পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালিতে রাবনাবাদ নদের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদের পর জনপদ। অব্যাহত নদী ভাঙ্গনে প্রায় দেড় যুগ ব্যবধানে দিন দিন সীমানা ছোট হয়ে পাল্টে যাচ্ছে এসব জনপদের মানচিত্র। ইতোমধ্যে বসতভিটা, আবাদী জমি হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়েছে তিন হাজার পরিবার। যাদের অনেকেরই আশ্রয় মিলেছে বেরিবাাঁধের স্লোপে। এক সময়ের স্বচ্ছল এসব পরিবারের অনেকেরই এখন জীবন জীবিকা চলে নদীতে মাছ ধরে।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানায়, বঙ্গোপসাগর মোহনার উত্তাল রাবনাবাদ নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। অব্যাহত এমন ভাঙনে গত দেড় যুগে অন্তত তিন হাজার পরিবারের বসতবাড়ী, অঅবাদি জমি, গাছপালা বিলিন হয়ে গেছে নদীতে। হুমকির মুখে রয়েছে অনেক বসতবাড়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ-মাদ্রাসা। হাজার হাজার একর জমিসহ অনেক জনপদ বিলিন হওয়ায় ভূমিহীনে পরিনত হয়েছে প্রায় দেড় হাজার পরিবার। ফলে এক সময়ে সচ্ছল পরিবারের সদস্যরা এখন পরিনত হয়েছে দিনমজুরে। অন্তত ছয় শতাধিক পরিবারের সদস্যের ঠিকানা এখন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেরিবাঁধ। সিডর, আইলায় বিধবস্ত হওয়া এ বাঁধের স্লোপে বাস করাও হয়ে পড়েছে চরম ঝুঁকিপূর্ণ। আবাদি জমি, বাড়ীঘর সব কিছু কেড়ে নেয়া এসব মানুষের জীবিকার প্রধান ভরসা রাবনাবাদ নদীতে মাছ ধরা। আর এতেই চলে তাদের চরম কষ্টের জীবন।
রামনাবাঁধ পাড়ের মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বছরের পর বছর রাবনাবাদ নদ তাদের গিলে ফেললেও ভাঙন রোধে সরকারি ভাবে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। লালুয়া ইউনিয়নের চর চান্দুপাড়া গ্রাম থেকে ধানখালী ইউনিয়নের পাটুয়া গ্রাম পর্যন্ত দীর্ঘ ১২ মাইল এলাকার বাড়ীঘর এবং ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে। একই অবস্থা বড়বাইশদিয়ার মৌডুবী থেকে চরলতা পর্যন্ত। যাদের সঙ্গতি আছে, তারা দফায় দফায় বাড়ীঘর পরিবর্তন করে অন্যত্র চলে গেছেন। আর যারা নি:স্ব হয়ে গেছেন, তাদের আশ্রয় হয়েছে বেরিবাঁধের স্লোপে। যাদের সন্তানরা চাকরি করছে কিংবা নিজেরা আয় করছে, তারা শহরে চলে গেছেন। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা নদী থেকে দুই আড়াই কি.মি. দুরে কম বেশি জমি কিনে বাড়ি করছেন। অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবার অন্যত্র গিয়ে বাড়ী করতে বাধ্য হয়েছেন।
জেলে নয়ন মিয়া জানান, অন্তত তিন মাইল এলাকা নদীগর্ভে চলে গেছে। যেখানে চারিপাড়া ও নয়াকাটা গ্রামের ৬শ' বেশি পরিবার ছিল। জেলে সবুজ মিয়া জানান, এক সময তার বাড়ীঘর ছিল। যা এখন নদীর ৭০ ফুট পানি নিচে। প্রায় দেড় যুগ ধরে বেরিবাঁধের স্লোপের উপর বাস করছেন। কৃষি জমি ছিল। চাষ করে জীবন জীবিকা। এখন স্ত্রীসহ পাঁচজনের সংসার চলে মাছ ধরে। শফিক জানান, শেষ সম্বল চাষের পাঁচ বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। চারবার বাড়ী পাল্টেও শেষ রক্ষা হয়নি। বাঁধের ঢালে জুটেছে আশ্রয়। এখন রামনাবাদ নদে জাল টেনে যেদিন মাছ পাওয়া যায় সেদিন ছয়জনের সংসারে খাবার জোটে।
লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, এ পর্যন্ত রাবনাবাঁধ নদীগর্ভে চারিপাড়া গ্রামের ২০০টি, নয়াকাটা গ্রামের ১৯৫টি, চেীধুরীপাড়া গ্রামের ৫০টি, পশুরবুনিয়া গ্রামের ৩০টি, নাওয়াপাড়া গ্রামের ২৫০টি ও মেরাউপাড়া গ্রামের ৪০টি পরিবারসহ অজ্ঞাত আরো বেশ কয়েকটি পরিবারের বাড়ীঘর ও জমি বিলিন হয়েছে। এদের অধিকাংশের আশ্রয় এখন বাঁধের স্লোপে। পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় খাস জমিও লালুয়ায় নেই।
পটুয়াখালী পাউবো’র সূত্রে জানা গেছে, পায়রা সমুদ্র বন্দরের বর্হিনোঙরের জেটি নির্মাণের জন্য লালুয়া ইউনিয়নে জমি অধিগ্রহন প্রক্রিয়া চলছে। এ কারনে সেখানে বাঁধসহ অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন কাজ বন্ধ আছে।