমিও, আয়ুর্বেদিক-ইউনানির পর্যাপ্ত সংখ্যক জরা-চিকিৎসক, নার্স, পুষ্টিবিদদ,ডেন্টল সার্জন, অকুপেশানাল-স্পিচ-ফিজিওথেরাপিস্ট তৈরির জন্য উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তারা। এছাড়া অবসরে যাওয়া সুদক্ষ প্রবীণদের জাতিগঠনমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত হবার সুযোগ তৈরিরও আহ্বান জানান তারা।

জাতিসংঘ বলছে, বার্ধক্য এখন একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ এবং এটিকে বৈশ্বিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। দেশ এমডিজির সাফল্য পেরিয়ে এখন এসডিজির দিকে এগোচ্ছে। জাতিসংঘ বলছে, কাউকে ফেলে রেখে নয় সকলকে নিয়ে বাসযোগ্য বিশ্ব সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই তাদের আহ্বান।

কিন্তু প্রবীণদের অভিযোগ, সমাজ, পরিবার তাদেরকে বোঝা মনে করছে। অনুষ্ঠানে এক প্রবীণ মঞ্চে উঠে আক্ষেপ করে জানান, আমরা প্রবীণরা এখন এক জায়গায় বের হতে গেলেও ছেলে-ছেলে বউয়ের কাছে হাত পাততে হয়। এই অনুষ্ঠানে আসতে হলেও তো তাদের কাছে হাত পেতে টাকা নিয়ে আসতে হয়।

উপস্থিত প্রবীণদের হয়ে তিনি বলেন, প্রবীণদের হয়তো সকালে ছেলে বউয়ের কাছ থেকে প্যাকেট, টাকা নিয়ে বাজারে যেতে হয়। নাতি নাতিদের স্কুলে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু প্রবীণদেরতো অন্য কাজে লাগানো যেতে পারে। প্রবীণদের যথাযথ সম্মান করা হয় না বলেও জানান তিনি।

অথচ দেশে প্রবীণদের যথাযথ সম্মান প্র্রদর্শন ও তাদরে কল্যাণার্থে সরকার ২০১৩ সালে প্রবীণ নীতিমালা-২০১৩ এবং পিতা-মাতার ভরণে পোষণ আইন-২০১৩ প্রণয়ন করা হয়।

একই সাথে সরকার প্রবীণদের সহায়তায় ১৯৯৭-৯৮ সালে বয়স্ক ভাতার পরিমাণ ছিল ৩.২ লাখ মানুষকে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনে। বর্তমানে দেশে ৪০ লাখ মানুষকে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। শুরুতে ১০০ টাকা করে পেলেও এখন সেটি ৫০০টাকা করে নির্ধারণ করেছে সরকার। প্রবীণদের চলাচলের সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করে সরকার ডিজিটাল পদ্ধতিতে ঘরে বসেই বয়স্কভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করেন।

সরকারের দেয়া ৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা অনুদান দিয়ে প্রবীণ হিতৈষী সংঘ বর্তমানে দেশের ৭৮টি জেলা উপজেলায় প্রবীণদের স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

একই সাথে সমাজ সেবা অধিদফতরের মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলায় ৮৫ টি শিশু পরিবারের প্রত্যেকটিতে ১০ টি করে আসন প্রবীণদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর কারণ, এসব শিশুদের সাথে থাকলে প্রবীণরা যেমন নাতি নাতনির অভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারবে একইভাবে শিশু পরিবারের শিশুরাও দাদ-দাদীর মতো মমতা অনুভব করবে। প্রবীণরা মনে করে প্রবীণদের প্রতি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের দায়িত্ব আছে।

মাকে সেবা করায় বিশেষ সম্মননা পাওয়া হিজড়া ইভান আহমেদ কথা বিডিমর্নিংকে বলেন, প্রবীণদের জন্য পরিবারকে আগে এগিয়ে আসতে হবে। প্রবীণ নিবাস নয় বরং পরিবারের সাথে থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।প্রবীণদের যেকোন বৈষম্য বা অধিকার আদায়ে প্রবীণদের এক হতে হবে।

প্রবীণদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং প্রবীণবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক এবং প্রবীণ হিতৈষী সংঘের মহাসচিব ড. এস এম আতীকুর রহমান।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে, বার্ধক্য এবং প্রবীণ কল্যাণ বিষয়ক স্বতন্ত্র একটি মন্ত্রণালয় স্থাপন, প্রবীণ নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন, প্রবীণদের জন্য আর্থিক বরাদ্ধ বাড়ানো, অবসরপ্রাপ্ত সক্ষম প্রবীণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, সর্বজনীন নাগরিক পেনশন ব্যবস্থা চালু করা।

Bootstrap Image Preview