Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

জাতিসংঘের ৭৩তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করবে বাংলাদেশ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:০৭ PM
আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:২১ PM

bdmorning Image Preview
সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি। ছবি: পিআইডি


কূটনৈতিক প্রতিবেদক

১৮ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশন নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘ সদর দপ্তরে শুরু হয়েছে। এই অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক পর্ব আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর হতে ১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হবে। এ অধিবেশনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি।

আজ বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি এ কথা জানান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শহিদুল হক।

মন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের অধিবেশনে আমি ছাড়াও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন।

তিনি বলেন, এ বছর সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য হচ্ছেঃ 'Making the United Nations relevant to all people: Global leadership and shared responsibilities for peaceful, equitable and sustainable societies’। যে সকল কারণে এবারের অধিবেশন বিশেষ গুরুত্ব বহন করে সেগুলো হলো প্রথমত: গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ৫ দফা প্রস্তাব পেশ করেন যা বিশ্ব নেতৃবৃন্দ কর্তৃক সমাদৃত হয়। ইতিমধ্যে আমরা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের মিয়ানমারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি এবং চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। গত ৯-১২ আগস্ট আমি রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করে এসেছি।

মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের স্থায়ী প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে মিয়ানমারে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়েও আন্তর্জাতিক মহল সোচ্চার রয়েছে। ইতিমধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন কর্তৃক গঠিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন তাদের প্রতিবেদনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত নির্যাতনকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউশন রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়ণের অভিযোগে মিয়ামারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করছে। ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করার ব্যাপারে মিয়ানমারের উপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রেক্ষিতে এবারের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে রোহিঙ্গা বিষয়ে উচ্চপর্যায়ে বেশ কিছু ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে যেখানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে বাংলাদেশ এ যাবত গৃহীত উদ্যোগ এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জসমূহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরতে পারবে না।

দ্বিতীয়ত: জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রাধিকারভুক্ত বিষয়সমূহের একটি হল বিশ্ব শান্তি ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রম। শান্তি বিনির্মাণ ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগসমূহের ধারাবাহিকতায় এবারের অধিবেশনে শান্তি রক্ষা বিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।

তৃতীয়ত: বরাবরের মত এবারও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কিত- বিশেষত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে বেশ কিছু উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। এ সকল সভায় বাংলাদেশ নিজের অর্জন তুলে ধরার পাশাপাশি অন্যান্য দেশের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময় ও নিজের প্রাধান্য নিশ্চিত করার সুযোগ পাবে।

 চতুর্থত: এবারের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করবেন (১) প্রধানমন্ত্রী ২৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিডেন্টের উদ্যোগে “Global Call of Action on World Drug Problem” শীর্ষক সভা। (২) জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী ২৪ সেপ্টেম্বর “High Level Event on the Global Compact on Refugees: A Model for Greater Solidarity and Cooperation” শীর্ষক সভা। জাতিসংঘের মহাসচিব এ সভায় উপস্থিত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী উক্ত সভায় রোহিঙ্গা সমস্যার সামাধানে আন্তর্জাতিক বিশ্বের করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করতে পারেন। (৩) বিশ্বশান্তির অগ্রদূত নেলসন ম্যান্ডেলার জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২৪ সেপ্টেম্বর Nelson Mandela Peace Summit: UNGA High-level Plenary on Global Peace শীর্ষক সভা। সভায় প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণ করে বক্তব্য প্রদান করবেন।
এছাড়া, উক্ত সভায় বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি “Political Declaration” গৃহীত হবে। (৪) ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী “High Level Event on International Finance Facility for Education” শীর্ষক সভা। জাতিসংঘের UN Special Envoy for Global Education গর্ডন ব্রাউন উক্ত সভায় অংশগ্রহণের জন্যপ্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। (৫) ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর আমন্ত্রণে “Leaders’ Dialogue: Together for Girls’ Education in Conflict-Affected and Fragile Contexts” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে। বৈঠকে নারীশিক্ষার প্রসারে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিতকরণ ও তা দূর করার লক্ষ্যে গৃহীতব্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্দিষ্ট কিছু দেশের রাষ্ট্র/সরকার প্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। (৬) ২৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী “High Level Event on Action for Peacekeeping” শীর্ষক সভায় অংশ নিবেন। ২০১৮ এর মার্চে জাতিসংঘের মহাসচিবের কর্তৃক প্রণীত Action for Peacekeeping উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় এই উচ্চপর্যায়ের সভার আয়োজন করা হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব উক্ত সভায় বক্তব্য প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সভায় শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে কার্যকর করতে একটি Declarationগৃহীত হবে। (৭) বাংলাদেশের উদ্যোগে ২৫ সেপ্টেম্বর “High Level Side Event on Cyber Security and International Cooperation” শীর্ষক সভার আয়োজন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন। (৮) Organization of Islamic Cooperation (OIC) এর উদ্যোগে ২৭ সেপ্টেম্বর “High Level Side Event on the Rohingya Humanitarian Crisis” শীর্ষক সভা। এতে প্রধানমন্ত্রী মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানগণের সাথে অংশগ্রহণ করবেন। এ সভাতে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। (৯) ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী “High Level discussion on Economic Growth through Women’s Empowerment” শীর্ষক সভায় অংশ নিবেন। জাতিসংঘের মহাসচিবও এ সভায় বক্তব্য প্রদান করবেন। (১০) ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন। প্রতিবারের মত এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় বক্তৃতা দেবেন। বক্তৃতায় তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে গত বছর তাঁর প্রস্তাবিত পাঁচ দফার ধারাবাহিকতায় পুনরায় কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরবেন।

এছাড়া তাঁর বক্তব্যে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা, নিরাপদ অভিবাসন, ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারসহ সাম্প্রতিককালের আলোচিত বিষয়গুলোর উপর আলোকপাত করার পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, জলবায়ূ পরিবর্তন মোকাবেলা, গণতন্ত্রের ধারা সমুন্নত রাখাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্য বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে পারেন।

বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উদ্ভাবন সংক্রান্ত দুটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণ করবেন (এক) ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ সংগঠন US Chamber of Commerce এর আয়োজনে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। এই বৈঠকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীগণ বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধার বিষয়সমূহ তুলে ধরবেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীগণ তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব বাংলাদেশের নিকট তুলে ধরবেন। এই গোলটেবিল বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা বিভিন্ন বহুজাতিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। এই অনুষ্ঠান বিবেচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে দুই শতাধিক ব্যবসায়ী প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিবৃন্দের ভ্রমণের সাথে বাংলাদেশ সরকারের কোন আর্থিক সংশ্লেষ নেই।

Bootstrap Image Preview