Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

নবজাতকে ৩ খণ্ড, ২ খণ্ড হাসপাতালে বাকি খণ্ড ডাস্টবিনে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:৪৪ PM
আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:৪৪ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফাতেমা বেগম নামের এক প্রসূতির গর্ভের নবজাতককে তিন খণ্ড করে ফেলেছেন সেখানের কর্তব্যরত দুই নার্স নবজাতকের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে রাখা হয় ডাস্টবিনে অবস্থায় প্রসূতির জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে পেটে সন্তানের মাথার অংশ রেখে তড়িঘড়ি করে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়

মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক অপারেশন করে রবিবার ওই প্রসূতির গর্ভ থেকে সন্তানের মাথার অংশ বের করেন বর্তমানে প্রসূতির অবস্থা আশঙ্কাজনক

চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটলেও দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বশীল মেডিকেল অফিসার আহসানুল হক ডা. নীলা পারভীন কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন

তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহমেদ কবির বলেছেন, ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে তদন্ত করে অপরাধ প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে

রোগীর স্বজনরা জানান, উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের রিকশাচালক সেলিম মিয়ার স্ত্রী প্রসূতি ফাতেমা বেগম (৩০) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন ডা. নীলা পারভীনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়মিত রোগী ছিলেন

শনিবার দুপুর দেড়টায় ওই চিকিৎসকের কাছে আসলে তিনি আলট্রাসনোগ্রামসহ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান রোগীর অবস্থা ভালো নয়, ভালো কোনো হাসপাতালে তার জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন পরে রোগীর স্বজনরা দুপুর আড়াইটায় দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইমার্জেন্সির দায়িত্বে থাকা ডা. রোমানা পারভীনের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করান রাতে দায়িত্বরত দুইজন সিনিয়র নার্স আছিয়া আক্তার, ঝরনা বেগম আয়া জেসমিন আক্তার ডলি প্রসবের চেষ্টা করে নবজাতকের হাত নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে বের করে আনলেও মাথা বের করতে পারেননি পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন এবং ওই নার্স আয়া খণ্ডিত দেহ ফেলে দিয়ে বিষয়টি অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালান

রবিবার সকাল ৯টায় পথচারীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রশিক্ষণ ভবনের পাশে ওই নবজাতকের খণ্ডিত একটি হাত নাড়িভুঁড়ি পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেয় প্রথমে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স আয়াসহ কেউ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেননি পরে দায়িত্বরত নার্স আয়াদের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসে তারা জানান, বাচ্চাটি মৃত হওয়ায় প্রসব করাতে গিয়ে ছিঁড়ে যায়

ঘটনা অনুসন্ধানে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহাম্মদ কবীর উপজেলা কমপ্লেক্সের গাইনি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট তামান্না আফতাব সোলাইমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়

প্রসূতি ফাতেমার ভাই ইউছুফ মিয়া বলেন, শনিবার দুপুরে বোনকে ভর্তি করানোর পর রাত পর্যন্ত কয়েক দফায় নার্সদের কাছে জানতে চাই, তারা বোনের প্রসব করাতে পারবেন কিনা কিন্তু নার্সদের আশ্বাসে অপেক্ষা করি রাতে জানতে পারি বাচ্চাটির মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে নার্সরা বোনের অবস্থা খারাপ দেখে রাতেই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি এবং সকালে অপারেশনের মাধ্যমে নবজাতকের মাথাটি বের করা হয়

রাত্রীকালীন ডিউটিরত মেডিকেল অফিসার ডা. আহসানুল হক মিলু বলেন, প্রসূতির নবজাতকের মাথা থেকে দেহ আলাদা করার বিষয়টি গোপন রেখে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাকাজনক বলে জানিয়ে কর্তব্যরত নার্সরা কুমেক হাসপাতালে স্থানান্তরের কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়

ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহাম্মদ কবীর বলেন, নার্সদের আয়ত্তের বাইরে থাকার পরও ডেলিভারির চেষ্টা করা, কারোর সহযোগিতা চাওয়া বা না জানিয়ে ঘটনাটি গোপন করার চেষ্টা, যা কোনোভাবেই পেশাগত দায়িত্বে পড়ে না

Bootstrap Image Preview