Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

জন্ডিস প্রকৃতপক্ষে কোন রোগ নয়, এটি রোগের একটি উপসর্গ

আজিজুল ইসলাম সজীব, হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:০১ AM
আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:০১ AM

bdmorning Image Preview


জন্ডিস আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত একটি নাম। অধিকাংশ মানুষই নিজের সামান্য শারীরিক অসুবিধার সম্মুখীন হলেই ভাবেন যে জন্ডিস হলো কিনা। এজন্য বিভিন্ন অপচিকিৎসকের নিকট থেকে ঝাড়-ফুক করাতেও দ্বিধাবোধ করেন না। আমাদের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কিছু সংখ্যক অপচিকিৎসক বিভিন্ন কৌশলে মানুষের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। বিশেষ করে গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন বেশি। কিন্তু আপনারা জেনে আশ্চর্য হবেন যে, জন্ডিস প্রকৃতপক্ষে কোন রোগ নয়। এটি রোগের একটি উপসর্গ মাত্র।

জন্ডিস কি?

সাধারণত রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে শরীরে একধরনের হলুদাভ সৃষ্টি হয়। আমাদের রক্তের লোহিত কণিকাগুলো একটি সময়ে (সাধারণত ১২০ দিন পর পর) স্বাভাবিক নিয়মেই ভেঙ্গে গিয়ে বিলিরুবিন তৈরি করে যা পরবর্তীতে লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে পিত্তরসের সাথে পিত্তনালীর মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে। অন্ত্র থেকে বিলিরুবিন মল এর মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। বিলিরুবিনের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় যে কোন অসঙ্গতি দেখা দিলে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। যার ফলে দেখা দেয় জন্ডিস। সাধারণত রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা ১.২ মিলিগ্রাম এর নিচে থাকে।

জন্ডিসের উপসর্গ:

১. চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায় এবং মারাত্মক অবস্থায় মুখমণ্ডল, হাতের তালু এমনকি সম্পূর্ণ শরীর হলুদাভ রং ধারণ করতে পারে।

২. ক্ষুধামন্দা

৩. বমি

৪. মৃদু বা তীব্র পেট ব্যথা

৫. জ্বর

৬. শরীর চুলকানো

৭. ফ্যাকাসে মল

৮. হলুদাভ প্রস্রাব

৯. দুর্বলতা ইত্যাদি

জন্ডিসের কারণ:

লিভারের রোগ জন্ডিসের প্রধান কারণ। লিভার বিভিন্ন কারণে রোগাক্রান্ত হতে পারে। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাসগুলো লিভার প্রদাহ সৃষ্টি করে যা আমাদের দেশসহ সারাবিশ্বেই জন্ডিসের প্রধান কারণ। এছাড়াও নিচের কারণগুলোর জন্যও জন্ডিস দেখা দিতে পারে-

১. লিভার ও পিত্তনালীর বিভিন্ন রকমের প্রদাহ

২. বংশগত রোগ- ডুবিন- জনসন সিন্ড্রোম

৩. অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ

৪. অস্বাস্থ্যকর পানি গ্রহণ

৫. অপরিষ্কার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস

৬. অতিরিক্ত মদ্যপান

৭. পিত্তথলিতে পাথর সৃষ্টি হলে

৮. অনিরাপদ রক্ত সঞ্চালন

৯. একই ইনজেকশন বিভিন্নজন ব্যবহার করলে

নবজাতকের জন্ডিস:

জন্ডিস নবজাতক শিশুদের একটি সাধারণ স্বাস্থ্যগত সমস্যা। নবজাতকের শরীরে লোহিত রক্তকণিকা কোষগুলো প্রায়শই ভেঙ্গে যায় এবং প্রতিস্থাপিত হয়। এর ফলে বেশি পরিমাণে বিলিরুবিন তৈরি হয় যা নবজাতকের স্বল্প উন্নত লিভার শরীর থেকে বিলিরুবিন প্রয়োজনমত বের করে দিতে পারে না। ফলশ্রুতিতে জন্ডিস দেখা দেয়। সাধারণত শিশু জন্মের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে লক্ষণগুলো দেখা দেয়। যদিও কমবেশি ২ সপ্তাহের মধ্যেই চিকিৎসা ছাড়াই লক্ষণগুলোর সমাধান হয়ে যায় তথাপি অত্যন্ত উচ্চ বিলিরুবিন মাত্রাসহ শিশুদেরকে রক্ত সংশ্লেষণ বা ফটোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করার প্রয়োজন হয়।

জন্ডিস প্রতিরোধের উপায়:

১. বিশুদ্ধ খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করুন

২. স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করুন

৩. মদ্যপান ও নেশাদ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন

৪. কখনই ব্যবহৃত ইনজেকশন দ্বিতীয়বার ব্যবহার করবেন না।

৫. সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।

৬. প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরীক্ষা করে রক্ত সঞ্চালন করুন।

৭. হেপাটাইটিস রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় টিকা গ্রহণ করুন।

৮. নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

চিকিৎসা:

জন্ডিসের চিকিৎসা সাধারণত অন্তর্নিহিত কারণের উপর নির্ভর করে। তথাপি জন্ডিস হলে সম্পূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে তরল খাদ্য যেমন ডাবের পানি সেবন করা প্রয়োজন। যেহেতু জন্ডিস লিভারের বিভিন্ন কারণে সাধারণত সৃষ্টি হয় তাই জন্ডিস হলে জার-ফুক এর উপর নির্ভরশীল না হয়ে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

 

Bootstrap Image Preview