Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

ফরিদপুরে এমপির সুপারিশে যৌন নিপীড়ক শিক্ষককে পুনঃবহাল!

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:১৩ PM
আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:১৪ PM

bdmorning Image Preview


ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিশ্বাস বাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নকারি প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমান পুনঃবহাল হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক লুতফার একজন স্থানীয় প্রভাবশালী এমপিকে কাজে লাগিয়ে আবার পুনঃবহাল হয়েছেন। প্রভাবশলী এ জনপ্রতিনিধি ডিওর মাধ্যমে স্কুল কমিটিকে যৌন নিপীড়নকারী এ শিক্ষককে পূনঃবহালের নির্দেশ দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি তাকে যোগদানের অনুমতি দেয়।

এর আগে গত ১৫ জুলাই ২০১৮ জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া স্বাক্ষরিত এক আদেশে স্কুল পরিচালনা কমিটি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। একই সাথে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেন। কিন্তু গত ২৫ সেপ্টেম্বর হতে প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমান আবার স্কুলে যোগদান করে।

যানা যায়, চরভদ্রাসনের বিশ্বাস বাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির এক ছাত্রী শিক্ষকের যৌন হয়রানিতে অতিষ্ঠ হয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে গত ১০ জুলাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেয় ওই ছাত্রী ও তার মা।

অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাকের নির্দেশে ১২ জুলাই বৃহস্পতিবার তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সামছুল আলম তার কার্যালয়ে উভয় পক্ষকে ডেকে শুনানি সম্পন্ন করেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমানকে সাময়িক ভাবে বরখাস্থ করে বিভাগীয় মামলা দায়ের করার ব্যাপারে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাৎক্ষণিক ভাবে জেলা প্রশাসক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্কুল পরিচালনা কমিটিকে উক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্থ ও বিভাগীয় মামলা করার জন্য লিখত ভাবে নির্দেশ দেন।

ছাত্রীর পারিবারিক সূত্র জানায়, চরভদ্রাসন উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিশ্বাস বাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমান বেশ কিছু দিন ধরে ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করে আসছিলেন। গত ৪ জুলাই ওই শিক্ষক মেয়েটির শরীরে হাত দিয়ে তাকে যৌন নির্যাতন করে। এ ঘটনা সহপাঠীরা জেনে যাওয়ায় সে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। মেয়েটির পরিবার লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি গোপণ রাখে। পরে গত ১০ জুলাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়।

ওই স্কুলছাত্রীর মা জানান, শিক্ষক লুৎফর রহমান স্কুল চলাকালীন ও প্রাইভেট পড়ানোর সময় একাধিক দিন তার মেয়ের ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন। ওই শিক্ষক প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছিলেন।

তিনি আরও জানান, ১২ জুলাই বৃহস্পতিবার শুনানির দিন এলাকার প্রায় অর্ধশত মাতুব্বর ও নেতাকর্মী নিয়ে ওই শিক্ষক জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হাজিরা দিয়েছেন। অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত তার ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। এমনকি নির্যাতিত ছাত্রীর চাচা মাতুব্বর তৈয়বুর রহমান মীরকেও প্রধান শিক্ষক তার দলে নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

স্কুলছাত্রীর মা আরো জানান, আমরা জানতে পারি ওই শিক্ষককে বরখাস্থ করা হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে আমাদের পরিবার স্বস্থিতে মেয়েকে স্কুলে পাঠাই। কিন্তু গত কয়েকদিন দিন পূর্ব হতে সে আবার স্কুলে যোগ দেয়ায় আমার মেয়েটির স্কুলে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পরেছে। আমারা এখন মানসিক চাপে দিনাপাত করছি। আমার মেয়েটির হয়ত আর পড়া লেখা করা হবে না। সে ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে, শারীরিক ও মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পরেছে। আগামী ডিসেম্বরে ওর জেএসসি পরীক্ষা হয়ত আর দেয়া হবে না। আর বিভিন্ন ভাবে আমাদের কে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আমার স্বামী একজন প্রবাসী সে আগামী ৯ অক্টবার মালয়েশিয়ায় চলে গেলে আমি একা এখানে কিভাবে বসবাস করব? তা এখন অনিশ্চিত।

এ বিষয়ে শিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, স্কুলে অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে কোনো ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করা সম্ভব নয়। স্থানীয় একটি চক্র ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে লেগেছে এবং তারাই ওই ছাত্রীকে উস্কানি দিয়ে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি রবি বিশ্বাস বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমরা তাকে সাময়িক বরখাস্থ করি। বেসরকারি বিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্থের দুই মাস অতিবাহিত হলে তিনি আবার যোগদান করতে পারেন। তাছাড়া স্থানীয় সাংসদ নিক্সন চৌধুরী ডিও দিয়ে ওই শিক্ষককে পুনঃবহাল করার নির্দেশ দিলে আমরা গত ২৪ তারিখ জরুরী সভা করে তার যোগদানের সিদ্ধান্ত নেই। সে ভিত্তিতে ২৫ তারিখ সে যোগদান করেন।

এহেন স্পর্শকাতর বিষয় অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তাকে পুনঃবহাল করা নৈতিক ভাবে গ্রহণযোগ্য কি না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের উপর প্রভাবশালীদের প্রচন্ড চাপ ছিল। এ কারণে জেলা প্রশাসনের নির্দেশ থাকা সত্বেও আমরা তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করতে পারিনি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, শিক্ষক জাতি গঠনের মূল হাতিয়ার। সেই শিক্ষকের কাছে যদি একজন শিক্ষার্থী যৌন নিপিড়নের শিকার হয়, তাহলে একজন মা কিভাবে তার সন্তানকে নিশ্চিন্তে স্কুলে পাঠাবে? আর ঐ শিক্ষক যে মেয়েটিকে যৌন হয়রানি করেছে তা প্রমাণিত। একারণেই নীতিমালা অনুযায়ী তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু কোন অদৃশ্য কারণে এমন স্পর্শকাতর অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি পুনঃবহাল হয় তা আমার বোধগম্য নয়। বিষয়টি আমি অতিগুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখছি এবং ইতিমধ্যে আমি ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ চিঠি দিয়ে কথাও বলেছি, তিনি আশ্বস্থ করেছেন শীঘ্রই এ ব্যাপারে বোর্ড ব্যবস্থা নিবে।

Bootstrap Image Preview