Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

ক্ষতিপূরণের চেক বিতরণ বন্ধ: ক্ষতিগ্রস্ত ছয় শতাধিক পরিবার জিম্মি

জাহিদ রিপন, পটুয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৬:৫৭ PM
আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৬:৫৭ PM

bdmorning Image Preview


অবশেষে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া চেক ও নগদ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা র্নিবাহী অফিসার মো.তানভীর রহমান ও কুয়াকাটা পৌরমেয়র আ. বারেক মোল্লার প্রচেষ্টায় এসব চেক ফেরত পেয়েছে ক্ষতিগ্রস্তরা।

ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষ বুধবার দিনভর পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডে ধরনা দিলেও সৃষ্ট জটিলতার কারনে তারা ক্ষদিপূরণের টাকার চেক গ্রহণ করতে পারেননি।

ভূক্তোভোগীরা জানায়, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের স্লোপে বসবাসকারী বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ৬৭৩ পরিবারকে সরকারের দেয়া ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানে হলে খাজুরা এলাকার পান্না মোল্লাসহ একটি মধ্যস্বত্তভোগীচক্র সিইআইপি (কোস্টাল ইমব্যাংকমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট) প্রকল্পের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ক্ষতিপূরণে অন্তত তিন শ’ মানুষের কাছ থেকে চেকসহ নগদ বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়।

ভুক্তভোগী মানুষের দাবি, ক্ষতিপূরণ থেকে ১০ পার্সেন্ট কিংবা সমপরিমাণ টাকার চেক হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জানাজানি হলে ৬৭৩ জন মানুষের নামে বরাদ্দকৃত ক্ষতিপূরণের চেক পূর্বনির্ধারিত দিন মঙ্গলবারে দেয়া হয়নি। তিন শতাধিক মানুষ কলাপাড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসে আসলেও ফিরে গেছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাগরঘেঁষা লতাচাপলী ও ধুলাসার দুই ইউনিয়নসহ কুয়াকাটা পৌর এলাকার রক্ষাকবচ ৪৮ নম্বর পোল্ডারের ৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আধুনিকভাবে বন্যা কিংবা জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধের মতো করে পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। আগামি তিন বছরের মধ্যে একাজ শেষ হওয়ার কথা। সিইআইপি-১ প্রকল্পের প্যাকেজ-২ এর আওতায় একাজ করা হচ্ছে। বাঁধটির উচ্চতা দেড় মিটার (পাঁচ ফুট) উঁচু করা হবে। সম্পূর্ণ বাঁধটির পাদদেশ বর্তমানের চেয়ে আরও ৩৫ ফুট প্রশস্ত করা হবে। বাঁধটি প্রায় ১২০ ফুট প্রস্থ করা হচ্ছে।

এছাড়া সিসি ব্লক প্লেসিং করে রিভার সাইটে এক মিটার উঁচু করলে পাঁচ মিটার স্লোপ থাকছে। একইভাবে কান্ট্রি সাইটে এক মিটার উচ্চতায় দুই মিটার স্লোপ থাকবে। বাঁধটির আধুনিকায়নের মধ্যে টপে পর্যটকের ভ্রমণের জন্য ওয়ার্কিং জোন থাকছে। এর পাশে নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকবে বড় ধরনের বেঞ্চি টাইপের সিসি ব্লক। এজন্য বিশ্ব ব্যাংক ১৪০ কোটি টাকা ব্যয় একাজ করছে।

এই বাঁধের স্লোপে বসবাস করা জেলেসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের বসতঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা অপসারনে মালিকদের ক্ষতিপূরণের জন্য বাঁধ এলাকায় ৬৭৩ জনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। এজন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ সাত কোটি ৩১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৩৭ টাকা বরাদ্দ করা হয়। ক্ষতিপূরণের চেক মঙ্গলবার বিতরণের দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু এক দিন আগে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে প্রকল্পের কর্মকর্তা, ইউপিসহ বিভিন্ন খাতের দোহাই দিয়ে খাজুরা এলাকার মো. পান্না মোল্লা নগদ ছাড়াও প্রায় তিন শ’ চেক হাতিয়ে নেয়।

ক্ষতিগ্রস্ত নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একজন জানান, তিনি ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬০ হাজার টাকা পাবেন। তার কাছ থেকে পান্না মোল্লা একটি চেক নিয়েছেন।

কুয়াকাটার মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা জানান, চেক হাতিয়ে নেয়ার সত্যতা পেয়ে তিনি অভিযুক্ত পান্না মোল্লাসহ কর্তৃপক্ষকে চেক কিংবা নগদ অর্থ ক্ষতিগ্রস্তদের ফেরত দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে চেক বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে।

সিইআইপি প্রকল্পের পুনর্বাসন কর্মকর্তা কাইয়ুম জানান, প্রকল্পের কারও কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। একটি বাইরের চক্র একাজ করেছে। যথাযথ অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত পান্না মোল্লা মোবাই ফোনে বলেন, লতাচাপলী ইউনিয়ন আ'লীগের সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় একটি চক্র তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এসব রটাচ্ছেন। তার সাথে চেক গ্রহণ কিংবা ফেরত দেয়ার বিষয়ের কোন সংশ্লিষ্টতা নাই।

প্রকল্প এলাকার পোল্ডার নম্বর ৪৮ এর লতাচাপলী এবং ধুলাসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনসার উদ্দিন মোল্লা ও আব্দুল জলিল আকন জানান, এর সঙ্গে তাঁদের কারও কোন সম্পৃক্ততা নেই। সিইআইপি প্রকল্পের কর্মকর্তারা বিষয়টি সরাসরি দেখভাল করছেন।

Bootstrap Image Preview