Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

জরুরি বিভাগের বেসামাল অবস্থা, 'ধার করা ডাক্তার' দিয়ে চলচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা

সাদির হোসেন রাহিম, তজুমদ্দিন (ভোলা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:৫১ AM
আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:৩৮ AM

bdmorning Image Preview


ভোলার তজুমদ্দিনের ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের প্রচেষ্টায় ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হয়েছে। যা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গঠিত তজুমদ্দিন উপজেলার হাজারো উন্নয়নের মধ্যে অন্যতম একটি জনকল্যাণ মূলক কাজ। এ হাসপাতাল টি ৫০ শয্যায় উন্নিত হওয়ার পর এখানকার মানুষ অন্ধকারে আশার আলো দেখার স্বপ্ন বুনতে থাকেন।

কিন্তু এখানকার মানুষের স্বপ্নের আশার আলোর মাঝে অভিশাপ স্বরূপ মহাকাল হয়ে দাড়ায় স্বাস্থ্য বিভাগ। স্বাস্থ্য বিভাগের দীর্ঘদিনের খেয়ালীপনার কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এখানকার ২লক্ষ মানুষ। ভালো ডাক্তার না থাকায় ভেঙ্গে পড়েছে এখানকার চিকিৎসা সেবা।

জানা যায়, তজুমদ্দিন হাসপাতালে ডাক্তার সংকটের কারণে পার্শ্ববর্তী উপজেলা বোরহানউদ্দিন হাসপাতাল থেকে ডাক্তার মমিনুল ইসলামকে ডেপুটেশনে (ধার করে) এনে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো হতো। কিন্তু তিনিও এখন চলে গেছেন ছুটিতে।

গত শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় রোগীদের ব্যাপক ভীড়। কোথাও কোন ডাক্তার নেই। সব রোগী একসাথে ভীড় করছে জরুরি বিভাগ ১১নং কক্ষের সামনে। স্বাস্থ্য সহকারী (স্যাকমো) ডাক্তার বিটন চন্দ্র কর জরুরি বিভাগের কক্ষে বসে বহিঃবিভাগের রোগীদের সামাল দিচ্ছন। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পালন করছেন প্রশাসনিক দায়িত্ব। আরেকজন ডাক্তারকে তজুমদ্দিনে কর্মরত দেখিয়ে রেখেছেন বোরহানউদ্দিন। অথচ তজুমদ্দিন হাসপাতালে ডাক্তারের অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছে না রোগীরা।

আন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগে প্রতিদিন রোগী আসে তিন শতাধিক। ২৪ ঘণ্টা  খোলা জরুরি বিভাগের বেসামাল অবস্থা। অন্তঃসত্ত্বাসহ মহিলা রোগীদের নিয়ে পড়তে হয় অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে। 

সামান্য সমস্যাতেও যে কোন রোগীকে রেফার করা হয় ভোলাতে। ভোলা রেফার করার কারণে অনেক গরিব অসহায় রোগীদেরকে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তজুমদ্দিন উপজেলার ৫০ শয্যার একমাত্র সরকারি হাসপাতালটিতে ডাক্তারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব একের পর এক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়ায় মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে এখানকার চিকিৎসা সেবা।  বর্তমানে হাসপাতাল ও ইউনিয়ন কোটায় প্রথম শ্রেণির মোট ১৫ জন ডাক্তারের স্থলে কাগজ কলমে কর্মরত দেখাচ্ছেন চারজন। এদের একজন ডাক্তার মিজানুর রহমান স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা  কর্মকর্তার পদে দায়িত্ব পালন করছেন। সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে কর্মরত আছেন ডা. ফখরুল আলম তাকেও বদলি করে নেয়া হয়েছে চরফ্যাশন তিনিও প্রস্তুতি নিচ্ছেন চলে যাওয়ার জন্য। মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আবদুল্লাহ আল আমিন প্রেষণে রয়েছেন লালমোহন। অপর মেডিকেল অফিসার ইউনানী ডাক্তার রাজিব চন্দ্র দাস প্রেষণে রয়েছেন বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে। নতুন ডাক্তার না দিয়ে চলতি মাসে বদলি করে নিয়ে গেছেন ডাক্তার মুজাহিদুল ইসলামকে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মিজানুর রহমান বলেন, দৈনন্দিন আউটডোরে তিন শতাধিক রোগী আসে। ডা. সংকট থাকায় পাশাপাশি স্যাকমো, ডেন্টিস, নার্সরাও রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে বাধ্য হন। জরুরি ভিক্তিতে এখানে ডাক্তারের প্রয়োজন। 

এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল সংক্রান্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, ৯ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সদের মধ্যে রয়েছে ৫ জন। স্যাকমো, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, স্টোর কিপার, পরিসংখ্যান বিদ, সিএইচসিপি, সহকারী নার্সসহ তৃতীয় শ্রেণীর ৮৫ টি পদের বিপরিতে কর্মরত আছে ৪৭ জন। এদের মধ্যেও অনেকে ডেপুটেশনে উপজেলার বাহিরে কর্মরত আছেন। ৪র্থ শ্রেণীর ১৯ জন কর্মচারীর মধ্যে রয়েছে মাত্র ৯ জন। এদিকে এক্সরে টেকনিশিয়ানের অভাবে দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ ধরে তালা ঝুলছে এক্সরে কক্ষটিতে।

এক্সরে কক্ষটি বন্ধ থাকার সুযোগে অনুমোদনহীনভাবে হাসপাতালের সামনে গড়ে উঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভীর জমায় এখানকার গরিব ও অসহায় রোগীরা। নিম্নমানের এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল ও ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে বিপাকে পরতে হয় রোগীদের। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল টাইপের লোকজন সারাদিন হাসপাতালের বারান্দায় ঘুরতে থাকেন ডাক্তারের রুম থেকে রোগীরা বের হওয়ার পরপরই এদের দ্বারা টানা-হেচঁড়ার স্বীকার হতে হয় রোগীদের। অনেকগুলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকার কারণে, রোগীদেরকে টানা-হেচঁড়া নিয়ে বিগত দিনে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকজনের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে।   

ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃক ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে হয়রানির স্বীকার হওয়া রাশেদা বেগম জানান, প্রায় ৩মাস আগে সড়ক দুর্ঘটনায় তার হাতে ও পায়ে প্রচন্ড আঘাত লাগে। তাকে তজুমদ্দিন হাসপাতালে আনার পর ডা. আঘাত পাওয়া স্থান গুলোর এক্সরে টেস্ট দেন। তিনি হাসপাতালের সামনে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্সরে টেস্ট করে রিপোর্ট নেন। ডা. এক্সরে রিপোর্ট দেখে বলেন তেমন কোনো সমস্যা হয়নি ঔষধে ভালো হয়ে যাবে। তিনি দীর্ঘদিন ঔষধ সেবন করার পরও সুস্থ হননি। বরং অবস্থা আরো গুরুতর হয়ে যায়। পরবর্তীতে ভোলা গিয়ে টেস্ট করানোর পর জানতে পারেন তার হাত ও পায়ের হার ভেঙ্গে গিয়েছে এবং তজুমদ্দিন থেকে পাওয়া এক্সরে রিপোর্টটি ভুয়া ছিলো।

এভাবেই স্বাস্থ্য বিভাগের খেয়ালীপনার কারণে এখানকার মানুষ দিনের পর দিন চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং সুযোগসন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকজনের কবলে পরে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জনগণ। 

এই ব্যাপারে ভোলা সিভিল সার্জন ডাঃ রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, ভোলা জেলায় অনেক ডাক্তারের পদ শূন্য। বিষয়টি বিভাগীয় পরিচালককে জানিয়েছি এবং প্রতি মাসেই শূন্য পদের বিপরীতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। শীঘ্রই তজুমদ্দিনে ডাক্তার দেওয়া হবে বলে পরিচালক মহোদয় জানিয়েছেন।

Bootstrap Image Preview