ফ্যানটা চলছে না। জানালার গ্লাস আটকে আছে। লাইটের তারটাও ছেঁড়া। একাধিক চেয়ার ব্যবহারের অযোগ্য। উপরের প্লাস্টিকের হাতল কয়েকটা থাকলেও বাকি হাতল ছিঁড়ে গেছে! হালকা ব্রেক করতেই ঠিকঠাক দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না আবু সাইদ নামে এক চাকরীজীবী।
এভাবেই আসাদ গেট এলাকা থেকে মহাখালী পর্যন্ত ঝুলে-ঝুলে যাওয়ার পর একটা সিটে বসলেন। কিন্ত এই গরমেও পাশের ফ্যনটা চলছে না। জানালাটাও খুলতে পারলেন না। ইঞ্জিনের অস্বাভাবিক শব্দ, গরম আর ঝাকিতেই দোতলা বাসটির নিচ তলায় বসে গন্তব্যে (গুলশান) পৌঁছলেন তিনি।
এটা প্রতিদিনের চিত্র, হ্যাঁ আপনিও অবাক হবেন একমাত্র রাষ্ট্রীয় পরিবহন বিআরটিসির ভাঙাচোড়া সার্ভিস নিয়ে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি এসব অসচেতন যাত্রীদের অপব্যবহারের কারণে নষ্ট হয়ে আছে। শুধু এই রুটেই নয়, বিআরটিসিই নয়, রাজধানীর সবগুলো রুটের সিটিং ও লোকাল বাস সার্ভিসের সমস্যা-সম্ভাবনা বিডিমর্নিংয়ে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হবে। ১ম পর্বে এটা মোহাম্মদপুর-কুড়িল বিশ্বরোড রুটের বিআরটিসি বাসের সার্বিক চিত্র বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
বাসের কাঠামোগত সমস্যা, পর্যপ্তা বাস না পাওয়, ভাড়া বেশি রাখা, প্রতিটি স্টপেজেই লম্বা সময় অপেক্ষা করা। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত কুড়িল বিশ্বরোড উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া এসব বাসের সাভিস নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের যেনো শেষ নেই।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত বিআরটিসির বর্তমানে ১৮/১৯ টি বাস নিয়মিত চলছে। এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রন্সপোর্ট করপোরেশন (বিআরটিসি) এর মোহাম্মদপুর বাস ডিপো।
নতুনবাজার থেকে গুলশান যাবেন জাহিদ পালোয়ন। তিনি অভিযোগ করে বিডিমর্নিংকে বলেন, বিআরটিসির বাস স্টপেজে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকে এজন্য রাস্তা ফাকা থাকলে সময় বেশি লাগে। এছাড়া ভাড়া বেশি রাখে। নতুনবাজার থেকে গুলশানের ভাড়া ৫ টাকা হলেও ১৫ টাকা দাবি করে ১০ টাকার কমে তারা ভাড়া নিচ্ছেই না।
বাসগুলোর ফ্যান কখনোই চলে না বলে জানিয়ে আহসান হাবিব নামে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র বলেন, এই রুটের বাসগুলো সব ভাঙাচোড়া, কখনোই এসব ফ্যান ঠিক করে না। অধিকাংশ বাসের সিটগুলো ফোম ছিঁড়া এবং ভাঙ্গা থাকায় ভালোভাবে বসা যায় না। এতো বেশি যাত্রী উঠায় যে ঠিকঠাক দাঁড়িয়েও যাওয়া যায় না।
পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা অপর এক যাত্রী বলেন, বাসগুলার খুবই খারাপ অবস্থা এসব সরকারি তো তাই দেখাশুনার কেউ নাই।
বিআরটিসির এই রুটের বাসে নিয়মিত যাতায়াত করেন মাহফুজুর রহমান তিনি বলেন, এসব বাসের সমস্যার শেষ নাই। জানালা দরজা থেকে শুরু করে সবই ভাঙাচোড়া। ফ্যান নষ্ট অথবা নেই, লাইটও একই হাল, ছেঁড়া সিটে বসা যায় না। বৃষ্টি হলে সব ভিজে যায়। এভাবই আমাদের ভোগান্তি নিয়েই চলতে হয়।
আড়ং এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা অন্য এক যাত্রী বলেন, এই রুটে পর্যাপ্ত বাস নেই ফলে দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে থেকেও পরে বাসে উঠা যায় না যাত্রীদের চাপের কারণে।
যাত্রীদের এসব অভিযোগের পাল্টা জবাব দিলেন বিআরটিসি মোহাম্মদপুর বাস ডিপোর ম্যানেজার মো: শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এসব ভাঙাচোড়া অবস্থার জন্য যাত্রীরাই অনেকটা দায়ী। তাদের অসচেতনতার কারণেই এসব ফ্যান নষ্ট ও সিট ভেঙ্গে আছে। আমাদের দ্বিতলা বাসগুলোর প্রতিটি ফ্যানই একদিকে এটাস্ট করা থাকে যাত্রীরা তা উল্টো দিকে টানাটানি করে ফলে এসব ভেঙ্গে যায়। এভাবে অসচেতন ভাবে ব্যবহার করার কারণেই এসব ফ্যান ও সিট ভাঙাচোড়া। এছাড়া পেছন থেকে লোকাল বাস এর ধাক্কার কারণে অনেকটা ক্ষতিগ্রস্থ হয় বাসগুলো।
তিনি বলেন, এই রুটে আগে নিয়মিত ১৪ টি বাস চলাচল করতো। হঠাৎ লেগুনা চলাচল বন্ধ হওয়ায় যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। তবে এখন ১৮/১৯ টি বাস চলাচল করছে। সামনে আমাদের আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
এসব ভাঙাচোড়া অবস্থার সংস্কার নিয়ে কাজ করছে কি না বিআরটিসি যাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানতে চাইলে শহিদুল ইসলাম জানান, আমাদের মোহাম্মদপুর ডিপোতে প্রতিদিনই মেরামত করা হচ্চে এখনো ২টি বাস মেরামতের জন্য আছে। এছাড়া এসব বাসের গ্লাস ফ্যান ও লাইট প্রতিনিয়তই মেরামত ও নতুন লাগানো হচ্ছে।